শিরোনামঃ সম্পাদকীয়
সংবাদপত্রঃ জয়বাংলা ৩য় সংখ্যা
তারিখঃ ১ এপ্রিল ১৯৭১
সম্পাদকীয়
সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার কৃপায় “জয় বাংলা”র ৩য় সংখ্যা বাহির হইল। নওগাঁর মতো ছোট শহর হইতে বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি দৈনিক পত্রিকা (যত ছোট কলেবরেই হোক) বাহির করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মুদ্রণালয়ের কর্মচারীদের অকুন্ঠ এবং আন্তরিক সহযোগীতা না পাইলে “জয় বাংলা” হয়ত বা আপনাদের কাছে পৌঁছিত না।
ইংরেজ কবি শেক্সপীয়ার সিজারের মুখ দিয়া বলাইয়াছেনঃ “Cowardds die many times before their death, the valiant never tastes of death but once.” কাপুরুষেরা মৃত্যুর আগেও বার বার মরে, বীরেরা কখনও একবারের বেশি মৃত্যুবরণ করে না। (আমাদের অন্যবাদ) টিপ্পনী নিষ্প্রয়োজন।
“জয় বাংলা”র প্রথম সংখ্যায় আমরা লিখিয়াছিলাম সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশ কেহ অমান্য করিবেন না। আমরা পুনর্বার সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশবলী মানিয়া চলিবার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাইতেছি।
আমাদের চূড়ান্ত বিজয় সমাসন্ন। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যুদ্ধে যত ক্ষতি হয় বিজয় পূর্বে বিশৃংখলার দরুন অনেক সময় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি সাধিত হয়। একটা উদাহরণ দেওয়া অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। ইতিহাসে আছে ফরাসি বিপবের পরে আত্মকলহ, হিংসা এবং বিশৃংখলা এত চরমে উঠিয়াছিল যে বিপ্লবের অনেক লক্ষ্যই অর্জিত হয় নাই। এমনকি বিপ্লবের পরিষদের অধিকাংশ নেতৃবর্গকেই “গিলোটিনে” প্রাণ হারাইতে হইয়াছিল। পরিণামে ফ্রান্সে পুনর্বার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কাজেই আমাদের অনুরোধ জনসাধারণ, নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন শাখা হুঁশিয়ার থাকিবেন।
সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ ফেরেশতা নহেন-তাহারাও মানুষ। কাজেই ছোটখাট ভুল-ভ্রান্তি ত হইবেই। আমাদিগকে দুঃখের সহিত লিখিতে হইতেছে এই চরম সত্যটি অনেকেই স্বীকার করিতে চাহেন না। লক্ষ্য করা গিয়াছে কিছুসংখ্যক শিক্ষিত লোকও এসব ব্যাপার নিয়া জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করিতেছেন। আমদের অনুরোধ, জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করিয়া সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতঃ আপনাদের গঠনমূলক মতামত পেশ করিয়া সামান্য ভূল-ত্রুটি দূর করার ব্যাপারে সহায়তা করুন। আমরা মনে করি “Voice of reason must prevail”. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী ও অন্যান্য সূত্র হইতে আপনারা যথেষ্ট খবর পাইতেছেন। সে কারণে এবং ছোট কলেবরের দরুন “জয় বাংলা” কোন খবর ছাপান হইতে বিরত রহিয়াছে। সব খবরের সারমর্ম নজরুলের ভাষায় বলা যায়-“মাভৈ মাভৈ আর ভয় নাই-নবযুগ ঐ আসে ঐ”।
বাংলা মুক্তিবাহিনী, পুলিশ, আনসার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহিত সর্বপ্রকার সহযোগীতা করিবেন। নওগাঁর আভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষা এবং লুটতরাজ বন্ধের ব্যাপারে বিভিন্ন মহল্লার স্বেচ্ছাসেবকরা যে রকম সুষ্ঠুভাবে কাজ করিয়া যাইতেছেন সেজন্য নওগাঁবাসীর পক্ষ হইতে “জয় বাংলা” তাহাদিগকে অভিনন্দন জানাইতেছে। সাবাস! নওগাঁ হাসপাতালে বেশ কিছুসংখ্যক জখমী চিকিতসাধীন রহিয়াছে। জনসাধারণ এবং ঔষধ বিক্রেতাদের প্রতি আমাদের আবেদন-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়া চাহিদা মতো কিছু ঔষধপত্র বিনামুল্যে দান করিবেন। মনে রাখিবেন পীড়িতদের সেবা করা মহান কাজ। বেশি দামের সম্ভব বা হয় কম দামের ঔষধপত্রই দান করিবেন।
বঙ্গবন্ধু বলিয়াছেন “বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকের জানমাল রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সে বাঙালী হউক, বিহারী হউক, হিন্দু হউক, মুসলমান হউক”।