শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
দৈনিক পূর্বদেশ
১৫ মার্চ, ১৯৭১
আন্দোলন চলবেঃ অব্যহত থাকবে
“জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম এগিয়ে চলেছে । মুক্তিকামী মানুষ বিশ্বের সবখানে যারা প্রাণ লড়াই করে যাচ্ছেন মুক্তির জন্য, আমাদের সংগ্রাম তাঁদের নিজেদের বলে গণ্য করা উচিত । শক্তির সাহায্যে যারা শাসনের চক্রান্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়সংকল্প ও সংঘবদ্ধ জনশক্তি কেমন করে মুক্তির দুর্জয় দূর্গ গড়ে তোলে, আমাদের জনগণ তা প্রমাণ করেছে ।”
আজ বাংলাদেশের প্রতিটি নারী-পুরুষ এমন কি শিশু পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সাহসে বলীয়ান । নগ্নভাবে শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে দলিত করার চিন্তা করেছিলেন যারা, তারা নিশ্চিতই পরাভূত হয়েছে । বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ-সরকারী কর্মচারী, অফিস আর কলকারখানায় শ্রমিক, কৃষক আর ছাত্র সবাই দৃপ্তদম্ভে ঘোষণা করেছে- তারা আত্নসর্মপনের চেয়ে মরণ বরণ করতেই বদ্ধপরিকর ।
গতকাল (বরিবার) শেখ মুজিবর রহমান সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ বড় দুঃখজনক যে, এমন পর্যায়েও কিছু অবিবেচক মানুষ সামরিক আইন বলে নির্দেশ জারি করে বেসামরিক কর্মচারীদের একাংশকে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্চা করেছে । কিন্তু আজ এদেশের মানুষ সামরিক আইনের কাছে মাতা নত না করবার দৃঢ়তায় একট্টা। আমি তাই, সর্বশেষ নির্দেশ যাদের প্রতি জারি করা হয়েছে, তাঁদেরকে হুমকির কাছে মাথা নতনা করার আবেদন জানাই । বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের পেছনে রয়েছে । তাঁদের ত্রাসিত করারে উদ্দেশ্যে এই চেষ্টা তা বাংলাদেশের মানুষকে রক্তচক্ষু দেখাবার অন্যান্য সাম্প্রতিক চেষ্টার মত নস্যাৎ হতে বাধ্য ।
“বাংলাদেশের মুক্তির স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না । আমাদের কেউ পরাভূত করতে পারবে না, কারণ প্রয়োজনে আমাদের প্রত্যেকে মরণ বরণ করতে প্রস্তুত । জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বাধীন দেশের মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে আর আত্নমর্যাদার সাথে বাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চাই । মুক্তির লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রামে নবতর উদ্দীপনা নিয়ে অব্যাহত থাকবে । আমি জনগণকে যে কোন ত্যাগের জন্য এবং সম্ভাব্য সবকিছু নিয়ে যে কোন শক্তির মোকাবেলা প্রস্তুত থাকতে আবেদন জানাই ।”
অপর এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জনগণনের যে আন্দোলন গৌরবোজ্জল দ্বিতীয় সপ্তাহ সমাপ্ত করেছে তা অব্যাহত তাকবে । গত দু’সপ্তাহের মত হরতাল অব্যাহত তাকবে । সেক্রেটারিয়েট, সমস্ত সরকারী, আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানের এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ।
১০৭১ সালের ১৫ মার্চ থেকে যে নয়া কর্মসূচি শুরু হবে নির্দেশাবলীর আকারে তা বিশদভাবে নীচে উল্লেখ করা হলো । নিন্মলিখিত নির্দেশাবলী কার্যকারী হওয়ার সংগে সংগে পূর্ব ঘোষিত সকল নির্দেশ, অব্যাহতি ও ব্যাখ্যাসমূহ বাতিল বলে বিবেচনা হবে ।
আগামী কর্মসূচি ঘোষনা
১ম নির্দেশ
সরকারী সংস্থা সমূহ
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সেক্রেটারিয়েটর সমূহ, সরকারী ও বেসরকারী অফিসসমূহ, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ, হাইকোর্ট এবং বাংলাদেশস্থ সকল কোর্টে হরতাল পালন করবেন এবং নিন্মে বণিত বিশেষ নির্দেশাবলী এবং বিভিন্ন সময়ে যেসব ছাড় ব্যাখ্যা দেয়া হবে তা মেনে চলবেন ।
