শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
উপদেষ্টা কমিটির উপর লিখিত সরকারের কাছে প্রদত্ত একটি প্রতিবেদন | সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাদের নিয়ে গঠিত দূতাবাস কমিটি এ সংগ্রামকে জাতীয় যুদ্ধে পরিণত করার ব্যাপারে এগিয়ে ছিলেন।পূর্ববঙ্গের গণমানুষের আন্দোলনের প্রধানতম ধ্বজাধারী হিসেবে আওয়ামীলীগের এ ধরণের কমিটি দরকার ছিল না,কিন্তু জনগণকে আরো উৎসাহিত করতে এটি ভূমিকা রাখে। দূতাবাস কমিটি গঠনের ফলাফল নিম্নরূপ –
১. বাংলাদেশের গণমানুষের নৈতিক শক্তিকে জোরদারের জন্যে মানসিক ভাবে প্রভাবিত করে।
২.দেশের জনগণই যে এ সংগ্রামের প্রধান শক্তি সেটা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং জনগণকে বুঝানো।
৩. ইয়াহিয়া সরকারের উপর মানসিক চাপ তৈরি করা।
এখানে এটা মনে হতে পারে যে ভারতীয় সরকার দূতাবাস কমিটি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। সম্ভাব্য কারণগুলো হল –
১.এটি পশ্চিম বঙ্গের বাম রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দমন করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পছন্দের বিষয় পন্ড করা থেকে বিরত রাখবে,
২.ন্যাপ (মুজাফফর) এবং মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট দলগুলোকে ফ্রন্টে অন্তর্ভূক্ত করার জন্যে রুশ সরকারের চাপ প্রয়োগ,
৩.মাওলানা ভাসানীর কোনো দল না থাকা এবং আওয়ামী লীগের প্রতি তার দায়বদ্ধতা। তার অন্তর্ভুক্তি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই মানসিক ভাবে এগিয়ে নেয়।
আওয়ামীলীগের একটি অংশ মনে করে যে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব ক্রমে বামপন্থীদের হাতে চলে যাবে। কিন্তু দূতাবাস কমিটির কার্যকরী অংশ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল –
ক) কমিটি স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ে কেবলমাত্র বাংলাদেশ সরকারের সাথেই আলোচনা করবে।
খ)প্রধানমন্ত্রী সব ধরণের মিটিং আহবান এবং পরিচালনা করবেন।
এর অর্থ এই যে,দূতাবাস কমিটি বাংলাদেশ সরকারের অধীনে একটি কমিটি মাত্র। কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী মনে করলেই তারা পরামর্শ করবে। এক দিক দিয়ে এটি আওয়ামীলীগের জন্যে বিজয় বলা যায়। একদিকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে কাছে টানে এবং অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা নিজেদের হাতেই রাখে।
মস্কোপন্থীরা স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ স্বীকৃতি পেয়ে খুশি হয় এবং তারা মনে করে এটি তাদের এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো।
এ দূতাবাস কমিটি অন্যান্য বামশক্তিগুলোকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে নি। দুবা গ্রুপ সম্ভবত কোন কারণে অংশগ্রহণ করে নি। কিন্তু নয় দল সমন্বিত সংগ্রাম কমিটির অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোকে আমন্ত্রণ জানালে হয়তো তারা অংশগ্রহণ করতো। মাও সে তুং এবং চে গুয়েভারা পন্থীদের মতে ও দূতাবাস কমিটি একটি ভাল পদক্ষেপ। কিন্তু তাদের অন্তর্ভুক্তিকরণ অধিকতর জ্ঞানের পরিচায়ক হত।
ক্লাসিক্যাল সেন্সে এটিকে স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে দেখানো যায় নি বলে বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের সমর্থন এবং মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে নি। স্বাধীনতা সংগ্রামকে একটি জাতীয় এবং বিপ্লবী স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে দেখানো যায় নি বলে এটি ইউরোপ, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে সাড়া ফেলতে পারে নি। এমনকি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ সংগ্রাম উপেক্ষিত হয়।এ থেকে বুঝা যায় যতই আমরা এই সংগ্রামকে সম্প্রসারিত জাতীয় সংগ্রামে রূপ দিতে পারবো,ততই আমরা জনগণের সংগ্রাম সমর্থক বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং জনগনের কাছ থেকে বেশি সাহায্য পাব।
বাস্তবে দূতাবাস কমিটি অকার্যকর হলেও কিংবা গোঁড়া সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত না করলেও এতে কিছু লাভ হয়। তারা আরো সহজে চলাফেরা করতে পারবে,সংগঠন কে কর্মক্ষম করবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে । অন্যান্যদের সাহায্য করে যুদ্ধে যুক্ত হওয়াকে তারা একটি স্বীকৃতি ভাবতে পারে ।
মূল্যায়ন
আগের কমিটিকে অপরিবর্তিত রেখে বাদ পড়াদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা ( বর্তমানে যে রকম আছে)।
এটি স্বাধীনতা সংগ্রামকে শক্তিশালী করবে এবং অপরপক্ষে, বামপন্থীদের বাদ দেওয়ার মত অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা দূর করবে । এভাবে আওয়ামী নেতৃত্ব ঠিক রেখে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানো যায়।