You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.07 | মুক্তিসংগ্রামে ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়কে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুক্তিসংগ্রামে ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়কে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ৭ নভেম্বর, ১৯৭১

বরাবর
বার্তা সম্পাদক,
মুজিবনগরঃ ৭ই নভেম্বর, ১৯৭১

প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষুদ্র স্বার্থবাদী পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর অনুসারীদের বিপক্ষে সম্মিলিত সংগ্রাম গড়ে তুলবার দেদীপ্য আহবান জানাচ্ছে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক আন্দোলনের অতন্দ্র প্রহরী, দেশের দুটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

দেশের প্রধান দুইটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিগণ আজকে একত্রে বসেছেন এবং নিম্ন উল্লেখিত বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে চূড়ান্ত করা হয়।

স্টেটমেন্টগুলোতে স্বাক্ষর করেনঃ

নুর-এ-আলম সিদ্দিকি নুরুল ইসলাম
সভাপতি সভাপতি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

শাহজাহান সিরাজ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

এ এস এম আব্দুর রব
সহসভাপতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

আব্দুল কুদ্দুস মাখন
সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

প্রকাশকঃ
(শাহজাহান সিরাজ) (মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম)
সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

বক্তব্যঃ
বাঙ্গালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্দেশিত আদর্শ ও পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আরম্ভ হওয়া বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বয়স এখন সাত মাস। মাতৃভূমিকে স্বাধীন করবার লক্ষ্যে আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা জিবন-মরণ যুদ্ধ করে চলেছেন এবং বিনা দ্বিধায় রক্ত ঝরাচ্ছেন। বাংলাদেশের আপামর ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। অতীত ঐতিহ্য অনুসারে বাংলাদেশের ছাত্র ও যুবসমাজ এবারও একসাথে দুর্বার দুর্ধর্ষ আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

ছাত্র এবং যুবক ভাইদের অবশ্যই সামনে এসে এই মহান সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা উচিৎ।

আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখা উচিৎ যে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর শত্রু কসাই ইয়াহিয়া জান্তাকে পেছন থেকে শক্তি যোগাচ্ছে চীনা সরকার। তাদের সাথে আরও রয়েছে আমেরিকান ধণগোষ্ঠী। তাই আমাদের প্রচণ্ড শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম যার লক্ষ্য হচ্ছে বাঙ্গালী জাতির মুক্তিলাভ এবং সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপেনিবেশিকতাবাদ থেকে মুক্তি। এটি জনসাধারণের সংগ্রাম। তদুপরি বাংলাদেশের সকল যোদ্ধাগোষ্ঠী বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে একত্রিত হয়েছে।

আমরা বাংলাদেশের সকল ছাত্র ও যুবসম্প্রদায়ের নিকট বিশেষ করে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্য করে এমন মানুষদের কাছে দাবী জানাচ্ছি যে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদেরও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া উচিৎ, পাক শাসিত প্রশাসিত এলাকাগুলো একসাথে বয়কট করা উচিৎ এবং হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে ধ্বংস করা উচিৎ। আমরা আরও দাবী জানাচ্ছি যে সকল মুক্তিযোদ্ধাগোষ্ঠীদের বাংলাদেশ সরকারের পতাকাতলে এসে একত্রিত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালাতে যাতে করে জনগণের রায়কে প্রতিফলিত করে বিজয় ত্বরান্বিত করা সম্ভব হয় এবং একই সাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্ত করা সম্ভবপর হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা যত উত্তরোত্তর সফলতা পাচ্ছে ততই বিশ্ববাসী আগ্রহ সহকারে আমাদের পক্ষ অবলম্বন করছে। আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ অন্যান্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই যারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা ও সমর্থন জুগিয়ে চলেছেন। একই সাথে অন্যান্য স্বাধীনতাপ্রেমী গণতন্ত্রী রাষ্ট্র এবং তার জনগণদেরকে, বিশেষ করে বিশ্বের সকল ছাত্র ও যুবসম্প্রদায়কে, আমাদের সংগ্রামের সাথে একত্বতা ও সহায়তা প্রদর্শন করবার আহবান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

একটি স্বতন্ত্র, গণতান্ত্রিক, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবার লক্ষ্যে আমরা পরিপূর্ণ শক্তহাতে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আমরা এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছি যেখানে সকল প্রকার নৈরাজ্য নির্বাসিত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং যেখানে কর্মজীবী, কৃষক, মধ্যবিত্ত, ছাত্র ও যুবক সকল শ্রেণীপেশার মানুষ শান্তিতে ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করতে পারবে।

মাতৃভূমিকে স্বাধীনতা এনে দেবার জন্য নিজ জীবন উৎসর্গ করবার মতন এমন মহৎ কর্ম পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আসুন একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুকে প্রতিহত করি। জয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী।
জয় বাংলা।