২নং নির্দেশ
সমগ্র বাংলাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ।
৩নং নির্দেশ
আইন ও শৃংঙ্খলা রক্ষা
(ক) ডেপুটি কমিশনার ও মহকুমা অফিসারগণ তাঁদের কোন দফতর না খুলে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন এবং উন্নয়ন কাজ ও প্রয়োজন হলে এই সকল নির্দেশ কার্যকারী বা প্রয়োগ করার দায়িত্ব পালন করবেন । ডেপুটি কমিশনারগণ ও মহাকুমা অফিসারগণ তাঁদের এই সব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আওয়ামী লীহ সংগ্রাম পরিষদে সংগে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও নিবিড় সহযোগিতা বজায় রাখবেন ।
(খ) পুলিশ আইন ও শৃঙ্খলার রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রয়োজন বোধে আওয়ামী লীগ সেচ্ছাবোধ বাহিনীর সাথে যোগ দেবেন ।
(গ) জেলের দফতরে কাজ চলবে এবং ওয়ার্ডারগণ তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করে যাবেন ।
(ঘ) আনসার বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবেন ।
৪নং নির্দেশ
বন্দর (আভ্যন্তরীন বন্দরসহ)
বন্দর কর্তৃপক্ষ পাইলটেজসহ সকল কাজ করে যাবেন । বন্দর কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র সেই সব অফিস খোলা থাকবে যেগুলি বন্দরে জাহাজসমূহের সহজ ও সুষ্ঠ আসা-যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। কিন্তু সৈন্য চলাচল কিংবা সমরাস্ত্র আনানোর ও বাংলাদেশের মানুষকে নির্যাতনের জন্যে সৈন্য ও সমরাস্ত্র আনানেওয়ার কাজে কোনভাবেই সহযোগীতা বা সাহায্য করা যাবে না । জাহাজ সমূহের বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে খাদ্যবাহী জাহাজ সমূহের মাল ত্বরান্বিত করার সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্ধর শুষ্ক (পোর্ট ডিউজ) ও মাল খালাসের কর বা শুল্ক আদায় করবেন । আভ্যান্তরীণ বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর শুষ্ক ও অন্যান্য শুষ্ক আদায় করবেন ।
৫নং নির্দেশ
আমদানি
আমদানিকৃত মাল দ্রুত খালাস করতে হবে । শুল্ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ কাজ করে যাবেন । এবং ধার্যকৃত শুল্ক সম্পূর্ণরূপে পরিমোধের পর মাল খালাসের অনুমতি দিবেন । এই কাজ সমাধানের জন্যে ইষ্টার্ণ ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড ও ইষ্টার্ণ মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড বিশেষ একাউন্ট খোলা হবে । কাস্পমস কালেক্টরগণ এই বিশেষ একাউন্ট পরিচালনা করবেন । আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে যেসব নির্দেশ ইস্যু করবেন কাষ্টমস কালেক্টরগণ তদানুযায়ী একাউন্ট পরিচালনা করবেন । যে শুল্ক আদায় করা হবে তা কোন মতেই কেন্দ্রীয় সরকারের নামে জমা হবে না ।
৬নং নির্দেশ
রেলওয়ে
রেলওয়ে চালু থাকবে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র সেই সব অফিসই খোলা থাকবে যে গুলি রেল চলাচলের জন্যে প্রয়োজনীয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের উপর নির্যাতন চালানোর জন্য সৈন্যদের আনা-নেয়া বা সমরাস্ত্র পরিবহনের কোন কাজে কোন ভাবেই সাহায্য বা সহযোগিতা ভিক্তিতে রেল ওয়াগনের ব্যবস্থা করবেন ।
৭নং নির্দেশ
সড়ক পরিবহন
সারা বাংলাদেশে ইপিআরসিটি চালু থাকবে ।
৮নং নির্দেশ
আভ্যন্তরীন নদী বন্দরগুলো কাজ চালু রাখার জন্য ই,পি,এস,সি, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ও আই, ডাব্লিউ, টি, এর প্রয়োজনীয় কিছু সংখ্যাক কর্মচারী কাজ চালিয়ে যাবেন । গণ-নির্যাতনের জন্য সিন্য বা রণসভার আনা-নেওয়ার ব্যাপারে এই সব প্রতিষ্ঠান ব্যাপারে এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা কোন সহযোহীতা করতে পারবেন না ।
