শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
দক্ষিন-পুর্ব জোন-১ এর প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরণী | দক্ষিন পূর্ব জোন-১ | ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
অনুমোদনের জন্য খসড়া
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী এমএনএ এর সভাপতিত্বে ২.১২.৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, দক্ষিন পুর্ব জোন-১ এর মিটিংযের সারাংশ।
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, অধ্যাপক নু্রুল ইসলাম চৌধুরী, এমএনএ এর সভাপতিত্বে ২.১২.৭১ তারিখে মিলিত হন। নিম্নলিখিতরা উপস্থিত ছিলেনঃ
১. অধ্যাপক নু্রুল ইসলাম চৌধুরী, এমএনএ, চেয়ারম্যান।
২. জনাব খাওয়াজা আহমেদ, এমএনএ।
৩. জনাব সৈয়দ ফজলুল হক, এমএনএ।
৪. জনাব আব্দুল ওয়াহাব, এমপিএ।
৫. জনাব খাইরুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ।
৬. জনাব ওবাইদুল হক, এমপিএ।
৭. জনাব এ.বি.এম. তালেব আলী, এমপিএ।
সম্পাদক গত সভার সারাংশ পড়ে শোনান যা উপস্থিত সদস্যদের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। এরপর কাউন্সিল কাজে নেমে পরেঃ
স্বাধীন হওয়া এলাকা গুলোর সমস্যাঃ- স্বাধীন হওয়া এলাকা গুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনার শুরুতেই, সদস্যরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগের মেমো নং FIN/24/71/494 এ অর্থ মন্ত্রীর মন্তব্য সহ এর বিষয়াবলী উদ্ধৃত করেন।
এ বিষয়ে নিম্ন লিখিত সমাধান গুলো সর্বসম্মতি ক্রমে গৃহীত হয়ঃ
“কাউন্সিল এটা জানতে পেরে দুঃখিত হয়েছে যে, দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভাগ স্বাধীন এলাকা গুলোর সমস্যার গুরুত্ত্ব বুঝতে ব্যার্থ হয়েছে এবং আমলাতান্ত্রিক, ধরাবাঁধা নিয়মে কাজ করেছে যা একটা সময় পরে নিন্দিত হয়েছে। স্বাধীন এলাকা গুলোতে ত্রান কার্যক্রমের অনুমতি জন্য সভাপতির পাঠানো টেলিগ্রামে কাউন্সিলের সদস্যদের সম্মতি ছিল। কাউন্সিল বুঝতে পারল যে, যদি একজন পুর্ণ ক্ষমতাধারী মন্ত্রী পুর্বাঞ্চলে বাস না করে, মুক্ত এলাকা গুলোর সমস্যা যেগুলোতে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত দরকার সেগুলো সম্পুর্ন রূপে অনুধাবন করা যাবে না।
মুক্ত এলাকা গুলো পরিদর্শনের পর কাউন্সিলের সদস্যরা চেয়ারম্যানকে জরুরী তহবিলের জন্য চাপ দেওয়ার তাগিদ দেন। বেসামরিক প্রশাসন স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রসাশনিক খরচ মেটানোর জন্য কোন তহবিল নেই। কাউন্সিল মনে করে যে, মন্ত্রীসভার সদস্যদের অতি সত্ত্বর জোনের মুক্ত এলাকা গুলো পরিদর্শন করা উচিৎ এবং মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেকোন ভাবেই হোক, পরিকল্পিত এলাকাটি কাউন্সিলের অনুমোদন প্রাপ্ত ছিল এবং চেয়ারম্যানকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাউন্সিল অনুমোদিত পরিকল্পনার বকেয়া রসিদের অর্থের অনুমোদনের অনুরোধ জানিয়ে দ্রুত টেলিগ্রাম করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল ।
কাউন্সিল আশা করেছিল যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ মেমোতে উল্লেখিত পরিমান অনুযায়ী মুক্ত এলাকার বিশদ পরিকল্পনার স্থগিত কাজের জরুরী খরচ মেটানর জন্য কিছু অর্থের অনুমোদন দেবে।
জনাব খাওয়াজা আহমেদ, এমএনএ সভাকে জানান যে, পরশুরামের জন্য মোট ২৩২টি টিউব ওয়েল বরাদ্দ ছিল। এই মুহুর্তে তার ৮০% ই অকেজো। এগুলোকে মেরামত করার ব্যবস্থা অতি দ্রুত করতে হবে।
তিনি পেট্রল, ডিজেল এবং অন্যান্য তেলের প্রকট ঘটতির কথাও উল্লেখ করেন। এলাকার কৃষিবিদরা ৮ মাসের যুদ্ধ এবং এর সমস্যার কারনে অনাহারের শেষ সীমায় পৌছে গেছেন। আসন্ন আবাদি মৌসুমের জন্য তাদের পর্যাপ্ত ইরি বীজ দরকার। খাদ্য, শশ্য এবং অন্যান্য কৃষি পন্যের জন্য পরশুরাম সব সময় অতি ফলনশীল এলাকা ছিল।
সরকারের সাথে দ্বিপার্শিক বানিজ্যের খুটিনাটি বিশ্লেষনের জন্য নিম্ন লিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাউন্সিল একটি বানিজ্যিক সংগঠন তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়।
১. জনাব সৈয়দ ফজলুল হক, এমএনএ।
২. জনাব এ.বি.এম. তালেব আলী, এমপিএ।
৩. জনাব আব্দুল ওয়াহাব, এমপিএ।
ত্রান উপ-কমিটির সমগ্র জোনের জন্য নির্মিতব্য বিস্তারিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাউন্সিল প্রাথমিক ভাবে নিম্ন লিখিত ত্রান পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়।
১.বাড়িঘর তৈরীর জন্য অনুদান ১০,০০,০০০/-
২.দুর্লভ নিত্তপ্রয়োজনীয় পন্যের সরবরাহ ২,০০,০০০/-
৩.পরিক্ষামুলক ত্রান কার্য ৫০,০০,০০০/-
৪.ক্ষ্রতিগ্রস্থ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা ১,০০,০০০/-
৫.ঔষধ ১,০০,০০০/-
