২০ চৈত্র ১৩৭৭ শনিবার ৩ এপ্রিল ১৯৭১
–আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিনের সঙ্গে বি, এস এফ কর্মকর্তার যোগাযোগ হয় । তাকে দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আবেদন জানায় বি , এস , এফ প্রধান। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জীবন নগর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে মেজর আবু ওসমানের সঙ্গে আলোচনা করেন।
–জনাব এ এইচ এম কামরুজ্জামান , শেখ ফজলুল হক মনি এবং তোফায়েল আহমদ বগুরা এসে উপস্থিত হলে ঢাকা থেকে। ডঃ মফিজ চৌধুরীকে সঙ্গে দিয়ে তাদের সীমান্ত পার করে দেবার ব্যবস্থা করলে গাজীউল হক । (৯ খঃ পৃ ৪৯০)
–মেজর এম এস এ ভূঁইয়া , পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক তৌফিক ইলাহী ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের সহয়তায় রামগরে মুক্তিফৌজ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়।
টাঙ্গাইল পাক বাহিনীর হাতে পতন ঘটে। সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং হাজার হাজার ছিন্নমূল হয়ে নানাদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
–আবদুল মালেক উলিক, মিজানুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের এই অভিজ্ঞ নেতৃদ্বয় বিবিস্ম ভোয়ার আগরতলা সংবাদাতার কাছে ঢাকা গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবরণ দেন।বর্হিবিশ্বের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতাদের ২৫ মার্চের কালোরাত্রির পরে প্রথম প্রকাশ।
–তিলিয়া পাড়ায় মুক্তিবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে প্রধান সেনাপতি কর্নেল (পরে জেনারেল) এম এ জি ওসমানী , মেজর শফিউল্লাহ , লেঃ কর্নেল রব ( পরে জেনারেল) নিয়ে একটা বৈঠক হয়। এই বৈঠকে যুদ্ধজয়ের জন্য বন্ধুরাষ্ট্রের সহয়তার ব্যতীত সম্ভব নয় মর্মে ঐকমত্য সৃষ্টি হয় ।
উল্লেখ্য পূর্বদিন কর্লেন এম এ জি ওসমানী ঢাকা থেকে আগরতলা পৌছেন।
–পাক বাহিনীর মোশাররফের নেতৃত্বাধীণ ব্রাভো কোম্পানী মেজর জিয়ার বাহিনী সাহায্য করার জন্য রামগড় যাত্রা করে। ব্রাভো কোম্পানীর নেতৃত্ব দেন মেজর এম এ মতিন ।
–সকাল দশটায় ও রাত ৮-৩০ মিঃ দ্বিতীয় বারের মত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার চালু করা হয়। ভারতের আগরতয়াল বি এস, এফ, এর ১২ ব্যাটিলিয়নের সদর দপ্তর থেকে। ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিল্পবী বেতার চালু থাকে। ৯ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল বেতার প্রচার অনিবার্য কারণে বন্ধ থাকে।
–চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সর্বজনাব এম আর সিদ্দিকি , আলহাজ্জ জহুর আহমদ চৌধুরীসহ অন্যরা আগারতলায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। (১৫:৯)
–কুষ্টিয়া , যশোর , পাবনা ,রংপুর , রাজশাহী, দিনাজপুর একে একে মুক্তি ফৌজের দখলে চল আসছে। তবে জলে , স্থলে, অন্তরীক্ষে পাক ফৌজের আক্রমণ বন্ধ হয়নি। এদিন পাবনা, বগুরা ও দিনাজপুরে পাক বিমানবাহিনী বোমা বর্ষণ করেছে ।
–“ দি টাইমস ” ও “ দি গার্ডিয়ান” সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রসঙ্গে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী কর্তৃক নিরপরাধ বাঙালীদের নির্বিচারে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করে। “ দি গার্ডিয়ান “ পরিষ্কার ভাষায় বলে, পাকিস্তানের তথাকথিত জাতীয় সংহতির মৃত্যু হয়েছে , নির্বিচারে হত্যার মাধ্যমে দুই অংশকে এক করা সম্ভব নয় । “ দি টাইমস”—এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয় , পাকিস্তান সরকার ও পূর্ববঙ্গের নেতাদের মধ্যে আলাপ—আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব ততই মঙ্গল।
প্রবাসী বাঙালী মহিলাদের একটি মিছিল লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিন পর ১০ নম্বর ডাউনিং ষ্টিট্রে অবস্থিত প্রধান মন্ত্রীর সরকারীর বাসভবনে গিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। ছাত্র মহিলাদের প্রতিধিনি দল পৃথক ভাবে লন্ডনে বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেন। কেবল মাত্র চীনের দূতাবাসে স্বারকলিপি গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। দূতাবাসে কর্মচারীরা বলেন, ইয়াহিয়া খান সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ – বিরোধী এবং “ বিদ্রোহ ” দমন করার অধিকার তার রয়েছে। অতএব, তারা ইয়াহিয়া খানকে পুরোপুরি সমর্থন করেন। বাংলাদেশ নিউজলেটার- এর সম্পাদকও দূতাবাসের কর্মচারীদের সঙ্গে তিনঘণ্টা ব্যাপী আলোচনার পর একই উত্তর পান( শ্বা, সং: প্রঃ বাঃ- পৃঃ৩৬)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী