শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
“বাংলার গণদুশমনরা হুশিয়ার” | বাংলাদেশ সরকার, প্রচার দপ্তর | …………১৯৭১ |
স্বাধীন বাংলাদেশবাসী ভাইসবের প্রতিঃ
আমাদের মুক্তিবাহিনীর বীর বিক্রমে হানাদার ইয়াহিয়া সরকারের বর্বর সেনাবাহিনীর সহিত লড়াই করিয়া চলিতেছে। বিপুল পরিমান অস্ত্র–শস্ত্র সীমাহীন অত্যাচার-অবিচার, নিরস্ত্র নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধ হত্যা, নারী ধর্ষণ, অবাধ লুণ্ঠন ও ঘরে ঘরে অগ্নিসংযোগের তাণ্ডবলীলা বাঙালী জাতির ইস্পাতদৃঢ় মনোবল ক্ষুণ্ণ করিতে পারে নাই। সমস্ত দেশে নরখাদক পাক সরকার আজ পর্যন্ত অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট চালু করিতে সক্ষম হয় নাই, খাজনা-শুল্ক আদায় ও দেশের কাঁচামাল লুণ্ঠন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হইয়া পড়িয়াছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দখলদার বাহিনি নিজেদের দালাল খুঁজিয়া পাইয়াছে গণদুশমন মুসলিম লীগ, পি,ডি,পি জামাত ইত্যাদি জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। আপনারা এই সব দালালদের কলঙ্কময় অতীত ইতিহাস ভালভাবে জানেন আজ তাঁরা হানাদারদের সাহায্যে বাংলাদেশের নিরীহ জনসাধারনের উপর যে বিপদ ডাকিয়া আনিয়াছে, বিশ্বের ইতিহাসে তাহার তুলনা নাই।
স্বাধীন বাংলাদেশের জনসাধারণ মুক্তিফৌজের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া লড়াই করিতেছেন। অপরদিকে পাক ফৌজকে তাহাদের দুষ্কর্ম ও পাশবিক কার্যকলাপে পি,ডি,পি মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের দালাল ও গুন্ডারা সহযোগিতা করিতেছে। দালালেরা গ্রামে গ্রামে পাক ফৌজকে পথ দেখাইয়া লইয়া আসে, নিরীহ জনসাধারণের টাকা-পয়সা, গরু-খাসীসহ যাবতীয় খাদ্যবস্তু, লুটপাট করে, ঘরবাড়ি ভাঙ্গিয়া আগুন ধরাইয়া দেয়, মহিলাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়, মানুষের মনে ত্রাসের সৃষ্টি করিয়া হাজারে হাজারে লোককে দেশত্যাগে বাধ্য করে। নির্বিচারে নারী শিশু-বৃদ্ধ-যুবকদিগকে হত্যা করিয়া নদি-নালায় ভাসাইয়া দেয়।
তাই, হানাদার দুস্য বাহিনী পাকফৌজের মতো এই সমস্ত দালাল ও গুন্ডাদল বাংলাদেশীর জাত শত্রু এই দালাল-গুন্ডা দেশদ্রোহী বিভীষণদের খতম করার জন্য আমরা চিহ্নিত করিয়াছি। এদের প্রতিটি দুষ্কর্ম ও গতিবিধি সম্বন্ধে আমরা সম্পূর্ণ অবগত আছি। এদের নির্মূল করা আমাদের প্রাথমিক ও অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে গণ্য। ইতিমধ্যে আমরা এই সমস্ত দেশদ্রোহীদের মধ্যে অনেককেই খতম করিয়াছি। বাকীগুলি মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনিতেছি। জানিয়া রাখুন, এদের ধ্বংসের দিন আর দূরে নয়।
ভাইসব,
হানাদার বাহিনীর প্রতি পদক্ষেপে দুর্বার গণপ্রতিরোধে অধিকতর দৃঢ় করুন। নিকটস্ত মুক্তিবাহিনীর শিবির ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও পরিপূর্ণ সহযোগিতা বজায় রাখিয়া চলুন। দুর্বার গতিতে মুক্তি সংগ্রামকে চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাইয়া দিন।
আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম আজ প্রায় তিন মাস যাবৎ অপ্রতিহত গতিতে চলিয়াছে। সারা বিশ্বে বীর জাতি হিসাবে আমরা শির উঁচু করিয়া দাঁড়াইয়াছি। রক্তের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করিতে হয়। আমরা বহু রক্ত দিয়াছি, প্রয়োজনে আর দিব। আমাদের সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, আজাদীর সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
মনে রাখিবেন, যে জাতি নিঃশেষে প্রান বিলাইয়া দিতে জানে, সে জাতির ক্ষয় নাই।
-জয় বাংলা-
বাংলাদেশ সংযোগ ও তথ্য দফতর তামাবিল, সিলেট হইতে প্রকাশিত ও প্রচারিত