You dont have javascript enabled! Please enable it! 1958.10.28 | জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল | পাকিস্তান অবজারভার - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম

সূত্র তারিখ
জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল পাকিস্তান অবজারভার ২৮ শে অক্টোবর ১৯৫৮

 

রাষ্ট্রপতি মির্জার পদত্যাগ
জেনারেল আইয়ুব খানের কাছে সকল ক্ষমতা হস্তান্তর

করাচী, ২৭ অক্টোবরঃ আজ রাতে রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা ঘোষনা দিয়েছেন যে “তিনি পদত্যাগ করে জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের কাছে সব ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন”।

রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা আজ রাতে নিম্ন লিখিত বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-

তিন সপ্তাহ আগে, আমি পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করি এবং জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান কে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেই। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় প্রিয় দেশের কল্যানে আমার গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ জনগনের দ্বারা এবং দেশের বাইরের বন্ধু ও শুভাকাংখীদের খুবই ভালো ভাবে সমাদৃত হয়েছে।

সামরিক আইন জারির পর থেকেই আমি সর্বোত ভাবে চেষ্টা করেছি, কঠিন পদক্ষেপের মাধ্যমে নৈরাজ্যকর অবস্থা যেন আরো বেশি বিশৃংখল না এবং তা থেকে উত্তরনের জন্য জেনারেল আইয়ুব খানকে এবং তার প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে।

দেশের ভবিষ্যৎ প্রশাসনের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো প্রকাশ করার জন্য আমাদের এ প্রয়াস। শেষ তিন সপ্তাহের অভিজ্ঞতার আলোকে, আমি কিছু উপসংহারে পৌছেছিঃ
(ক) জরুরী অবস্থায় বিস্তৃত কার্যাবলীর ফলপ্রসু প্রতিপাদন, সাদৃশ্যপূর্ণ যে কোন দ্বৈত নিয়ন্ত্রন দ্বারা বিঘ্নিত হয়।

(খ) একটি অপ্রত্যাশিত ধারনা ছিল বা বিরাজ করছিল দেশের বাইরে ও দেশের ভিতরের অধিকাংশ মানুষের মনেই যে, জেনারেল আইয়ুব এবং আমি একতাবদ্ধ সর্বদা কাজ করতে পারছি না। এ ধরনের অনুমান আমার জন্য মোটেই সুখকর ছিল না, এই অবস্থায় আমি চালিয়ে গেলে তা আমাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ক্ষতিকর হত। সুতরাং আমি সরে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সমস্ত ক্ষমতা জেনারেল আইয়ুব খানকে অর্পন করছি।

শুভ কামনা জেনারেল আইয়ুব খান এবং তার সহকর্মীদের জন্য

পাকিস্তান পাইনদাবাদ

সরকারী ইশেতহার (গেজেট)
পূর্ববঙ্গ ও আসাম
১৬ই অক্টোবর ১৯০৫
নং ১সি- নিম্নলিখিত প্রতিবেদন সাধারণ তথ্যের জন্য পুনরায় প্রকাশ করা হইল।

ভারত সরকার
স্বরাষ্ট্রবিভাগ
সর্বসাধারণের বিদিত
সিমলা, পহেলা সেপ্টেম্বর ১৯০৫
নং- ২৮৩২, মহামান্য রাজা, ভারতের সম্রাট, নিম্নলিখিত ঘোষণা অনুমোদন করেন, যা ভারতীয় পরিষদ রাষ্ট্র সচিব দ্দ্বারা প্রকাশিত হয়।

ঘোষণা-পত্র

রাষ্ট্রপাল (গভর্নর জেনারেল)আসামের বর্তমান প্রধান কমিশনারের অধীনে রাজ্যের প্রশাসন গঠনে তিনি সন্তুষ্ট । ভারতীয় পরিষদ (কাউন্সিল) আইন, ১৮৬১ (২৪ ও ২৫ এর ., সি ৬৭), অনুযায়ি প্রদেশটি আইন এবং নিয়মকানুন প্রনয়ন করবে যা ফোর্ট সেন্ট জর্জ এবং বোম্বের প্রদেশ(প্রেসিডেন্সি)এর শান্তি এবং সুশৃঙ্খলা বিধান করবে, এবং এও নির্দেশ করবে যে, প্রদেশটি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ নামে পরিচিত হবে; মাননীয় জনাব জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার , আসামের বর্তমান প্রধান কমিশনার কে সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দিয়ে প্রদেশটির প্রথম ছোট লাট (লেফটেন্যান্ট গভর্নর) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হইল।

২। পরিষদ রাষ্ট্রপাল (গভর্নর জেনারেল)এ কথা উল্লেখ করতে পেরে আনন্দিতযে র অক্টোবরের ১৬ তারিখ , সন এক হাজার ন’শো পাঁচ এ বন্দোবস্তটি কার্যকর হবে এবং ছোট লাট (লেফটেন্যান্ট গভর্নর) আইন এবং নিয়মকানুন প্রনয়ন কার্যে সহযোগিতার জন্য পনের জন কাউন্সিলর সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারবেন।

৩। পরিষদ রাষ্ট্রপাল (গভর্নর জেনারেল) আরও উল্লেখ করতে পেরে আনন্দিত, ও ধার্য করেছেন যে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশটি গঠিত হবার পর ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জের, ত্রিপুরা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি রংপুর, বগুড়া, পাবনা, ও মালদা জেলাসমূহ
যা বর্তমানে ফোর্ট উইলিয়মের রাষ্ট্রকার্যের বঙ্গ বিভাগের অংশ হবে এবং , তা উপরোল্লিখিত বিভাগের অধীন অথবা অন্তর্ভুক্ত হবে, অত:পর পূর্ববঙ্গ ও আসাম –ছোট লাটের (লেফটেন্যান্ট গভর্নর)অধীন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন হইবে।

এইচ, এইচ রিসলী
ভারত সরকারের সচিব

(Extract from……)

কাউন্সিলের গভর্নর জেনারেল সানন্দে ঘোষণা দিচ্ছেন যে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সংবিধান অনুযায়ী ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর , বাকেরগঞ্জ ত্রিপুরা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর জলপাইগুড়ি রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও মালদহ জেলা, যেগুলো বঙ্গ বিভাগের ফোর্ট উইলিয়মের অধীনস্ত, সেগুলো বিভাগের সীমানার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না , এবং পরবর্তীতে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্ণর দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।

এইচ এইচ রিস্লি
ভারত সরকারের সচিব.
(পূর্ব বঙ্গ ও আসামের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কার্যবিবরণী সাধারণ ডিপার্টমেন্ট নং ২( গ) হতে গৃহীত, ১৬ই অক্টোবর ১৯০৫ )
READ-
স্বরাষ্ট্র বিভাগ, ভারতীয় সরকার , রেসলুশান নং ২৪৯১, ১৯ জুলাই ১৯০৫।