৯নং নির্দেশ
বাংলাদেশের মধ্যে শুধু চিঠিপত্র, টেলিগ্রাম ও মনি অর্ডার পৌঁছানোর জন্য ডাক ও তার বিভাগ কাজ করে যাবে । সরাসরি বিদেশে চিঠিপত্র ও টেলিগ্রাম প্রেরণ করা যাবে । ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশ নেয়ার ও দেয়ার জন্য সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার শুধু অপরাহ্ন তিনটা থেকে ৪টা পর্যন্ত এই এক ঘন্টা অন্তঃঅঞ্চল টেলিপ্রিন্টের যোগাযোগ চালু থাকবে । ২৫নং নির্দেশে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে ।আন্তঃঅঞ্চল প্রেস টেলিগ্রাম চালু থাকবে । পোষ্টার সেভিংস ব্যাংক ও বীমা কোম্পানী কার্যরত থাকবে ।
১০নং নির্দেশ
বাংলাদেশের মধ্যে কেবলমাত্র স্থানীয় ও আন্তঃজেলা ট্রাংক টেলিফোন যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে । টেলিফোন মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগ গুলো কাজ করে যাবে ।
১১ নং নির্দেশ
বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলি কাজ চালিয়ে যাবেন । তারা ঘণ-আন্দোলন সম্পর্কিত সকল বক্তব্য, বিবৃতি, সংবাদ ইত্যাদি প্রচার করবেন । যদি না করেন তবে এই সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যাক্তিরা সহযোগিতা করবেন না ।
১২নং নির্দেশ
জেলা হাসপাতাল, টিবি ক্লিনিক, কলেরা, রিচার্স ইনষ্টিউটসহ সকল হাসপাতাল, স্বাস্থকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য সেনিটেশন সার্ভিসগুলো যথারীতি কাজ করে যাবে । সেন্ট্রাল মেডিক্যাল ষ্টোর্স কাজ করে যাবে এবং সকল হাসপাতাল ও হেলথ সেন্টারে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করবে ।
১৩ নির্দেশ
বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে সাথে ও এই কাজের সংরক্ষণ ও মেরামতের কাজের সাথে জড়িত ইপিওয়াপদার বিভাগগুলো কাজ করে যাবে ।
১৪ নির্দেশ
গ্যাস পানি সরবরাহের অব্যাহত থাকবে । এইসবের সংরক্ষণ ও মেরামতের কাজও চালু থাকবে ।
১৫নং নির্দেশ
ব্রিকফিল্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কয়লা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে ।
১৬নং নির্দেশ
(ক) আমদানী, বন্টন, গুদামজাতকরণ ও খাদ্যশস্যের চলাচল জরুরী ভিক্তিতে কার্যকরী থাকবে । এই সবের প্রয়োজনে ওয়াগন, বার্জ ও ট্রাক ও অন্যান্য সকল প্রকার পরিবহন ব্যবস্থা । জরুরী ভিক্তিতে চালু থাকবে ।
১৭ নং নির্দেশ
(ক) ধান ও পাটবীজ, সার ও কীটপকঙ্গ নাশক ঔষধ ক্রয়, চলাচল ও বন্টন অব্যাহত থাকবে । কৃষি খামার ও চাল গবেষনা ইনিষ্টিটিউট ও এর প্রকল্পগুলো যথারীতি করবে ।
(খ) পাওয়ার পাম্প ও অন্যান্য কারিগরি যন্ত্রপাতি চলাচল, বন্টন, মাঠে চালু রাখা ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে ।তা ছাড়া, তেল, জ্বালানী, যন্ত্রপাতি ও এই সবের সংরক্ষণ ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগ খোল থাকবে ।
(গ) নলকূপ খনন, খাল খনন, ও এই জাতীয় পানি সেচ সম্পর্কিত সকল কাজ চালু থাকবে ।
(ঘ) পূর্ব পাকিস্তানের সমবায় ব্যাঙ্ক, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক ও তার অঙ্গ সংস্থাগুলো থানা সমবায়ে সমিতি এবং
অন্যান্য সমবায় সংস্থা গুলো থেকে কৃষি ঋণ দেয়া অব্যাহত থাকবে ।
(ঙ) যে বিষয় গুলো উল্লেখ করা হল কা কার্য সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের কৃষি উন্নয়ন সংস্থার প্রয়োজনীয় শাখাগুলো খোলা থাকবে ।
(ছ) আলু কিনে গুদামজাত করার জন্য কৃষি উন্নয়ন ব্যাঙ্কের তহবিল মওজুদ রাখতে হবে ।
১৮নং নির্দেশ
