শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত একটি প্রতিবেদন | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২ অক্টোবর,১৯৭১ |
অবস্থান কাগজ
গোপনীয়
নং 4/2
রেফারেন্স সেল
অক্টোবর ২৭,১৯৭১
পররাষ্ট্র মন্ত্রী
বাংলাদেশে-ভারত যৌথ পরিকল্পনার একটি বিশ্লেষণ
ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য যেতে পারেন শুধুমাত্র নিম্নলিখিত তিনটি শর্তে:
(ঝ) ভারতকে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি নিষ্পত্তিমূলক সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের ভোগদখল করতে হবে যেমন হত
দ্রুত তারা তাদের উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়;
(আ) চীনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিতে হবে;
(গ) বিশ্ব মতামত নিষ্ক্রিয় করা হবে যাতে একটি অপ্রতিরোধ্য তরঙ্গ
ভারতের নিন্দা ঘটাতে না পারে।
ভারতীয় বিশ্লেষকরা খুব দ্রুত বুঝতে পেরেছিল যে নভেম্বর-ডিসেম্বর, ১৯৭১
একটা সময় ছিল যখন এই সব শর্ত রাখা সঠিক হবে। যখন শীতকালে সেট এবং
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় পর্বতমালা হিমায়িত ঠাকোবে, চীনা হুমকি শূন্যের কাছাকাছি হয়ে যাবে।
সুতরাং এই সময়ে ভারত তার পর্বত বিভাগের কিছু অংশ মুছে ফেলার জন্য সামর্থ ছিল এবং
তাদেরকে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্থাপন করাও যেত।মুক্তিবাহিনী যখন পাকিস্তানি সৈন্যের বড় একটা ক্ষতি সাধন করে দিয়েছিল,তখনই এটা নির্ধারিত ছিল যে প্রথম শর্তটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে। দ্বিতীয় শর্তটিও পরিষ্কারভাবে জানা।তৃতীয় শর্তের ক্ষেত্রে, বিশ্ব মতামত বাংলাদেশ সমস্যায় এতোটাই বিরক্ত যে,
নিঃসন্দেহে সমস্যা সমাধান করতে কোনো শক্তিশালী সংগঠন নিজেই পদত্যাগ করবেন।
সুতরাং, খুব প্রারম্ভে জুনের শুরু থেকে, ভারতীয় কূটনীতি একটি যুদ্ধ নভেম্বরের আগে ভঙ্গ রোধ করার জন্য একটি জোত কর্ম নিয়োজিত ছিলো। ডিসেম্বর পাকিস্তানের সুবিধাজনক একটি সময়।
ভারত এই বছরের শেষের দিকে পাকিস্তান আক্রমণ করবে যা আমাদের মুক্তির জন্য প্রধান কারণ,
পৃথক্ ভারী সেনা বিল্ড আপ ইত্যাদি প্রমাণ থেকে ..এটা সত্য যে ভারত প্রেক্ষণ একটি সুস্পষ্ট সুদ যে বাংলাদেশ সঙ্কট ভারতীয় দিয়ে শেষ হয়েছে সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত সব পথ শুরু হয় দুর্যোগপূর্ণ ভারত মহাসাগর নিশ্চিত পশ্চিম পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ অপসারণের তদনুযায়ী সুবিধা,বাংলাদেশে কোন ব্যাপক বিশৃঙ্খলার একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দীর্ঘায়িত হতে পারে, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধু হিসাবে নিজেদের ক্ষতি হলেও ভারত স্পষ্টত সাহায্য করতে পছন্দ করেন।
বাংলাদেশ একটি দৃঢ় ও কার্যকর সরকার এবং এক যা বন্ধুত্বপূর্ণ স্থাপন
ভারত. আমরা নিজেদেরকে বাংলাদেশ কিন্তু আমরা ভারতীয় প্রভাব একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদত্যাগ করতে পারেন
এটা যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে. এই ভাবে, উভয়ের স্বার্থ
বাংলাদেশ ও ভারতের পরিবেশিত হবে ..