ফরমান নং ২৮৩২ , ষররাষ্ট্র বিভাগ, ভারতীয় সরকার কর্তৃক জারীকৃত, টি ‘সেপ্টেম্বর, ১৯০৫ ।
রেসলুশান

১ লা সেপ্টেম্বর, ১৯০৫ সালের ভারত সরকারের জারি করা ঘোষণা দ্বারা, পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ আসামের চীফ কমিশনারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, একসঙ্গে নির্দিষ্ট জেলায় যা এযাবৎ বাংলার অংশ গঠিত হয়েছে ফোর্ট উইলিয়মের প্রেসিডেন্সি বিভাগের এবং রেজল্যুশন উপরে উদাহৃত মধ্যে, কাউন্সিলের গভর্নর জেনারেল পরিস্থিতিতে যা নতুন প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । একই ঘোষণায় ১৯০৫ সালের ধারা ৭ অনুযায়ী মাননীয় জনাব জে বি. ফুলারকে পূর্ববঙ্গ ও আসাম, প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত করা হয়েছে এবং পূর্ববঙ্গ ও আসাম আইন মতে প্রয়োজনীয় আইনি ক্ষমতা নতুন প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়েছে।

২ . লেফটেন্যান্ট গভর্নর সেসব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিবেন তারা নতুন সরকারের সদর দপ্তরে স্টাফ গঠন করবে, এবং লেজিসলেটিভ কাউন্সিলেরমাধ্যমে প্রশাসনিক এখতিয়ার ও মনোনয়ন দেয়া হবে।

৫. নতুন প্রদেশেটি ৩০ কোটি মানুষের নৈতিক ও বৈষয়িক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে; এর দায়িত্ব কষ্টদায়ক। একটি চার্জ সংযুক্ত করতে অসুবিধা হয় যা একটি নতুন প্রশাসনের শুরু সংসর্গে হবে যোগ করা হয় । লেফটেন্যান্ট গভর্নর খুব পরিষ্কারভাবে অনুধাবন করতে পারেন যে সাফল্য শুধুমাত্র তখনই আসবে যখন তার সরকার, ইউরোপীয় এবং ভারতের সকল কর্মকর্তারা সমষ্টিগতভাবে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করবে এবং তার সঙ্গে প্রদেশকার কার স্বার্থেকাজ করবে তা চিহ্নিত করা হবে।সেখানে তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে তাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন । তিনি আশা করেন যে তাদের প্রচেষ্টা সকলের দ্বারা প্রশংসিত হবে, এবং নতুন স্থানীয় সরকার সাধারণ সকলের শুভকামনা, সহায়তা এবং সমর্থন অর্জন করেব যা তার নেয়া পদক্ষেপকে আরও গতিশীল করবে ।

পূর্ববঙ্গ ও আসামের লেফটেন্যান্ট গভর্নর, পি সি লিওন এর আদেশক্রমে,
মুখ্যসচিব , পূর্ব বঙ্গ ও আসাম সরকার।
দা গেজেট অফ ইন্ডিয়া
বিশেষ সংখ্যা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়
প্রজ্ঞাপন
দিল্লি,১২ ই ডিসেম্বর,১৯১১

মহারাজা কর্তৃক তাঁর মহান দরবারে অনুগ্রহপূর্বকএই ঘোষণাটি তৈরি করা হয়েছিল, তা নিম্নে পুনঃপ্রকাশিত হল ( ২৫ আগস্ত,১৯১১ সালে এটি ভারত সরকারের নিকট প্রেরিত হয়েছিল,…]
মহারাজা কর্তৃক ঘোষণা
“আমরা আনন্দের সাথে আমাদের জনগণের প্রতি ঘোষণা করছি যে, সভায় গভর্নর জেনারেল এর সাথে মন্ত্রীবর্গের সলা-পরামর্শে অনুযায়ী আমরা ভারত সরকারকে কোলকাতা থেকে প্রাচীন রাজধানী দিল্লীতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, এবং একইসাথে, স্থানান্তরের ফলাফল স্বরূপ যত দ্রুত সম্ভব, আমাদের ভারতসভার সেক্রেটারি অফ স্টেটের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রশাসনিক পরিবর্তন ও সীমানা পুনর্বণ্টন সহ বাংলা প্রদেশের জন্য একজন গভর্নর; বিহার, উড়িষ্যা ও ছোট নাগপুর এলাকার জন্য একজন নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর, এবং আসামের জন্য একজন প্রধান কমিশনার নিয়োগের কার্যাবলি নির্ধারণ করা হবে। আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা থাকবে, এই পরিবর্তন ভারতে একটি উত্তম প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, ও আমাদের প্রিয় জনগণের বৃহত্তর সমৃদ্ধি ও সুখ আনয়নে সাহায্য করবে।

দা গেজেট অফ ইন্ডিয়া,বিশেষ সংখ্যস
১২ ই ডিসেম্বর
ভারত সরকার
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়
বরাবর
মাননীয় ক্রিউই মার্কেস,কে জী
ভারতে বড়লাটের সেক্রেটারি
শিমলা .২৫ অগাস্ট,১৯১১
মহোদয় মার্কেস,
১/ আমরা দ্রুততার সহিত উদ্যোগ নিয়ে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়ে আপনার প্রতি আহ্বান করছি, যা এই বৃহৎ রাজনৈ
তিক মুহুর্তের দুটি প্রশ্নের অন্তর্ভুক্ত, যা আমাদের মতে পরস্পর দৃঢ়ভাবে যুক্ত। এই বিষয়টি বেশ কিছু সময় ধরে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং ঐ সকল প্রস্তাবনাগুলো, যা আমরা আপনার বিবেচনার জন্য পেশ করতে যাচ্ছি, তা আমাদের পূর্ণ সুবিবেচনার ফসল। আমরা প্রথমে এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা প্রদান করব যা এই সংকটকালে এই প্রস্তাবনাগুলো গ্রহণে প্রভাবিত করেছে এবং অতঃপর আমাদের পরিকল্পনার সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ আপনার সম্মুখে উপস্থাপন করব।
২. এ ব্যাপারে মারাত্মক অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদি এমন কোন প্রধান প্রাদেশিক সরকারের শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়, বিশেষতঃ কোলকাতার মত ভৌগলিকভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ কোন শহর যদি ভারতরাজ্যের রাজধানী হয়, তবে তা মারাত্মক অসংগতিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। আমাদের এরূপ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে যে কারণে কোলকাতা আজকের অবস্থানে এসে উপণীত হয়েছে। কোলকাতাতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাখ্যা প্রদানকারী বিবেচনাগুলো পেনিনসুলা ও অন্তর্দেশীয় রেলযোগাযোগ ব্যাবস্থা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ব্রিটিশ আইন একীভূতকরণের সাথে সাথে রহিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে একটা ব্যাপারই প্রতীয়মান হয় যে বর্তমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং একটি পরিবর্তনের আশু প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করা গেছে। অপরদিকে, প্রায় ধারণাতীত গুরুত্মপূর্ণ অংশ যা ইতোমধ্যেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল এ্যাক্ট, ১৯০৯ এর অধীনে সার্বভৌম আইন প্রণয়নকারী সভার জন্য তাদের অনুমিত গড়নে সতর্কতার সাথে আভাষপ্রাপ্ত যে রাজধানীকে আরও কেন্দ্রীয় ও সহজে গমণীয় অবস্থানে স্থানান্তর কার্যতঃ অপরিহার্য। অন্যদিকে, বঙ্গভঙ্গের পর থেকে ভারত সরকারকে তার বর্তমান প্রাদেশিক পরিবেশ থেকে প্রত্যাহার করার তীব্র আকাংক্ষার মাধ্যমে বাঙলা প্রদেশে সন্দেহজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্থানলাভ ঘটেছে, তাই বাংলা থেকে এর অপসারণ আমাদের পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য যাতে বাংলার জনগণের মাঝে পৃথকীকরণ থেকে সৃষ্ট বিদ্বেষ দূরীকরণের উদ্দেশ্য নিহিত। বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অপসারিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে আমরা বিশ্বাস করি যে আপনার কাছে পেশকৃত আমাদের প্রস্তাবনার সাপেক্ষে এটি আপনার বিবেচনায় রয়েছে, আমাদের মতে সেখানে সন্দেহের কোন পথ থাকবে না।

