You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.14 | কমনওয়েলথ সংসদীয় অধিবেশনে পাকিস্তানের কঠোর সমালােচনা | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

কমনওয়েলথ সংসদীয় অধিবেশনে পাকিস্তানের কঠোর সমালােচনা

কুয়ালালামপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর (ইউ এন)- কমনওয়েলথ সংসদীয় সমিতির ১৭তম অধিবেশনে বৃটেন ও ভিয়েনার প্রতিনিধিরা পাক জঙ্গীশাহীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালােচনায় মুখর ছিলেন। ভারতের প্রতিনিধি শ্রী জি এস ধীলন তার বলিষ্ঠ বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন।
শ্রমিকদল সরকারের প্রাক্তন কমনওয়েলথ দপ্তরের সচিব শ্রীআর্থার বটমলী তার ভাষণে শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি দাবি করে বলেন, শেখের কথাই পূর্ব বাঙলার কথা একথা ইয়াহিয়া খানকে জানতে হবে । বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্য বলেন, পাকিস্তানী নেতারা রাজনীতিক নন কিন্তু তারা খুব উঁচু দরের এক রাজনৈতিক কাজেই হাত দিয়েছেন। তিনি এই বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন যে, শেখ মুজিবের মত নেতাকে অন্তরীণ করে রাখলে তার ফল ভাল হতে পারে না। শরণার্থীদের ব্যাপারে ভারতের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর যে সেবা ভারত করেছে তা তুলনাহীন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলিকে এ ব্যাপারে ভারতকে আরও সাহায্য করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। ভারতের প্রতিনিধি তথা লােকসভার অধ্যক্ষ এই বলে হতাশা প্রকাশ করেন যে, সমস্যাটিকে একটি পৃথক বিষয় হিসেবে অধিবেশনের কর্মসূচীতে রাখা হয়নি। সম্প্রতি আন্তঃ সংসদীয় ইউনিয়নের আলােচনার জন্য গৃহীত একটি প্রস্তাব (বাঙলাদেশ সংক্রান্ত ভারত পেশ করলে তা অধিবেশনের কর্তাব্যক্তিরা নাকচ করে দেয়। শ্রীধীলন বলেন, পাকিস্তান সমস্যা কোনমতেই ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষের নয়, এটি হল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে দুটি পৃথক জাতি সত্ত্বার মধ্যে গৃহ যুদ্ধ। বৃটেনের আর একজন প্রতিনিধি রক্ষণশীল দলের স্যার রােনভি বলেন, লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে ভারত-বাঙলাদেশ সমস্যার সমাধান করবে এ আশা করা অন্যায়। অধিবেশনে উপস্থিত সদস্যদের কাছে তিনি আবেদন জানিয়ে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার এক রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তারা যেন তাদের স্ব স্ব সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি এ বিষয়ের সঙ্গেও একমত নন যে, পাকিস্তান অধিবেশনে যােগ দিচ্ছে না সেজন্য বিষয়টি উত্থাপন করা যায় না। তার মতে “এটা আমাদের দোষে ঘটে নি।” ভিয়েনার শ্রীনেভাইল জেমস পাকিস্তানের কঠোর সমালােচনা করে বলেন, জনগণের প্রতি যে নৈতিকতা বােধ ও ন্যায় বিচার থাকা উচিত করাচির শাসকবর্গ তার সব কিছুকেই অগ্রাহ্য করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর দমন নীতি চালিয়েছে। ঠিক সেই কারণেই কমনওয়েলথ দেশগুলির অধিকার রয়েছে তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নিন্দা করা। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি শ্রী জন পিটারের মতে, বৃহৎ শক্তিগুলি গােলার্ধ ভিত্তিতে কোনাে সমঝােতায় না এলে এ সমস্যার সমাধান আশা করা ঠিক হবে না। মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী শ্রীটুন ইসমাইল বিন আব্দুল রহমান তার ভাষণে দঃ পূঃ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর এলাকাকে নিরপেক্ষ করে রাখার আহ্বান জানান। অধিবেশনে ১৩ দেশ অংশগ্রহণ করছে। দঃ আফ্রিকাকে অস্ত্র সরবরাহ করার যে সিদ্ধান্ত বৃটেন নিয়েছে তার সমালােচনা করেন কানাডার প্রতিনিধি শ্রী এ গােনার্ট। অধিবেশন উদ্বোধন করেন মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আব্দুল হালিম।

সূত্র: কালান্তর, ১৪.৯.১৯৭১