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শহর সংরক্ষণ
বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ, শহর সংরক্ষণ এবং নদী খনন ও যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ ওয়াপদার পানি উন্নয়ন কাজ, মালপত্র খালাস ও আনা-নেয়া এবং এই ধরণের অন্যান্য জরুরী কাজ সুচারূপে চালিয়ে যাওয়া হবে । সরকারী এজেন্সী কিংবা সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা কন্ট্রাক্টরদের পাওয়া মিটিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে ।
১৯নং নির্দেশ
উন্নয়ন ও নির্মান কার্য়
বৈদেশিক সাহায্যে তৈরী রাস্তা ও পুল প্রকল্পগুলোসহ সকল প্রকার সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকবে । সরকারী এজেন্সী ও সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা থেকে ঠিকাদারদের পাওয়া যতারীতি মিটিয়ে দেয়া হবে । উক্ত সংস্থাগুলো থেকে যদি মালমসলা সরবরাহের চুক্তি থাকে তাহলে সেই চুক্তি মোতাবেক যথারীতি সরবরাহ করা হবে ।
২০নং নির্দেশ
সাহায্য ও পুনর্বাসন
ঘূর্নিদুর্গত এলাকার বাঁধ তৈরী ও উন্নয়ন মূলক কাজসহ সকল প্রকার সাহায্য, পুনর্বাসন ও পূনঃনির্মাণ কাজ অব্যাহত তাকবে । সরকারী এজেন্সী ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলো ঠিকাদারের পাওয়া মিটিয়ে দিবে ।
২১ নং নির্দেশ
ইপিআইডিসি ও ইপসিকের সকল কারখানায় কাজ চলবে এবং যতদুর সম্ভব উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে । এই সকল কারখানা চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহের ব্যাপারে ইপিআইডিসি ও চালিয়ে যেতে হবে ।
২২নং নির্দেশ
বেতন দান
সরকারী ও আধা-সরকারী সংস্থার কর্মচারী ও প্রাইমারী শিক্ষকদের বেতন- যাদের রোজ, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক কিংবা মাসিক হিসাবে দেয়া হয়ে থাকবে, তাদের সেইভাবে দিতে হবে । যাদের বন্যা সাহায্য মঞ্জুর করা হয়েছে এবং বাকী বেতন দেয়ার কথা তা দিয়ে দিতে হবে । বেতন বিল তৈরীর জন্য সরকারী, আধা-সরকারী বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কোলা রাখতে হবে ।
২৩নং নির্দেশ
পেনশন
সামরিক বিভাগের অবসারপ্রাপ্ত কর্মচারীসহ সকল অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনসন নির্দিষ্ট তারিখে পরিশোধ করতে হবে ।
২৪ নং আদেশ
এ, জি (ইপি) ও ট্রেজারী
এই নির্দেশে যে সকল সংস্থাকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে তাদের টাকা-পয়সা দেয়া-নেয়া ও সরকারী কর্মচারীদের বিল তৈরীরি জন্য সামান্য সংখ্যক কর্মচারী দ্বারা এজি (ইজি) অফিসের কাজ চালিয়ে যেতে হবে ।
২৫নং নির্দেশ
ব্যাংক
(ক) ব্যাংকিং কার্য পরিচালনার জন্য সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক প্রয়োজনে ৪টা পর্যন্ত সকল ব্যাংক খোলা থাকবে (অবশ্য মাঝে টিফিনের ছুটি থাকবে)। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবারে ব্যাংকিং কাজের জন্য সকাল ৯টা থেকে ১১-৩০ মিঃ পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য ১২-৩০ মিঃ পর্যন্ত খোলা থাকবে। অনুমোদিত লেনদেনের ক্ষেত্রে বুক ব্যালান্স, অন্যান্য কার্যাবলী নিয়মিতভাবে চলবে।
(খ) কয়েকটি বিধি-নিষেধ ছাড়া ব্যাংকগুলো যে কোন পরিমাণ জমা গ্রহণ, বাংলাদেশের ভিতর যে কোন পরিমাণ আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্স, বাংলাদেশের ভিতর আন্তঃব্যাংক ট্রান্সফার এবং পশ্চিম পাকিস্থান থেকে টিটি বা মেইল ট্রান্সফার ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা সহ তাঁদের কাজকর্ম চালিয়ে যাবে। যেসব বিধিনিষেধ মানতে হবে সেগুলো হচ্ছেঃ