৭. স্থানান্তর যা অপেক্ষিত করা যেতে পারে, আমরা মনে করি, কলকাতা ইউরোপীয় বাণিজ্যিক সম্প্রদায় থেকে আসা, যারা প্রত্যাহারের জন্য পুরাপুরি পর্যাপ্ত, ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলার গভর্ণর সৃষ্টির বিবেচনা না করার একমাত্র গুরুতর বিরোধী ভারত সরকার. বিরোধী বেশ বোধগম্য হতে হবে, কিন্তু আমরা কোন সন্দেহ নেই তাদের দেশপ্রেম উপর গণনা তাদের একটি পরিমাপ যা ব্যাপকভাবে ভারতীয় সাম্রাজ্যের কল্যাণে অবদান হবে মিলনসাধন করতে. বাঙা লিদের অবশ্যই সুবিধাজনকভাবে প্রস্তাবে বিন্যস্ত যদি এটা একা দাঁড়িয়ে না হতে পারে, এটা প্রভাব যা তারা এখন যে কলকাতায় ভারত সরকারের সদরদপ্তর বকেয়া ব্যায়াম কিছু হারানোর ফলস্বরূপ ঘটা হবে. কিন্তু আমরা বর্তমানে আশা দেখানোর জন্য তারা যা বিশেষভাবে বাংলা অনুভূতির সন্তুষ্টি দিতে ডিজাইন করা হয় আমাদের পরিকল্পনার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা পরিবর্তন মিলন হবে. এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি না যে, তারা যাতে প্রকাশ্যে অযৌক্তিক হবে যেমন বিরোধিতা করার, এবং যদি তারা করেনি, অসংশয়ে আশা করতে পারে যে, তাদের বিরোধী বাকি ভারতের কোন প্রতিধ্বনি বাড়াতে হবে।

৮. একেবারে নিজেদের মধ্যে দিল্লি রাজধানী কলকাতা থেকে স্থানান্তর পক্ষে এই সাধারণ বিবেচ্য বিষয় হিসাবে চূড়ান্ত আরও বিশেষ বাংলা ও পূর্ব বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্ভূত কারণগুলো আছে হতে আমাদের জন্য প্রদর্শিত হয় যা, আমাদের মতে, যেমন একটি পরিমাপ অদ্ভুতভাবে ধরনের একটি মুহূর্তে সুবিধাজনক উপস্থাপনা, এবং এই জন্য আমরা এখন আপনার কর্তৃত্ব আন্তরিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে।

৯. বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস যে বঙ্গভঙ্গ দ্বারা হযেছে অনুভূতি তিক্ততা খুব ব্যাপক ও অনমনীয় হয় বাধ্য করেছে এবং আমরা অসুবিধা যা পরিমাপ উপর অনুসরণ একটি শেষে কোন মানে আছে. পূর্ববঙ্গ ও আসাম হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই, পার্টিশন দ্বারা উপকৃত এবং প্রদেশের মুসলমান, যারা জনসংখ্যা একটি বড় অংশ গঠন, অনুগত এবং সন্তুষ্ট হয়, কিন্তু বাংলার উভয় প্রভিন্সেস, যারা অধিকাংশ রাখা বাঙালিদের মাঝে অসন্তোষ জমি, জীবিকা, ভরাট এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্স মধ্যে অত: পর অধিকতর ভারি করে কখনও হিসাবে হিসাবে শক্তিশালী যদিও কিছুটা কম স্থানীয় হয়।

১০. বঙ্গভঙ্গ থেকে বিরোধীদের প্রথমে প্রধানত ভাবপ্রবণ ভিত্তিতে উপর ভিত্তি করে ছিল, কিন্তু, হিসাবে আমরা এবং বিশেষভাবে তাদের প্রতিনিধিত্বশীল উপাদান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের পরিবর্ধন থেকে পার্টিশন এর প্রস্তাবিত পরিবর্তনের আলোচনা দেরী করে দেখাবে, বাঙালিদের অভিযোগ অনেক বেশি বাস্তব এবং বাস্তব হয়ে গেছে, এবং পরিবর্তে কমা এর বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা রয়েছে. শান্তি এবং এসব দেশের সমৃদ্ধির জন্য কোনো প্রকৃত ইচ্ছা থাকা প্রত্যেকের কাছেই তোষণ কিছু পদ্ধতিতে এটি যদি কোন ভাবে তাই কি সম্ভব ইচ্ছুক নয়. অংশ সহজ বাতিলকরণ এবং পরিসংখ্যান হিসাবে প্রকাশ্যে উভয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভিত্তিতে অসম্ভব হয় একটি প্রত্যাগমন. বাংলার পুরাতন প্রদেশের সরকার কোন ফর্ম অধীনে দুর্দমনীয় ছিল, এবং আমরা পূর্ব বাংলার মুসলমান যিনি সেই প্রদেশের জনসংখ্যার বাল্ক গঠন এবং যারা আছে সাথে প্রতারণা করতে পারে না।

একটি সন্তোষজনক এবং চূড়ান্ত মীমাংসা হল-
১) সুবিধাজনক প্রশাসনিক ইউনিট প্রদান;
২) বাঙালিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষা পূরণ;
৩) যথাযথ ভাবে পূর্ব বাংলার মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা এবং সাধারণভাবে মুসলিমদের অনুভূতিকে সন্তষ্ট করা;
৪) পরিষ্কারভাবে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক যৌক্তিকতার বিস্তৃত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে নেতিবাচক কোন অনুমান নির্ভর আন্দোলন দ্বারা এর জন্ম হয়েছে।

