You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.06 | বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনরক্ষার প্রচেষ্টা চালানোর জন্য মার্কিন সিনেটরদের প্রতি ব্রিটেন-বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের আহ্বান | বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের সভাপতির চিঠি - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সুত্র তারিখ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনরক্ষার প্রচেষ্টা চালানোর জন্য মার্কিন সিনেটরদের প্রতি ব্রিটেন-বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের আহ্বান বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের সভাপতির চিঠি ১৬ এপ্রিল, ১৯৭১

বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট
১০, লিচেস্টারগ্রোভ
লিডস ৭
যুক্তরাজ্য
১৬ এপ্রিল, ১৯৭১
মাননীয় সিনেটর,
যুক্ত্ররাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ (প্রাক্তনপূর্ব পাকিস্তান)-এর পরিস্থিতির প্রতি যে উদ্বেগ জানিয়েছে তা আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সংগে জানাচ্ছি যে, পশ্চিম পাকিস্তানি বর্বরেরা আমাদের নিরাপরাধ ও নিরস্ত্র জনসাধারণের বিরুদ্ধে আপনাদের সরবরাহকৃত কামান ও বিমান ব্যবহার করছে। আমরা সবসময়ই যুক্ত্ররাষ্ট্রকে মুক্তি ও গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে বিবেচনা করে এসেছি, কিন্তু আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই পর্যন্ত আপনাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতার পরিমাণ বিবেচনা করে আমরা কিছুটা হতাশ।
তা সত্ত্বেও, এ ধরণের পরিস্থিতিতে যেসব কূটনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হয়, তা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। কিন্তু এটাও আমরা জানাতে চাই যে, বাংলাদেশের উত্থান শুধু কষ্টসাধ্যই নয়, ব্যতিক্রমীও ছিল। আমরা ধারণা করছি আপনারা জানেন যে, পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালে উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাব যেখানে বলা হয়েছে,
“অখণ্ড ভারত মুসলিম লিগের এই অধিবেশনের নির্ণীত ও বিবেচিত সিদ্ধান্ত অনুসারে কোন সাংবিধানিক পরিকল্পনা এই দেশে কাজ করবে না বা মুসলিম লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষন না পর্যন্ত এটি নিম্নলিখিত কিছু মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিতহয় যেমন ভৌগোলিকভাবে সংলগ্ন এলাকাগুলোকে সীমানা নির্ধারণ করে প্রদেশ অনুসারে গঠন করা উচিৎ প্রয়োজন অনুসারে এলাকাভিত্তিক পুনঃসমন্বয়ের মাধ্যমে। যে সকল অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেমন ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশ ও পুর্বাংশ, তাদেরকে একত্র করে স্বাধীন রাজ্য গঠন করা উচিৎ যেখানে গঠনকারী এককগুলো হবে সার্বভৌম এবং স্বায়ত্তশাসিত।
ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পরবর্তী সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান খেয়ালমাফিকধারণা করে নিয়েছিল যে, লাহোর প্রস্তাবে দুই রাজ্যের সংস্থান একটি মুদ্রণজনিত ভুল এবং বাংলাদেশের উপর ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছিল। যাইহোক, আমরা ধারণা করে নিয়েছিলাম যে, এই বিষয়টি গণতান্ত্রিকভাবে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু বিগত ২৩ বছর ধরে পাঞ্জাবিরা সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে এবং যখন আমরা সর্বোপরি একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য জোর দিয়েছিলাম তখনই তারা তাদের আসল কদর্য রূপটি প্রকাশ করল। এখন এটি পরিষ্কার যে, এই পশ্চিমা অভিজাতরা স্পষ্টতই আসল ইংরেজদের চেয়ে নিজেরা অধিকতর ইংরেজ। তারা কখনই গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক সরকারের সংখ্যা গরিষ্ঠতার অধিকারকে বিশ্বাস করেনি (সংযুক্তি ‘ক’ দেখুন)।
অতএব, আগের রূপেই পাকিস্তানের অস্তিত্বের ব্যাপারে কোনরূপভ্রান্তি থাকা ঠিক হবে না। লাহোর প্রস্তাব দুইটি প্রদেশের পরিকল্পনা করেছিল; পাকিস্তানের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি বাঙালিদের উপর পাঞ্জাবি গণহত্যার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে এবং সেই সমস্ত মানুষদের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক নিয়মকানুন আশা করার সম্ভাবনাও নেই যারা জন্মগত, প্রথাগত ভাবে সামন্তবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক ভাবে বেড়ে উঠেছে।
আমাদের নিবেদন থাকবে এটি উপলব্ধি করার যে, ইয়াহিয়ার চেয়ে মুজিবের বাংলাদেশের অনেক বেশি বৈধতা আছে (সংযুক্তি ‘খ’ দেখুন)।এবং বাংলাদেশকে অতিসত্বর একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করারও।
আমরা আমৃত্যু ইয়াহিয়ার বর্বর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ে যাব। আমরা জানি বিজয় আমাদের হবেই। আমরা আত্ববিশ্বাসী যে, আজ হোক বা কাল,এক সময় না এক সময় আমরা আপনাদের সরকারের সমর্থন পাবই। কিন্তু আমরা শংকিত যে, আমাদের আত্মসংকল্পের তোড়জোড় ইয়াহিয়াকে পাগল করে দিয়েছে। সে এখন আমাদের জনগণের উপর বোমা বর্ষন করছে,গ্রামগঞ্জ আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং আমাদেরকে দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর হুমকি দিচ্ছে। আপনাদের সময়োচিত সমর্থনই পারে আমাদের হাজার জনগণকে রক্ষা করতে এবং আমাদেরকে সেই দেশ গড়ার মুল্যবান সময়টুকু দিতে পারে, যার ভিত্তি হবে আমাদের সযত্নে লালিত মূল্যবোধগুলোঃ গণতন্ত্র, সমানাধিকার ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা।
অনুমতি প্রদান করুন আমাদের আশু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এই নিবেদনের সমর্থনে ব্রিটিশ প্রেসের পক্ষ থেকে কিছু সম্পাদকীয় মন্তব্য আপনাদের কাছে উদ্ধৃত করার জন্য (সংযুক্তি গ, ঘ, ঙ, চ দেখুন)। আমরা বিশ্বাস করি সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কণ্ঠআপনাদের হৃদয় স্পর্শ করবে এবং ধ্বংসের আগেই আমরা আপনাদের সমর্থন পাব।
যদিওবাএত শীঘ্রই বাংলাদেশের এই স্বীকৃতিকে কূটনৈতিকভাবে আপনাদের কাছে দুরূহ মনে হয়, তবুও অন্ততপক্ষে এইটুকু নিশ্চিত করবেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যাতে হত্যার শিকার না হন এবং অনুগ্রহ করে ইয়াহিয়া খানকে চাপ প্রয়োগ করুন আওয়ামী লীগের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে, যাতে জনগণের রায় আছে। অনুগ্রহ করে আরও নিশ্চিত করুন যেন অতিসত্বর পশ্চিম পাকিস্তানে সকল প্রকার সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ হয় এবং বাংলাদেশে ত্রাণসামগ্রী প্রেরিত হয়।
আপনার অনুগত এম এম হক বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের পক্ষ থেকে