You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.24 | সিদ্ধান্ত চাপানোর বিপক্ষে মুজিবের হুঁশিয়ারি | পাবলিক অ্যাড্রেস প্রতিবেদন - সংগ্রামের নোটবুক

সিদ্ধান্ত চাপানোর বিপক্ষে মুজিবের হুঁশিয়ারি
পাবলিক অ্যাড্রেস প্রতিবেদন, মার্চ ২৪, ১৯৭১, ঢাকা

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের উপর কোন ধরনের সিদ্ধান্ত চাঁপিয়ে দেয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন-“আমরা সহ্য করব না”।
“আমাদের দাবি ন্যায্য এবং পরিস্কার; এবং দাবিগুলো গ্রহন করতেই হবে”, তিনি বলেন।

তার বাড়ির সামনে জমায়েত হওয়া বিশাল লোক সমাগমের দিকে নির্দেশ করে তিনি ঘোষণা করেন যে, লোকজন জেগে উঠেছে এবং তাদের একতা দেখে মনে হবে তারা যেন একজন।

দুনিয়ার কোন শক্তি তাদের দাবিকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না- তিনি বলেন। কেউ যদি জনগণের অধিকার দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় ‘রক্তচক্ষু’ প্রদর্শন করে, তবে আমরা তাদের সহ্য করব না।

শেখ মুজিব বলেন, আমরা চাই শান্তিপূর্ণ মিমাংসা, কিন্তু কেউ যদি সেটা (শান্তিপূর্ণ মিমাংসা) না চায় তবে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমি মনে করি সেই চেষ্টা কেউ করবেও না- তিনি আরো যোগ করেন।

শেখ মুজিব বলেন, লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। যতদিন না বাংলাদেশের মানুষ শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় এবং তাদের অধিকার অর্জিত না হয় ততদিন পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ব্যাপারে সতর্কীকরণ
তিনি অবশ্য জনগণকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন। তিনি এই বলে সতর্ক করেন যে, বিশেষ এক ধরনের লোক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টায় রত। তাদের পাওয়ার আছে অনেক কিছু। হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করে তারা বানরের কেক ভাগ করার মত এক টুকরো ভাগ পাওয়ার আশা রাখে। এই ধরনের কিছু ঘটনা সৈয়দপুরে ঘটেছে বলে তিনি পরিতাপ করেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, তাদের এই ধরনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে কারন, বাংলাদেশের মানুষ আজ এক হয়েছে। জনগণের অধিকার হরণ করার যতরকম ষড়যন্ত্রই তারা করুক না কেন সফল হতে পারবে না।

শেখ মুজিব বলেন, কোন পরাশক্তির নিকট আমরা মাথা নোয়াব না। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়ব। তিনি ঘোষণা করেন- ‘আমার মাথা কেউ কিনতে পারবে না; শহীদদের রক্তের সাথে আর যেই বিশ্বাসঘাতকতা করুক না কেন, আমি পারব না।’
তিনি আরো বলেন, জনগনেরও উচিৎ শহীদের রক্তকে বৃথা যেতে না দেয়া।

যা কিছুই ঘটুক না কেন তার জন্য প্রস্তুত থেকে তিনি জনগনকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন। “চরম সংকটের মুহূর্তে অর্ডার দেয়ার জন্য আমি বেঁচে থাকব কিনা জানি না, তবে তোমাদেরকে অবশ্যই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”

তিনি জনগণকে শক্তি প্রদর্শণ কিংবা শোষণ অত্যাচার সহ্য না করার পরামর্শ দেন এবং তাদের অনুরোধ করেন যেন তারা তা প্রতিহত করে।

আবাল বৃদ্ধ বনিতার ষাটটির বেশী মিছিল তার বাড়ির দিকে অগ্রসর হয় জনগণের আন্দোলনে তাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য এবং শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তাদের বিশ্বাস প্রদর্শনের জন্য।

তুমুল হর্ষধ্বণি এবং করতালির মধ্যে তিনি ঘোষণা করেন, বুলেটের মুখে বুক পেতে দিতে তিনি সবসময়ই রাজি, কিন্তু সাড়ে সাতলাখ বাঙালির চাকর হয়ে থাকার পক্ষে তিনি কখনই রাজি নন।

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বাঙালির এই বিনা কারণে মরার একটা শেষ আমরা টানতে চাই, তিনি আরো বলেন।

শেখ সাহেব পশ্চিম পাকিস্তানিদের কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের উপর চালানো শোষণ স্মরণ করেন এবং মন্তব্য করেন, ‘বাঙালিরা আর কোন অন্যায় সহ্য করবে না’,
এবং আরো জোর দিয়ে বলেন ‘বাঁচলে আমরা মানুষের মত বাঁচব আর তা না হলে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করতে করতে মরব।’

জনগণকে চুড়ান্ত সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদিওবা হুকুম করতে না পারি তোমরা আরো দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে সংগ্রাম করবে এবং সাড়ে সাত লাখ বাঙালিকে চাকর হওয়া থেকে রক্ষা করবে’।