১১. যদি ভারত সরকারের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়, এবং যদি দিল্লীকে সার্বভৌম রাজধানী করা হয়, এবং যদি দিল্লীতে বিভাগ স্থাপন এবং পার্শ্ববর্তী আংশিক দেশ সরাসরি ভারত সরকারের প্রশাসনের অধিনস্ত হয়, সেক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পরিকল্পনা সমূহ যেখানে তিনটি আন্ত-নির্ভরশীল প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তা এসব শর্তসমূহকে চরিতার্থ করবেঃ-

১ম) পাঁচটি বাংলা ভাষাভাষী বিভাগ যথা কলকাতা, বর্ধমান, ঢাকা, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম নিয়ে একটি বৃহৎ প্রদেশ গঠন করে কাউন্সিল গভর্নর দ্বারা পরিচালিত করা হবে। এই প্রদেশের আয়তন হবে প্রায় ৭০,০০০ বর্গ মাইল এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৪২,০০০,০০০।

২য়) বিহার, ছোট নাগপুর এবং উড়িষ্যার প্রাদেশিক পরিষদ এবং পাটনায় অবস্থিত রাজধানীকে কেন্দ্র করে কাউন্সিল গভর্নরের একটি প্রতিনিধি গঠন করা হবে। এই প্রদেশের আয়তন হবে প্রায় ১১৩,০০০ বর্গ মাইল এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৩৫,০০০,০০০।

৩য়) আসামের প্রধান কমিশনারকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এই প্রদেশের আয়তন হবে প্রায় ৫৬,০০০ বর্গ মাইল এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৫,০০০,০০০।

১২. আমরা শুরুতেই দিল্লীকে ভারতের ভবিষ্যৎ রাজধানী করার প্রস্তাব পেশ করেছিলাম, কেননা আমরা একেই পুরো পরিকল্পনার প্রধান বক্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেছিলাম, এবং আমাদের প্রকল্পের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করছে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে কি হবে না তার উপর। কিন্তু এখনও আমাদের পরিকল্পনার অন্য অংশের মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা বাকি রয়েছে।

১৩. এসব পরিকল্পনার মূল প্রস্তাব হল বাংলার জন্য একটি নতুন গভর্নর পরিষদ গঠন। দেশ বিভাগের ইতিহাস শুরু হয়েছিল মূলত ১৯০২ সাল থেকে। সেসময় এলাকা পুনবণ্টনে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন ছিল এবং তা ছিল মূলত যেকোনো পরিমাণে গৃহীত মেধা যা দুইটি প্রধান উদ্দেশ্যকে তার রচয়িতার দৃষ্টিভঙ্গীর ভিত্তিতে পূরণ করে। এটি বাংলার অতিরিক্ত বোঝা বহনকারী প্রশাসনকে অব্যহতি দিচ্ছে এবং এটি পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণকে উপকার এবং সুযোগ করে দিচ্ছে যা দ্বারা তারা এযাবৎ পর্যন্ত তাদের যে প্রাপ্য অংশটুকু পায়নি তা পাবে। অন্যদিকে, আমরা যা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি, তা হল এটি বাঙালিদের গভীরভাবে ক্ষুদ্ধ করেছিল। নিঃসন্দেহে বাঙালিদের প্রস্তাবে প্রতিপক্ষের জন্য মনোভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, এবং, এক্ষেত্রে বলা যায়, আমরা কোনভাবেই এর গুরুত্বকে ছোট করে দেখছি না এমনকি যদি তা অতিরঞ্জিতও করা হয় তবুও তা অনুভূতির সাথেই সম্পর্কযুক্ত। এটি অবশ্য নিছক আর আবেগের ব্যাপার নয়, বরং বিধান পরিষদের পরিবর্ধন এখন এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা। প্রকল্পের সংস্কার পূর্ববর্তী দিনগুলোতে এই পরিষদের অদাপ্তরিক উপাদান সমূহ ছিল ছোট।
জনগণের প্রতিনিধিত্ব এখন একটি দীর্ঘ পদক্ষেপ, এবং বাংলা ও পূর্ব বাংলা উভয় প্রদেশের বিধান পরিষদে বাঙালিরা বিহারি এবং অরিয়াসদের মাঝে এবং অন্যদিকে পূর্ব বাংলার মুসলমান এবং আসামের অধিবাসীদের সামনে নিজেদের সংখ্যালঘু হিসেবে খুঁজে পায়। এই মুহূর্তে বিষয়টি এমন যে বাঙালিরা তাদের প্রদেশে সে প্রভাব প্রয়োগ করতে পারে না যা তাদের সংখ্যা, সম্পত্তি এবং সংস্কৃতির উপযুক্ত বিবেচিত হত। এটি একটি বাস্তব অভিযোগ যা সময়ের সাথে সাথে আরও গভীর হবে, যদি বিধান পরিষদের প্রতিনিধি এবং প্রভাব বাড়ানো হয় তবে এই পরিষদ বিষয়গুলো চর্চা করতে পারবে। এখানে ভয়ের একমাত্র কারন হল এতে মৃত্যু ছাড়াও মনের তিক্ততা আরও গভীরভাবে তীব্র হবে।

১৪. এটি প্রায় সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে যে দেশবিভাগই ভারতের সকল সমস্যার মূল কারণ। বঙ্গভঙ্গের দাবি সংঘটিত হওয়ার পূর্বে দেশের বিভিন্ন অংশে এবং লক্ষ্যনীয়ভাবে ঢাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় এবং তারপরও দেশবিভাগের দাবি কখনোই আমাদের নিকট হতে আরোপ করা হয়নি। যদিও এটা নিশ্চিত যে, অংশগুলোতে যেকোনো হারে ক্রমবর্ধমান বিরোধই দেশবিভাগের জন্য দায়ী যা এই মুহূর্তে দুর্ভাগ্যবশত দেশের বিভিন্ন অংশে মুসলিম এবং হিন্দুদের মাঝে এক গুরুতর আকার ধারণ করেছে। তবে আমরা এখনও আশাবাদী যে, দেশবিভাগের কোন বিকল্প যেমনটা আমরা প্রস্তাব করেছি তা এই করুণ পরিতাপের বিষয়টিকে লাঘবের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

১৫. মোদ্দাকথা, দেশবিভাগের যে সুফল আশা করা হয়েছিল তা প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয় কেননা সিদ্ধান্তের পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়নই সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি। যদিও পূর্ববঙ্গ ও আসামে অনেক ভালো কাজ হয়েছে এবং সেখানে বসবাসকারী মুসলিমরা সহানুভূতিশীল প্রশাসনের নেক নজরে থাকায় তার সুফল ভোগ করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু দেশবিভাগের এই সুবিধাগুলোর অসম বন্টন বাঙালিদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করে যা পরবর্তী সময়ে উদ্ভূত শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই আমরা ইতিমধ্যে জানিয়েছি যে আমরা মনে করি বাঙালিদের সুবিচার দরকার কেননা আমাদের মতে তাতে কোন বিলম্ব ছাড়াই এটি তাদের মধ্যে শক্ত বন্ধন গঠন করবে। ডিসেমবরের সমাবেশ পরবর্তীতে শোধরানোর অনন্যসুল্ভ সুযোগের সৃষ্টি করলেও তা বাঙ্গালীদের সবচেয়ে যন্ত্রনাদায়ক ভুল হিসেবে বিবেচ্য হয়।