(১) যদি চেকের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংস্থার প্রতিনিধির বা বেতন রেজিস্টারের সার্টিফিকেট থাকে তাহলে বেতন ও মঞ্জুরী পরিশোধ করা।
(২) সপ্তাহে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাফাইড ব্যক্তিগত উত্তোলন।
(৩) চিনিকলের জন্যে আখ এবং পাটকলের জন্যে পাটসহ শিল্পের জন্যে কাঁচামাল কেনার জন্য অর্থ দান
(৪) বাংলাদেশের ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়সহ যে কোন বাণিজ্যিক খাতে সপ্তাহে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট। ঐ অংক ক্যাশ বা ক্যাশড্রাফট মারফত উঠানো যাবে। কিন্তু উপরে উল্লেখিত (৩) ও (৪) নম্বর শর্তে কন অর্থ দেওয়ার পুর্বে অতীত রেকর্ড দেখে ব্যাংককে সন্তুষ্ট হতে হবে যে, অর্থ গ্রহণকারী একজন বোনাফাইড শিল্প অথবা বাণিজ্যিক সংস্থা অথবা ব্যবসায়ী এবং সে যে পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করছে তা তার গত এক বছরে সাপ্তাহিক গড় অর্থ উত্তোলনের যেন চাইতে বেশী না হয়।
(৫) উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিযুক্ত তালিকাভুক্ত কন্ট্রাক্টদের অর্থদান। তবে যে কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে তার কাছ থেকে চেকে একটি সার্টিফিকেট আনতে হবে যে, যে টাকাটা উঠাতে চাওয়া হচ্ছে তা উল্লিখিত কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
(গ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কোন একাউন্টে ক্রসচেক ও ডিমান্ড ড্রাফট প্রদান করা ও জমা নেওয়া যাবে।
(ঘ) স্টেট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা থেকে অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টিটি পাঠানো যাবে। যে সমস্ত ব্যাংকগুলোর সদর দফতর পশ্চিম পাকিস্থানে অবস্থিত, সেগুলো ঢাকাস্থ স্টেট ব্যাঙ্ক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পাওনা করতে পারবে।
(ঙ) অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ের জন্য সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে ৪তা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আন্তঃশাখা টেলিপ্রিন্টার সার্ভিস চালু থাকবে।
(১) প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে সোমবার ও বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ৪তার মধ্যে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি খবর পাঠাতে পারে।
(২) প্রত্যেকটি ব্যাংক অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩তা থেকে ৪টার মধ্যে একটি খবর পেতে পারে।
(চ) বাংলাদেশের আভ্যান্তরীন ব্যাংক পদ্ধতির জন্য টেলিপ্রিন্টার সার্ভিসের কাজ অব্যাহত থাকবে।
(ছ) বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিল সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রসচেক বা ক্রস গ্রান্টের মাধ্যমের অর্থ প্রদান করতে হবে।
(জ) অনুমোদিত ডিলারের সাহায্যে ফরেন ট্র্যাভেলার্স চেক ভাংগানো যাবে।
(ঝ) কূটনৈতিকগণ অবাধে তাঁদের একাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন এবং বিদেশী নাগরিকগণ বৈদেশিক মুদ্রা একাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করতে পারবেন।
(ঞ) লাকর্স পরিচালনার কাজ বন্ধ থাকবে।
(ট) স্টেট ব্যাংক বা অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠানো যাবে না।
(ঠ) বিদেশী রাষ্ট্র থেকে লাইসেন্সের মাধ্যমে দ্রব্যাদি আমদানীর জন্য লেটার অব ক্রেডিট খোলা যাবে।
(ড) পণ্য বিনিময়ের চুক্তি (যে সমস্ত দ্রব্যাদি ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে) মোতাবেক প্রেরিত দ্রব্যাদি ছাড় করতে হবে।