৬.সাহায্য দরকার এমন মানুষের মধ্যে শীত বস্ত্র বিতরনঃ ১০ হাজার লোকের জন্য পশমী কাপড়।
অন্য সাব-কমিটির কাজের বিস্তার সম্পর্কিত বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য কাউন্সিল তাদেরকে অনুরোধ করেছে।
সরকারি অনুমোদনের ভিত্তিতে কাউন্সিল নিম্ন লিখিত পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোনো ধারা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের পরিনত হবেঃ
১. মূল কলেবর থেকে সহযোগী অংশ গুলোকে বাদ দাওয়া হবে।
২. সংশ্লিষ্ট এমএনএ/এমপিএ এর সাথে আলোচনা করে অবশিষ্ট সদস্যদের এলাকার লোকেদের আস্থাভাজন সমাজকর্মীদের সাথে সংযুক্ত করা হবে। সভায় মুক্ত এলাকা গুলোতে পোস্ট অফিস চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
সভায়, জোনাল কাউন্সিলের সাথে পরামর্শ করে মুক্ত এলাকার বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেওয়ার কর্তৃত্ত্ব জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়।
সৈয়দ ফজলুল হক, এমএনএ, মুক্তিযোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি যে সব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলো নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে না।সদস্যরা বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তাদের দুর্দশা বর্র্নিত পীড়াদায়ক চিঠি পেয়েছেন। সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলিত অবস্থার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য সরকার থেকে বরাদ্দ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।
মুক্ত এলাকার বেসামরিক প্রশাসন চালানোর জন্য কাউন্সিল নিম্নলিখিত মৌলিক নীতি গুলো গ্রহন করেঃ-
ত্রাণ এবং পুণর্বাসন
জোনাল কাউন্সিলের ত্রাণ উপ-কমিটির মাধ্যমে সরকারের ত্রাণ প্রচেষ্টা সংগঠিত ও পরিচালিত করতে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকে ভুক্তভগী মানুষের সম্পত্তি ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতির সঠিক মুল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।
উন্নয়ন
সম্পুর্নভাবে আত্মনির্ভর ও স্বতঃপ্রবৃত্ত কাজের ওপর নির্ভরশীল।
সাধারন প্রশাসন
কাউন্সিল অনুধাবন করল যে, থানা পর্যায়ের নিচে, যা কিনা আমাদের দেশের স্বাধীন এলাকা গুলোতে মৌলিক প্রশাসনিক একক হিসেবে বিবেচিত হয়, এর নিচে মুক্ত এলাকা গুলোতে প্রশাসন স্থাপন যুক্তিযুক্ত হবে না। মানুষকে সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় না থেকে তাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধানের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। মানুষের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ পোস্টিং করা যেতে পারে। পরিষদের মৌলিক কাঠামো, উপ-বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, স্বাধীনতার আগে যেমন ছিল তেমন ভাবেই চলতে পারে।
বিবিধ
সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ইউথ রিসেপশনের ক্যাম্পের নভেম্বর, ১৯৭১ মাসের পারিশ্রমিক মাসের শেষে প্রতিটি ক্যাম্পের প্রকৃত নগদ তহবিলের ভিত্তিতে প্রদান করা হবে।
ইউথ রিসেপশনের ক্যাম্পের হিসাব নিরীক্ষার জন্য জনাব এ.বি.এম. তালেব আলী, এমপিএ এবং জনাব ওবায়দুল হক, এমপিএ কে সংগে নিয়ে একটি নিরীক্ষা দল গঠন করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জোনাল কাউন্সিলের কাছে এর তথ্য জমা দাওয়ার জন্য কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে জনাব ওবায়দুল হক, এমপিএ প্রত্যাহারের কারনে মেজর সুব্রমানিয়ামকে ফেনী যুব ক্যাম্পের ক্যাম্প-ইন-চার্জের পদে বসানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়, যেহেতু জোনের মুক্ত এলাকায় তাকে প্রয়োজন ছিল।
সরকার স্থানান্তরের জন্য কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোন সেক্টর বা সাব-সেক্টর কমান্ডারকে তার নিজ এলাকায় পোস্টিং দেওয়া হবে না এবং যদি জোনে এই ধরনের পোস্টিং নিয়ে নির্দিষ্ট কোন সমস্যার উদ্ভব হয় তাহলে তা যথোপযুক্ত কর্তৃত্বের সাথে সমাধানের ক্ষমতা জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়।
মেয়র হাসপাতালে সকল পোস্টিংয়ের দায়িত্ব কাউন্সিল জোনাল সাস্থ্য উপ-কমিটিকে দেয়।
কাউন্সিল প্রচার বিভাগের সকল অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য জোনাল প্রশাসনিক অফিসারকে অনুরোধ করেন।
সভাপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপনের মাধ্যমে মিটিং শেষ হয়।
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী, (এস. এ. সামাদ)
সভাপতি, সেক্রেটারি,
জোনাল এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল জোনাল এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল
দক্ষিন পুর্ব জোন-১, শান্তিরবাজার।