১৬. যেহেতু আমাদের বাঙালিদের অনুভূতির কথাও চিন্তা করতে হবে, আমরা কখনোই পূর্ব বাংলার মুসলিমদের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারবো না। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পূর্ব বাংলার মুসলিমরা জনশক্তির একটি বড় অংশ বহন করে এবং যদি বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলোকে একত্রিত করা হয় তবে মুসলমানেরা হিন্দুদের সংখ্যায় সমান বা তাদের চেয়েও কিছু বেশী হতে পারে। বাংলায় ভবিষ্যৎ প্রদেশগুলো হবে পর্যাপ্ত এলাকা জুড়ে থাকা নিশ্ছিদ্র অঞ্ছল।মন্ত্রিসভার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ পর্যাপ্ত সময় এবং সুযোগ পাবেন তাদের অধিনস্ত অঞ্চলের জনগণের চাহিদা ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে ভাবার। ঐ অঞ্চলের শাসকগণ ঢাকার সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের সকল সুযোগ সুবিধাই ভোগ করবে, যা আগের শাসকেরা করত না, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা যেভাবে সময়ে সময়ে লখনো গিয়ে থাকতে পারেন, ঠিক একই সুযোগ সুবিধা প্রাদেশিক শাসকগণ পাবেন এবং উক্ত উপায়ে মুসলমানদের অনুভূতি এবং স্বার্থের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে সমর্থ হবেন।
এই উপায়ে তিনি মুসলমানদের অনুভূতি এবং স্বার্থের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে সক্ষম হবেন। এটিও মনে রাখতে হবে যে আইনসভায় তাদের বিশেষ প্রতিনিধিত্বের দ্বারাও মুসলমানদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। একই সময়ে স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে তারা বর্তমানের মতো একই অবস্থায় থাকবে।ঢাকায় নতুন প্রদেশে মুখ্য কমিশনার কিংবা আংশিক-স্বাধীন কমিশনার পদ তৈরীর সম্ভবনার প্রস্তাব আমরা কি কারনবশত নাকচ করেছি- সেগুলো উল্লেখ করে তাই আমাদের আপনাকে বিরক্ত করবার প্রয়োজন হবে না।

২৪. এই বিষয়ে উপসংহার টানার আগে, আপনার বিবেচনার জন্য আমাদের প্রেরিত প্রস্তাব এর উপর অতি দ্রুত সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে কিছু কথা বলার ধৃষ্টতা করতে চাই।
এটি সুস্পষ্ট যে যদি রাজধানীর স্থানান্তর কার্যকরের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হয়, যত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তা অসমাধিত থাকবে ততই এটি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। শেষ দুই অধিবেশনের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে বর্ধিতবিধান সভার প্রয়োজন পূরণ করতে কলকাতা রাজভবনের বর্তমানের কাউন্সিল চেম্বার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এবং একটা স্থান অধিগ্রহনের প্রস্তাব এবং কাউন্সিল চেম্বার নির্মানের প্রস্তাবএর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। নতুন কাউন্সিল চেম্বার তৈরি হয়ে যাওয়ার পর,ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতার অবস্থান আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় হবে এবং, যদিও আমরা নিশ্চিত যে যেকোন ভাবেই শেষপর্যন্ত স্থানান্তরকরণ হবেই, এটা পরবর্তীতে আরো বেশী সমস্যাজনকও অধিক ব্যয়সাপেক্ষ হবে । একইভাবে, আমাদের বিশ্বাস, যদি বিভাগের কিছু আকার-পরিবর্তন কাম্য হয় তবে যতো দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে ততো ভালো । তবে আমরা বুঝতে পারছি না সরকারের মর্যাদার জন্য ও বাদবাকি ভারতের জনমতের নিরীখে কিভাবে তা নিরাপদে করা বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং বিশেষত মুসলমানদের অনুভূতির জন্য, যদিও তাদের চিন্তাভাবনার বড় একটা অংশ আমরা পরিকল্পনা করছি তা ব্যতিত।এক্ষেত্রে আমরা যেমন বিশ্বাস করি,এই সুদূরপ্রসারী প্রস্তাব মাননীয় সরকার মহোদয়ের দ্বারা অনুমোদিত হওয়ারবিষয়েআমাদের এই মত যে, দিল্লীতে মাননীয় রাজার উপস্থিতি ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পরে নেওয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়ার জন্য একটা দারুন সুযোগ হতে পারে। আমাদের পরিকল্পনায় থাকা অন্য দুটি প্রস্তাব তেমন জরূরী নয় কিন্তু পরবর্তীকালের জন্য প্রয়োজনীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অসমাপ্ত কাজের বাস্তবায়ন কোনো উপকারে আসবে না এবং যা করা হবে তা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ও সংশ্লিষ্ট্য সকলের দাবীপূরণের জন্য করা উচিত । এই পরিকল্পনা যা আমরা আপনার সদয় বিবেচনার জন্য পেশ করার ধৃষ্টতা করছি, তা কোনো সুযোগসন্ধানী অভিপ্রায় নিয়ে করা হয়নি বরং এমন বিশ্বাসে করা হয়েছে যেপ্রস্তাবনা অনুসারে কাজ বাস্তবায়ন করলে তা রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাহসী উদ্যোগ হবে যা অতুলনীয় পরিতৃপ্তি ছড়িয়ে দেবে এবং সার্বভৌম শাসনকর্তার তারভারতীয় সাম্রাজ্য পরিদর্শনে ভারতীয় ইতিহাসে নবদিগন্তের সূচনায় চিরদিন একটি স্মরণীয় ঘটনা হিশেবে বিবেচিত হবে ।

২৫. উপরের পরিকল্পনাযদিকর্তৃপক্ষ(Your Lordship) এবং মহামান্য সরকারের অনুমোদন পায়, আমরা প্রস্তাব রাখতে পারি যে তার দরবারেমহামান্য রাজা কলকাতা হতে দিল্লীতে রাজধানীর স্থানান্তরের ঘোষণা দেবেন এবং একইসাথে, স্থানান্তরের ফলাফল হিসেবে, দ্রুততম সময়ের মাঝেবাংলার কাউন্সিলের জন্য একটি গভর্নর পদ এবং বিহারের কাউনসিলের জন্য নতুন একটি লেফটেন্যান্ট-গভর্নরের পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেবেন ।ছোট নাগপুর এবং উড়িষ্যায়১৯০৫ সালের বিভাজনের ফলে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে এমন কোনো আইনগত-সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর কাউনসিল-প্রধান গভর্নর কর্তৃকপ্রশাসনিক পরিবর্তন এবং সীমারেখার পূনঃনির্ধারন। পরিকল্পনাটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হওয়ার পর এমন ঘোষণার বিধিবিধান প্রনয়ন করা যেতে পারে। এই অনুমোদনের জন্য আমরাকর্তৃপক্ষের(Your Lordship) কাছে অনুরোধ করছি।
২৬. দরবারের পর আমরা স্থানীয় ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলায় পরিবর্তন আনার একটি চুড়ান্ত ও সবার কাছে সন্তোষজনক বন্দবস্তের সর্বোত্তম পদ্ধতির বিস্তারিত সমপর্কে বিস্তৃত ও ব্যাপক আলোচনা করতে পারব।

