সাধারণ নির্বাচন বানচাল
সাপ্তাহিক সৈনিক’
২৮শে নভেম্বর, ১৯৫৭
সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্ব জনগণ বরদাস্ত করিবে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সংকট: রিপাবলিকান দলের সুবিধাবদিতা ; বিপ্লবী পরিষদ গঠনের পূর্বাভাস? পৃথক নির্বাচন মারফত পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের শর্তে কেন্দ্রে মুসলীম লীগের নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হইয়াছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে। যার ফলে যুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে প্রণীত ভোটার তালিকা ছাপার কাজ প্রায় শেষ হইয়া আসিলেও উহা বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। এতদুপলক্ষে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৈরী বিল আদ্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে উজিরে আজম জনাব চুন্দ্রীগরের উত্থাপনের কথা বলা বাহুল্য এই জন্যই ঢাকার পরিবর্তে করাচীতে তাড়াহুড়া করিয়া এই অধিবেশন আহবান করা হইয়াচে। কিন্তু কোয়ালিশনের প্রধান অংশ দল রিপাবলিকান পার্টির সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় সংগঠনী কমিটির সভায় জাতীয় পরিষদে এই বিল উত্থাপন না করার জন্য উজিরে আজমকে অনুরোধ করা হইয়াছে এবং পার্টি সদস্যগণ যাহাতে এই প্রস্তাবের নির্দেশ মানিয়া চলে তাহার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য পাটির নেতাকে ভার দেওয়া হইয়াছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, আমাদের পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলি আজ যা সিদ্ধান্ত করেন কাল তার বিপরীতে একটি কিছু করিয়া বসেন। এই মন্ত্রিসভা যদিও মুসলিম লীগের নেতৃত্বে কায়েম হইয়াছে তবুও রিপাবলিকান দল যখন জনাব সোহরাওয়ার্দীর উপর হইতে সমর্থন প্রত্যাহার করে তখন তিনি পদত্যাগ করেন। এই সময় রিপাবলিকান দলের উদ্যোগেই বর্তমান মন্ত্রিসভা কায়েম হইয়াছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আবার মন্ত্রিসভা ভাংগাগড়া হইতে পারে। হয়ত আওয়ামী লীগেরও আবার গদী লাভ সম্ভব হইতে পারে। রিপাবলিকান পার্টির এই সুবিধাবাদী নীতি পাকিস্তান রাজনীতি মোড় কোন দিকে নিয়া যায় বলা যায় না। তবে এ কথা সত্য যে গদীকে কেন্দ্র করিয়া গঠিত রিপাবলিকান দল বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় থাকিবে। এই দলের নেতৃত্ব পঃ পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদ সারা পাকিস্তানে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সোপারিশ করিয়াছিল। আবার তারাই ঢাকা জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য যুক্ত নির্বাচনে সমর্থন করিয়াছিল। তখন অবশ্য তারা পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথক নির্বাচন প্রবর্তনের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। আবার সকলেই আশা করিয়াছিলেন পৃথক নির্বাচনের শর্তে যে মন্ত্রিসভা কায়েম হইয়াছে রিপাবলিকান পার্টি সেই প্রতিশ্রুতি পালন করিবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংগঠনী কমিটির সভায় তাহারা তার বিরুদ্ধে মতামত জ্ঞাপন করিয়াছে। তবুও শেষ পর্যন্ত উধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে অথবা সলাপরামর্শ মারফত সুবিধাবাদী দর্শন অনুযায়ী তাহারা আবার মত বদলাইতেও পারে।
রিপাবলিকান দলের এই সুবিধাবাদিতার পিছনে কোন গভীর ষড়যন্ত্র রহিয়াছে কিনা বলা যায় না। কারণ উক্ত পার্টির নেতা কিছুদিন যাবৎ “বিপ্লবী পরিষদ” অন্তবর্তীকালীন সরকার” ইত্যাদির যে সব ঘোষণা করিয়া আসিতেছেন সেই সুবিধাবাদিতা তারই পূর্বাভাস কিনা জানি না। গদীতে যেই থাকুক না কোন পূর্ব ঘোষণা মত ১৯৫৮ সালের নভেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান আজ জনগণের দাবী। এই দাবী মোতাবেক কাজ না হইলে দেশ এই অশুভ শক্তির হাত হইতে মুক্ত হইবে না এবং বাহির বিশ্বেও পাকিস্তানের কলংক বাড়িয়া চলিবে। জনগণ সাধারণ নির্বাচনে বিরুদ্ধে কোন প্রকার সরকারী-বেসরকারী চক্রান্ত বরদাশত করিবে না। বিপ্লবী পরিষদ বা অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের অগণতান্ত্রিক ও শাসনতন্ত্র বিরোধী অশুভ প্রচেষ্টাকে সকল পাকিস্তান দরদীর রুখিতে হইবে।
———-