শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব শিবির প্রণোদনা কোর্স সম্পর্কিত দলিল | বাংলাদেশ সরকার, যুব শিবির পরিচালনা বোর্ড | ………………. ১৯৭১ |
যুব শিবির প্রণোদনা কোর্স
১। এমন প্রেষণা দরকারঃ
একজন তরুন যদি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়, তবে একথা তাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, এখানে শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই প্রস্তুত হওয়া আবশ্যক। একটি প্রণোদনা কোর্সের লক্ষ্য হচ্ছে একজন যোদ্ধাকে এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।
২। আমাদের সংগ্রামে প্রাথমিক লক্ষ্যঃ
এই নিষ্ঠুর সশস্ত্র বাহিনীর হাত থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করে নতুন ভাবে নতুন নিয়মে একটি স্বাধীন, গনতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি সুখি সমৃদ্ধ দারিদ্র, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এই মুক্তিযুদ্ধ একটি ছোট্ট পদক্ষেপমাত্র। যেখানে সকলের অধিকার সংরক্ষণ করা হবে এবং সমাজে কোনো ভেদাভেদ থাকবেনা।
৩। কেবল লড়ে যাওঃ
আমরা সবচেয়ে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধটি করছি। আমরা যুদ্ধ করছি স্বাধীনতার জন্যে, আমরা যুদ্ধ করছি গণতন্ত্রের জন্যে। আমরা ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অপশক্তি ধ্বংস করার যুদ্ধ করছি। অতএব, এই লড়াইয়ে আমরা বিশ্বের সব অধিকার সচেতন মানুষের নৈতিক সমর্থনপাচ্ছি। আমাদের সংগ্রামের খবর এবং সাড়া দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে।
৪।আমাদের জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যঃ
আমাদের সকল যোদ্ধাদের আমাদের জাতীয় ইতিহাস, সংগঠিত গণহত্যা এবং জাতির সামাজিক ইতিহাসের বিবর্তনের দিক জানা প্রয়োজন। বর্তমান সময় আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। হয় বাঙ্গালি রক্ত ঝরিয়ে স্বাধীন হবে, নতুবা চিরদাসত্ব মেনে নেবে। আমাদের যোদ্ধারাই আমাদের ইতিহাস বানিয়েছে। এবারো তার ধারা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
৫।সশস্ত্র. সংগ্রামঃ
শত্রুরা আমাদের অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য করেছে। যদিও আমরা শুরুতে নিরস্ত্র ও অপ্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু আমরা দ্রুত শিখে গেছি কি করে অস্ত্র চালাতে হয়। বাঙ্গালিরা নিজেদের সেরা যোদ্ধা হিসেবেই প্রমান করেছে।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের জনগণ অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়নে জর্জরিত একটি জীবন থেকে মুক্তি পাবার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনার পরিবারের সদস্যদের অনেকে হয়তবা প্রাণ হারিয়েছে, অবর্ননীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছ, কিংবা আপনার নিজের আত্মীয়দের অনেকেই সাগ্রহে একজন ‘বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে আপনাকে বরন করবার জন্য অপেক্ষা করে আছে।.
৬। আমাদের জনগণঃ
(ক) আমাদের জনগণই আমাদের শক্তি। এটা খেয়াল রাখতে হবে যে তারা এই মুহুর্তে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। বুঝতে হবে যে তারা দরিদ্র এবং একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব অধীনে তারা বাস করছে। কিন্তু তারা তাদের অন্তর দিয়ে আমাদের সমর্থন করছে। প্রতিকুল সময়ে হয়তোবা কিছু মানুষ আমাদের বিরোধিতা করছে। তবে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি কার্যকর, সুসংগঠিত এবং সুশৃঙ্খল দল হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। তাদের কাজের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। আমাদের সব কার্যক্রম দ্বারা সাধারন মানুষের সঙ্গে আমাদের একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে। জনসমর্থন হারানোটা হবে একটা বিপর্যয়ের নামান্তর।
(খ) একজন মুক্তিযোদ্ধার সংগ্রাম শুধু যুদ্ধের ময়দানেই নয়, সকল ক্ষেত্রেই। বিভিন্ন অপপ্রচার ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শত্রুরা আমাদের দ্বিধাবিভক্ত করবার চেষ্টা চালাচ্ছে। কাজেই লোভ, বিভিন্ন অপপ্রচার, আত্মচিন্তা প্রভৃতি যেন কনো ভাবেই আমাদের নিরস্ত করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সকল ধরণের প্রচেষ্টাই কাজে লাগাতে হবে কারণ আমরা যুদ্ধ করছি। এই যুদ্ধটা কেন করছি সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
৭। জয় আমাদের হবেইঃ
ভবিষ্যত স্পষ্টতই আমাদের হাতে। বিশ্বের সকল সংবাদ সংস্থা এবং বিশ্বের রাজনৈতিক চিন্তাবিদেরা বিশ্লেষণ করে আজ এই বিষয়ে একমত যে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র আজ মৃত। সকল সামরিক সরবরাহ ইতোমধ্যেই পরিষ্কার করে দিয়েছে যে পাকিস্তান খুব বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের উপর সশস্ত্র দখল ধরে রাখতে পারবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে গেরিলাদের সাফল্য আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত ও নন্দিত। কত জলদি স্বাধীনতা চাই, শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটা আপনি-বা আমাদের সকলের ওপর নির্ভর করে চলুন প্রতিজ্ঞা করি এবং যত তাড়াতাড়ি পারা যায় একে সম্ভব করি।