আমাদের জন্য সন্মানের,
আমার অধিপতি মার্কুইস
আপনার অধীনস্ত একান্ত বাধ্যগত, অনুগত ভৃত্য
(স্বাক্ষর) পেনশার্স্ট এর হার্ডিঞ্জ
।। ও মূর ক্রিয়াঘ
।। জে.এল.জেঙ্কিন্স
।। আর. ডাব্লিউ . কার্লাইল
।। এস. এইচ. বাটলার
।। সৈয়দ আলী ইমাম
।। ডাব্লিউ . এইচ.ক্লার্ক

শিরোনাম তারিখ রাষ্ট্রভাষা বাংলার সপক্ষে একটি নিবন্ধ ‘ইত্তেহাদ’ ২০ জুলাই, ১৯৪৭ রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক প্রস্তাব মাহবুব জামাল জাহেদী পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হইবে, ইহা লইয়া প্রচুর আলোচনা চলিতেছে। এই সমস্যাকে কেন্দ্র করিয়া যে সকল বিভিন্নমুখী চিমত্মাধারার প্রকাশ হইতেছে, তাহা মুসলিম বাংলার জনগণের প্রাণ প্রাচুর্যেরই পরিচয় বহন করে। আলোচনার আলোকেই প্রকৃত পথের সন্ধান পাওয়া যায়, সুতরাং এই তর্ক-বিতর্কে আশংকিত হইবার কোন কারণ নাই। প্রধানতঃ বাংলা ও উর্দুকে লইয়াই এখন বিতর্কের উদ্ভব হইয়াছে। এবং প্রকৃতপক্ষে অন্য কোন ভাষা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গণ্য হইতে পারে না। প্রত্যেক ভাষার সমর্থনেই অনেকে অনেকে জোরালো যুক্তি-তর্ক উপস্থাপিত করিয়াছেন। এবং এই প্রসংগে যে বিতর্কের সৃষ্টি করা হইয়াছে তাহাকে উচ্ছাসও প্রচুর পরিমাণে আছে। কিন্তু প্রশ্নটি আদৌ উচ্ছাস-সাপেক্ষে নহে। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে প্রত্যেকটি ভাষার দাবী বিচার করিতে হইবে। এ জন্যই প্রথমেই রাষ্ট্ৰীয় ভাষার উপযোগী গুণাবলীর নির্ণয় প্রয়োজন। নিমণলিখিত বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একটি ভাষা (১)ভাষাভাষীর সংখ্যা মুষ্টিমেয় হইলে চলিবে না। (২)দুই ভাষাভাষীর রাজনৈতিক প্রতিপত্তি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন হইবে। (৩)এই ভাষার মাধ্যমে ইসলামের ভাবধারাকে ভাষাভাষীর মধ্যে পরিসস্ফুট করিয়া তুলিতে হইবে। (৪)এই ভাষার ব্যাকরণ, বর্ণমালা ও লিপি জটিলতা বর্জিত হইবে। পাকিস্তানের জনসংখ্যায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোক বাংলা ভাষায় কথাবাৰ্ত্তা বলিয়া থাকে, সুতরাং উপরোক্ত আদর্শে বাংলার দাবীই অগ্রগণ্য। গনতান্ত্রিক যুগে যদি গণভোট এই ভাষা সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব উঠিত, তবে নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষায় হইত সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু এই প্রস্তাবে পশ্চিম পাকিস্তানের উপর অবিচার করা হয়। রাষ্ট্রের একটি বিশিষ্ট অংশের সুবিধার্থে অন্য অংশে অসুবিধা সৃষ্টি করা কোন রাষ্ট্রেরই কাম্য নহে এবং হওয়া উচিত নহে। প্রাদেশিক প্রভৃতির রাষ্ট্রভাষারূপে পরিগনিত হইবার দাবিকে নিতান্তই জিদ বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। এবং উর্দু ভাষা-ভাষীর সংখ্যাও বাংলার তুলনায় নিতান্তই স্বল্প। ইহা ব্যতিত উর্দু ভাষা বাংলার অধিকাংশ জনগণের নিকটই যে কোন বিদেশী ভাষার ন্যয়ই দুবেৰ্বাধ্য ঠেকিতে বাধ্য। সুতরাং এইদিক হইতে বিচার করিলে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হইবার কোন দাবিই যুক্তিযুক্ত হয় না। রাজনীতি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাভাষীর প্রতিপত্তি প্রচীনকাল হইতেই প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে। এই সববজন-বিদিত প্রতিপত্তি দর্শনেই মহামতি Cossos of Tso What Bengal things today, India things tomorrow. হৃত-গৌরব ফিরিয়া পাইবার জন্য বাংলার মুসলমান চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে। ইহার প্রভূত প্রমান পাওয়া যাইতেছে। এইদিক হইতে বিচার করিলে কিছুকাল পূবেৰ্ব উর্দু ভাষার কোস দাবীই খাটিতে না। কিন্তু বাঙালী মুসলমানদের অবস্থা-বিপর্যয়ের সুযোগ গ্রহণ করিয়া ঐ ভাষাভাষীরা তাহদের দাবীকে শক্ত করিয়া তুলিতেছে। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করিলে ইংরেজী ভাষার দাবী অবশ্যই অগ্রগন্য, কারণ এতদিন রাজনীতি ক্ষেত্রে ইংরেজীরই প্রাধান্য ছিল। তবে বৈদেশিক কোন ভাষাই পাকিস্তানের কোনও রাষ্ট্রেরই রাষ্ট্ৰীয় ভাষা হইতে পারে না-এই জন্য ইংরাজীর দাবী মানিয়া লওয়া যায় না। সুতরাং উর্দু এবং বাংলার দাবীই মাত্র এখন আমাদের বিচাৰ্য্য। কিন্তু উর্দুও যে প্রকৃতপক্ষে এই দেশীয় ভাষা এই কথাও বলা চলেনা। উর্দু হইল তুকী শব্দমানে শিবির। সৈন্যদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার সুবিধার্থে সম্রাট আকবর এই ভাষার উদ্ভাবন করেনশিবিরজাত বলিয়াই এই ভাষার এই নাম। সুতরাং দেখা যাইতেছে, উর্দু ভাষা প্রকৃতপক্ষে দেশের ভাষা নয়।