এখন থেকে নভেম্বরের ভারতীয় ডেলিগেটদেরর সঙ্গে এই ডেলিগেটের খেলায় পাকিস্তানের হাতে চার ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রথমতঃ, জাতিসঙ্ঘ যতোক্ষণ এই দ্বন্দ্ব নিজে থেকে কমে আসার অপেক্ষায় রয়েছে তার মধ্যে তারা দ্রুত আক্রমণ চালিয়ে ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল করে ফেলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা প্রবল এবং এটা এতোই বিপদজনক এক ঝুঁকি, পাকিস্তান মনে হয় না এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করবে।
দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তান চীনের সমর্থনের ইঙ্গিতস্বরূপ বাংলাদেশে চৈনিক সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের আনয়নের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। মনস্তত্বের যুদ্ধে এটা বেশ সফল হতে পারে, ভারতকে টলিয়ে দিতেও পারে এই পদক্ষেপ। (গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক মনে রাখতে হবে, সৈন্য না এলেও, এধরণের একটা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে পারলেই ভারত মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হতে পারে, সুতরাং উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় এটি নয়।)
তৃতীয়তঃ পাকিস্তান আমেরিকার পক্ষ থেকে ইউএস মেরিনের একটি দলকে এই অক্টোবরে বাংলাদেশের মাটিতে প্রেরণের মাধ্যমে তাদের সমর্থনের ইঙ্গিত দেখাতে পারে। এক্ষেত্রেও, নিক্সন মনে হয় না এধরণের এক পদক্ষেপ কেবলমাত্র পাকিস্তানকে সমর্থন প্রদর্শনে নেবেন। তবুও পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তাতে এরকম এক মিথ্যাচারের খেলা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে। তারা হয়তো এমন এক আবেদন জানাবে যেটা যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নাকচ না করে বিবেচনাধীন হিসেবে গ্রহণ করবে।
পাকিস্তানের জন্য চতুর্থ পদ্ধতিটিত হতে পারে মুজিবকে মুক্তি দিয়ে আপোষে আসার চেষ্টা করা। আমাদের সরকার সেক্ষেত্রে চীন সরকারের সমর্থন আদায়ে নিদারুণ প্রচেষ্টা চালাবেন এবং পাকিস্তানের জন্য দ্বিতীয় পদক্ষেপটিকে ব্যর্থ করে দেবেন। একই সাথে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সত্যিকারের ঘটনাগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকেও স্বপক্ষে আনার জন্য তখন কাজ করা যাবে।
যদি পাকিস্তান চতুর্থ সিদ্ধান্তটি নিয়ে থাকে, আমরা আমাদের সর্বোৎকৃষ্ট শর্তগুলো দিয়ে শক্তিশালী এক অবস্থান থেকে দর কষাকষি করতে পারবো। আপোষের একমাত্র সম্ভাবনা থাকবে কেবল যদি পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের সব সৈন্য প্রত্যাহার করে তবেই। এটা ওরা মেনে নিলে প্রতিদানস্বরূপ পাকিস্তানের মুখ রক্ষার্থে আমরাও কিছু সুবিধা দিতে পারি। তারপর, আগে যেমনটা আলজেরিয়া আর ফ্রান্সের মধ্যে ঘটেছিলো, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের সাথে আলোচনায় বসে স্বাধীনতা ঘোষণা করবো। সে সময় যদি আমাদের মনে হয়, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে কিছু ব্যাপারে পারস্পারিক সম্পর্ক বজায় রাখা যাবে।
আজ, সেজন্য, যেখানে সবগুলো পক্ষ শেষ এবং সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের জন্য নিজেদের বিভিন্ন শক্তিমত্তা জড়ো করছে, বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত প্রথমতঃ তাদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন এবং দ্বিতীয়তঃ তার সামরিক বাহিনিকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী করে তোলায়। সমাপ্তি নিকটে, সন্তুষ্ট হওয়ার মতো অবস্থান থেকে আমরা অনেক দূরে। সত্যিকারের দর কষাকষি শুরু হতে যাচ্ছে যে কোনো সময়, কাজেই এর মধ্যে আমাদের কার্যকারিতা পূর্বের চেয়ে যোগ্যতরভাবে তুলে ধরতে হবে।