(ঢ) ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড- এর মারফত বকেয়া রপ্তানী বিল সংগ্রহ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশ মোতাবেক কাজ পরিচালিত হবে।
২৬নং নির্দেশ
স্টেট ব্যাংকও অন্যান্য ব্যাংকের মত কাজ করবে এবং সেই একই অফিস সময়ে চলবে এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং পদ্ধতি কাজ করার জন্য ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরূপভাবে খোলা থাকবে। উল্লিখিত কাঠামো ও বিধিনিষেধ এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। ‘পি’ ফর্ম বরাদ্দ করা যেতে পারে এবং বিদেশে অবস্থানরত ছাত্র ও অন্যান্য অনুমোদিত প্রাপকের জন্যে বিদেশে প্রেরণের তাকাও গৃহীত হতে পারবে।
২৭নং নির্দেশ
বাংলাদেশের জন্য আমদানী লাইসেন্স ইস্যুকরণ ও আমদানিকৃত দ্রব্যাদি বিধি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আমদানি-রপ্তানী কন্ট্রোলারের অফিস নিয়মিতভাবে চলবে।
২৮নং নির্দেশ
সকল ট্রাভেল এজেন্ট অফিস ও বিদেশী বিমান পরিবহন অফিস চালু হতে পারে। কিন্তু তাঁদের বিক্রয়লব্দ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।
২৯নং নির্দেশ
বাংলাদেশে সকল অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা চালু থাকবে।
৩০নং নির্দেশ
পৌরসভার ময়লাবাহী ট্রাক, রাস্তায় বাতি জ্বালানো, সুইপার সার্ভিস এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগীয় অন্যান্য ব্যবস্থা চালু থাকবে।
৩১নং নির্দেশ
কোন খাজনা কর আদায় করা যাবে না।
(ক) পুনঃনির্দেশ দেওয়া পর্যন্ত, (১) সকল ভূমি-রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকবে, (২) বাংলাদেশের কোথাও কোন লবণ কর আদায় করা যাবে না, (৩) বাংলাদেশের কোথাও তামাক কর আদায় হবে না, (৪) তাঁতীরা আবগারী শুল্ক দান ব্যতিরেকেই বাংলার সুতা কিনবেন। মিল মালিক ও ডিলারেরা তাঁদের কাছ থেকে কোন আবগারী শুল্ক আদায় করতে পারবেন না।
(খ) এ ছাড়া সকল প্রাদেশিক সরকারের কর- যেমন প্রমোদ কর, হাট, বাজার, পুল ও পুকুরের উপর ধার্যকৃত কর আদায় করা যাবে এবং বাংলাদেশের সরকারের একাউন্টে জমা দিতে হবে।
(গ) অবট্রয় সহ সকল স্থানীয় কর আদায় করা যাবে।
(ঘ) কেন্দ্রীয় সরকারের সকল পরোক্ষ কর- যেমন আবগারী শুল্ক কর, বিক্রয় কর এখন থেকে আদায়কারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা আদায় হবে, তবে তা কেন্দ্রীয় খাতে জমা করা যাবে না অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে হস্তান্তর করা যাবে না। এসব আদায়কৃত কর ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাঙ্ক অথবা ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনে ‘বিশেষ একাউন্ট’ খুলে জমা রাখতে হবে এবং ব্যাংক দুটিও তাঁদের প্রতি প্রদত্ত নির্দেশ অনুযায়ী এগুলো গ্রহণ করবে। সকল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশ ও বিভিন্ন সময়ে তাঁদের প্রতি যে নির্দেশ দেয়া হবে তা মানতে হবে।
(ঙ) কেন্দ্রীয় সরকারের সকল প্রত্যক্ষ কর যেমন- আয়কর আদায় ইত্যাদি পরবর্তী নির্দেশ জারি হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
৩২নং নির্দেশ
পাকিস্থান বীমা কর্পোরেশন চালু থাকবে এবং পোষ্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স সকল বীমা কোম্পানী কাজ করবেন।
৩৩নং নির্দেশ
সকল ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট নিয়মিতভাবে চলবে।
৩৪নং নির্দেশ
সকল বাড়ীর শীর্ষে পতাকা উত্তোলিত হবে।
৩৫নং নির্দেশ
সংগ্রাম পরিষদগুলো সর্বস্তরে তাঁদের কাজ চালু রাখবে এবং সকল নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে যাবে।