বিভিন্ন দেশীয় শব্দভান্ডার হইতে চয়ন করিয়া এই ভাষায় শব্দসম্ভার সমৃদ্ধিশালী করা হইয়াছে। স্বকীয়ত্ব বলিতে এই ভাষার কিছুই নাই। এই ভাষার দাবী অগ্রগণ্য হইতে পারেনা। আবার কেহ কেহ এই ভাষাকে মুসলমানী ভাষা হিসাবে দাঁড় করাইয়া ইহাকে রাষ্ট্রভাষারূপে চালাইতে চেষ্টা করিতেছেন। এই প্রচেষ্টা যে নিতান্তই ভাবপ্রবণতা, এ কথা কাহাকেও বুঝাইয়া বলিতে হইবে না। কারণ, প্রথমতঃ মুসলমানী ভাষা বলিয়া কোন স্বতন্ত্র ভাষার অস্তিত্ব নাই। তাহা হইলে মুসলমানগণ যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষাকেই মুসলমানী ভাষা বলা যাইতে পারে। ইহা হইতে পারে যে, ইসলামের শিক্ষা, সংস্কৃতি যে-ভাষার মাধ্যমে প্রকটিত হইয়া উঠিয়াছে তাহাকেই মুসলমানী ভাষা বলা চলে। কিন্তু এই ব্যাখ্যা মতে আরবী ভাষাকেই একমাত্র মুসলমানী ভাষা বলা যাইতে পারে। সুতরাং মসলমানী ভাষা পূবর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে এই যুক্তি বলে আরবী ভাষাকেই আমাদের রাষ্ট্রভাষা করিতে হয়। কিন্তু তাহার ফল কি হইবে, উহা সহজেই অনুমান করা যায়। তাহা হইলে দেখিতে পাই যে, ইসলামের ঐতিহ্যিক বহনের দাবীতে রাষ্ট্রভাষা হইবার যোগ্যতা বাংলারও নাই, উর্দুরও নাই। তবে পূর্ব প্রদর্শিত কারণে উর্দু হইতে বাংলার দাবীই বেশী যুক্তিসংগত। দেখা যাইতেছে যে, ইসলামের ভাবধারাকে বাংলার সাহায্য নিতেই হইবে। কিন্তু এই কথা অনস্বীকার্য্য যে, বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে ইসলামিক ভাবধারা ও কৃষ্টির প্রচার করিতে হইলে বাংলা ভাষাই কার্যকরী হইবে বেশী। কারণ মাতৃভাষার সাহায্যে কোন কিছু শিক্ষা না দিয়া একটা নুতন ভাষা শিখাইয়া ঐ ভাষার সাহায্যে এই শিক্ষা দিতে যাওয়া বোকামী হইবে মাত্র। নূতন কোন ভাষা শিক্ষা করিতেই এখন আমাদের অন্ততপক্ষে ৮/১০ বৎসর সময় অতিক্রান্ত হইয়া যাইবে এবং ইতিমধ্যে এতদ্দেশীয় মুসলমানগণ স্বীয় ঐতিহ্যিক চেতনোপলব্ধির ক্ষেত্র হইতে বহু পিছনে পড়িয়া থাকিবে। তাছাড়া বাংলাভাষায় বহু পূর্ব হইতে আরবী ও ফারসী ভাবধারার চর্চা হইতেছে। প্রাচীন যুগে রচিত পুঁথিগুলি ছিল এই বিষয়ের পুরোধা; বর্তমানেও বহু জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ নানা পুস্তক-পুস্তিকা রচনা করিয়া এই প্রচারকার্য চালইতেছেন। অবশ্য এই কথা স্বীকার না করিয়া উপায় নাই যে, এই প্রচারকার্য্য বাংলা ভাষায় যথেষ্ট কম হইয়াছে। কিন্তু এতদিন এইলপ না হইয়া উপায় ছিল না। একে তো আমাদের রাজভাষা ছিল বিজাতীয় ও বিধর্মীয়, তার উপর বাংলা ভাষার উপর কর্তৃত্ব করিত হিন্দুগণ; সুতরাং নিজ ইচ্ছামত প্রচারকার্য চালাইতে পারা যাইত না। এখন যদি আবার বাঙ্গালীর উপর উর্দু ভাষাভাষীদের কর্তৃত্বভার আনিয়া চালাইয়া দেওয়া হয়, তবে উহাকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা বই আর কিছুই বলা চলিবে না। ইহা ব্যতীত ব্যাকরণের দিক দিয়াও উর্দু অপেক্ষা বাংলার দাবী যুক্তি সাপেক্ষে। প্রকৃত উর্দু অর্থাৎ সাহিত্যিক উর্দু অত্যন্ত জটিল। ক্রিয়াপদের লিঙ্গভেদ হইতে আরম্ভ করিয়া ব্যাকরণের অন্যান্য জটিলতা এত অধিক যে, স্বল্পায়াসে এই ভাষা শিক্ষা করা যায় না। পক্ষান্তরে বাংলা ভাষার জটিলতা উর্দু হইতে বহু অংশে কম। একথা অবশ্যই ঠিক যে, বাংলা শিক্ষার্থীর পক্ষে র, ড়, ষ, স, শ, ন, ণ প্রভৃতির পার্থক্য সঠিক অনুধাবন করা কষ্টকর। কিন্তু ইদানীং ভাষাবিদগণ প্রাচীন বর্ণমালা, ব্যাকরণ ও বানান প্রথার আমুল পরিবর্তনের প্রবৃত্ত হইয়াছেন,যাহার ফলে আশা করা যায়, সুসংস্কৃত হইয়া বাংলা ভাষা, বর্ণমালা, ব্যকরণ ও বানানের দিক হইতে ইংরাজীর ন্যায়ই সহজ এবং সকলের বোধগম্য হইবে। ইতিমধ্যেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা বানান পদ্ধতির সংস্কার সাধন করা হইয়াছে, ফলে ফলে বানান এখন যথেষ্টসহজ হইয়া গিয়াছে। অবশ্য এই প্রথা এখনও ব্যাপকভাবে সাহিত্য ও পাঠ্য-পুস্তকে প্রচারিত হয় নাই। কিন্তু আবশ্যকবোধে প্রচলিত করিয়া লইতে বেশী দেরী হইবারও কোন কারণ নাই। অপরদিকে উর্দুর ব্যাকরণের জটিলতার কথা ছাঢ়িয়া দিলেও বর্ণমালাগত দুবেৰ্বাধ্যতাও উপেক্ষণীয় নয়। রে, ড়ে, দাল, যাশ প্রভৃতি শব্দের বাক ছলতার দরুন প্রথম শিক্ষার্থীর পক্ষে উর্দু শিক্ষা দুরূহ হইয়া পড়ে। এবং এই সব দুবর্বহ দুরূহতাকে সরল করিবার কোন প্রয়াসই অদ্যাবধি ঐ ভাষার পন্ডিতগণ করেন নাই। উর্দু অর্থাৎ চলতি বাজারী উর্দুর ব্যাকরণগত জটিলতা অপেক্ষকৃত কম হইলেও উহাকে রাষ্ট্রভাষারূপে স্থান দেওয়া যাইতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে উহা কোন ভাষাই নয়বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষার শব্দাবলীর সমাহারে গঠিত এক আজব চিজ বলা যাইতে পারে। যে ভাষার কোস স্বকীয়ত্ব নাই, কোন সাহিত্য নাই, যে ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা জাতির বা দেশের পক্ষে কলংকজনক বই কি। এমতাবস্থায় বাংলা ভাষর দাবীর যৌক্তিকতা সম্বন্ধে সন্দিহান হইবার কোও কারণ নাই। এখন প্রশ্ন উঠিতে পারে যে, পূর্ব পাকিস্থানের রাষ্ট্রভা বাংলা হইলে পশ্চিম পাকিস্তান ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত এই রাষ্ট্রের যোগসূত্র কি প্রকারে স্থাপিত হইবে। এই প্রশ্নের উত্তর প্রধানতঃ নির্ভর করে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর। কোন কোন বিষয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রসমূহের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব থাকিবে সেই বিষয়টি পরিষ্কার হইলেই এই প্রশ্নের সমাধান পাওয়া যাইবে। বৰ্ত্তমান ব্যবস্থা মতে অর্থাৎ দেশরক্ষা, অর্থ বিভাগ
এবং পররাষ্ট্র বিভাগের উপর যদি কেন্দ্রের কর্তৃত্ব থাকে, তবে অসুবিধা বিশেষ কিছু হইবে না। কেন্দ্রের সহিত দোভাষী অনবাদকের সাহায়্যে কাজ অনায়াসেই সমাধা করা যায়। বৰ্ত্তমানে প্রাদেশিক সরকারের অনুবাদ বিভাগের মত একটি বিভাগ খুলিলেই সব গোলমাল চকিয়া যাইবে এবয় অন্যান্য প্রদেশের সহিতও এই উপায়েই যোগসূত্র অক্ষুণ্ণ রাখা যাইবে। শুধু যে বায়লা দেশের জন্যই কেন্দ্রীয় অফিসে অনুবাদকের দফতর খলিতে হইবে, এমন নয়। কেন্দ্রের রাষ্ট্রভাষা যে উন্নত উর্দু কিংবা বাংলা হইবে একথা অবধারিত। সুতরাং বিদেশী রাষ্ট্রের সহিত যে সংবাদ আদান-প্রদান করিতে হইবে, তাহার জন্যও অনুরূপ দফতরের প্রয়োজন হইবে। এবং হিন্দুস্তান রাষ্ট্রের মধেও অনুরূপ ব্যবস্থা করিতে হইবে কারণ হিন্দুস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে হিন্দি বা হিন্দুস্তানী। আপাতঃদৃষ্টিতে আরও একটি বিষয়েও আমাদের অসুবিধা হইবে বলিয়া মনে হয়। সেটি হইল সৈন্য বিভাগে ভাবের আদা-প্রদান। পূর্ব পাকিস্তানের সেবাহিনী ও পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীরা স্ব স্ব প্রদেশের স্বীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষায়ই কথাবার্তা বলিতে পরিবে। কিন্তু যখন এই দুই প্রদেশের সেনাবাহিনী প্রয়োজনানুসারে একত্রিত হইবে, তখনই অসুবিধা হইবে বেশী। পারস্পারিকভাবে আদান-প্রদান ছাড়াও আদেশ ওেয়া (কমান্ড) লইয়াও অসুবিধা ভোগ করিতে হইবে মনে হয়। কারণ, বর্তমানে বিভিন্ন দেশীয় সেনানী লইয়া সেনাবাহিনী গঠিত হইলেও আদেশকাৰ্য্য চালানো হয় ইংরাজীতে। কিন্তু তখন ইংরাজী বর্জন করা হইবে। এই সমস্যা গরম্নতর হইলেও অতি সহজেই ইহার সমাধান করা যায়। যদি আমরা আদেশবিধিগুলির (Commandments) আরবী ভাষা প্রচলন করি, তবেই অসুবিধার নিরসন হয়। আরবীতে আদেশ দিলে উহা ইংরাজী হইতেও শক্তিশালী হইবে। কারণ আরবী ভাষায় যে ঝংকার, যে দ্যোতনা আছে, সে দ্যোতনা ও ঝংকার ইংরাজী ভাষার নাই। দুই রাষ্ট্রের অবিাসীগণ পরস্পরের সহযোগিতা করিলেই এই সমস্যা এবং অনুরূপ সকল মসস্যারই সমাধান সহজসাধ্য হইয়া যাইবে। নিজস্ব জিদ বজায়া রাখিবার জন্য গোঁড়ামীর আশ্রয় গ্রহণ করা কাপুরুষোচিত ব্যবহার বলিয়াই অবিহিত হইবে। পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য না থাকিলে কোন রাষ্ট্রেরই উন্নতি বিদান সম্ভবপর হইবে না, একথা সুনিশ্চিত। প্রথম প্রথম অসুবিধা হইবেই, কিন্তু ধীরে ধীরে যখন জনসাধারণ এবং কর্মীগণ নূতন পরিবেশের সহিত নিজকে খাপ খাওয়াইয়া লইতে পরিবেন, তখন কোন অসুবিধাই ভোগ করিতে হইবে না। পশ্চিম বংগের হিন্দুগণ পূর্ব বংগ হইতে দ্বিধা-বিভক্ত হইয়া গিয়া যেমন স্বয় সত্তা বিসর্জন দিল, পূর্ব বংগের মুসলমানগণও অনুরূপ অবস্থার সম্মুখীন হইবে, যদি উর্দুকেই সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হয়। হিন্দুস্তানের রাষ্ট্রভাষা যে হিন্দুস্তানী হইবে, ইহা নিশ্চিত এবং তাহা হইলে বাংলা সাহিত্যে পশ্চিমবংগের যা দান তাহাও নিঃশেষে লোপ পাইবে। তাহদের সংস্কৃতি, তাহদের আভিজাত্য সকলই খবর্ব হইয়া যাইবে। পূর্ব পাকিস্তানেরও অবস্থা ইহাই হইবে, যদি রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হয়। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, বাংলার মুসলমানগণ কখনই ইহা ঘটিতে দিবে না…। উর্দুও আমরা শিখিব আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানের ভাইদের শিক্ষা-সংস্কৃতি জানিতে হইবে বলিয়া। কিন্তু তাহাদিগকেও বাংলা শিক্ষা করিতে হইবে, নতুবা তাঁহারা এক দেশদর্শিতার পরিচয় প্রদান করিবেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠান বেশ কিছুকাল আগে থেকে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আলোচনা চলছিল। এই প্রবন্ধটি বাংলায় সপক্ষে একটি প্রস্তাব। প্রবন্ধটি কলকতা হতে প্রকাশিত ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় ২০শে জুলাই, ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়।