You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.14 | ২৯ আষাঢ়, ১৩৭৮ বুধবার, ১৪ জুলাই ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২৯ আষাঢ়, ১৩৭৮ বুধবার, ১৪ জুলাই ১৯৭১

-পাকবাহিনী মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও টেকের হাট এলাকায় এই তিনদিক থেকে কালকিনি থানার চলবলে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত বাহিনীর ঘাঁটির ওপর আক্রমণ করে। আক্রমণ প্রতিহত করে হেমায়েত বাহিনী গোপালগঞ্জের পূর্ব সীমান্তে প্রশস্ত বিলের উত্তর প্রান্তে ‘রুথিবার পাড়ে’ ছাউনি ফেলে। উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েতের একান্ত চেষ্টায় সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণভাবে গড়ে উঠেছিল এই বাহিনী।। (৯ খৃঃ পৃঃ ৬৭৪) উল্লেখ্য ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার মুক্তাঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসন চালু করার জন্য ডাঃ এম. এ. মালেক, শেখ শহীদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মোল্লা ও সোলায়মান আলী প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলে জানা যায়। (লেখক)

-স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অনিয়মিত কথক হিসেবে কিংবা অনুষ্ঠান প্রচারে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের সুপরিচিত বুদ্ধিজীবী সুধীজন। এরা হলেনঃ ডঃ এ.জি সামাদ , ডঃ অজয় রায় ডঃ মাহমুদ শাহ কোরেশী, ডঃ এ কে এম আমিনুল ইসলাম, জাহির রায়হান, মওদুদ আহমদ (ব্যারিষ্টার) সন্তোষ গুপ্ত, অধ্যাপক অসিত রায় চৌধুরী, অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস, মোহাম্মদ আবু জাফর, আইভি রহমান, অধ্যাপক আবু সুফিয়ান এবং আরও অনেকে। (একাত্তরের রণাঙ্গন পৃঃ ৬৯)

–প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাপ্তাহিক ‘দি পিপল’ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সামরিকবাহিনী দিয়ে বিজয় বাংলাদেশ পরিস্থিতি একমাত্র সমাধান’ Military victory is the only solution to the situation in Bangladesh,  (৩ খৃঃ পৃঃ ৭০) উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনী দি পিপল পত্রিকা পুড়িয়ে দেয়। মুজিবনগর থেকে সম্প্রতি সাপ্তাহিক হিসেবে পুনঃ প্রকাশ ঘটে। উল্লেখ্য সীমান্ত যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব বি এস এফর কাছে থেকে ভারতীয় সেনা বাহিনী গ্রহণ  করেছিল এ মাসের প্রথম সপ্তাহে।

-৩ নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ রায়পুরা, নরসিংদী, কাপাসিয়া, মনোহরদী, কুলিয়ারচর, কটিয়াদী এলাকায় পাকবাহিনী ঢুকতে পারেনি। বেলাবো দখল করার জন্য পাক বাহিনী শঠতার আশ্রয় দেয়। নৌকায় পাকবাহিনী বেলাবো পৌছে যায়। মুক্তি বাহিনীর কাছে সংবাদ ছিল পাকসেনারা লঞ্চে আসছে। লঞ্চ এসেছিল ঠিক কিন্তু তাতে পাকসেনারা ছিল না। মুক্তিবাহিনী লঞ্চ আক্রমণ করলে পাকবাহিনী মুক্তি বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। সাহসী মুক্তি বাহিনী সৈনিক গণশত্রুর হাতে অস্ত্র সমর্পণ না করে বীর বিক্রমে লড়াই করে। অবশেষে কিছুসংখ্যক সৈনিক পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। বেলাবো যুদ্ধে শহীদ হনঃ সুবেদার আবুল বাশার, সিপাহী আবুল বারী, সিপাহী নূরুল ওহাব, সিপাহী সোহরাব হোসেন, সিপাহী মমতাজ উদ্দিন, সিপাহী আব্দুল হক ও সিপাহী আব্দুস সালাম। (১০ খৃঃ পৃঃ ২৯০)

-ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এদিন লোকসভায় (এক প্রশ্নোত্তরে) বলেন একটা জিনিস আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে আর তা হলো মুক্তিফৌজের সাহসিকতার ফলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবেই। (সংবাদপত্র)

-ভারতের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং লোকসভায় বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক চক্র বাংলাদেশের জনগণের ভাবাবেগের উপর জঘন্য সামারিক হস্তক্ষেপের ফলে তার ঔপনিবেশিক চক্রান্তের মুখোশ খুলে পড়েছে। তিনি বলেন, ভারত সরকার মনে করেন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যারা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছেন তারা পক্ষান্তরে পাকিস্তানের সামরিক শাসক বর্গকে বাঙালী জনগণের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাবার উৎসাহ দিচ্ছেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসকবর্গ বাংলাদেশের জনগণের ব্যাপারে অযথা হস্তক্ষেপ করেছেন বলে সরকার মনে করছেন। (সংবাদপত্র)

-ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের জনৈক মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে বিরাজিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি নয়া তালিকা পেশ না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে আর্থিক ও কারিগরী সাহায্যদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে পূর্ব পাকিস্তানে মানবিক সাহায্য প্রেরণ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে পাকিস্তানে সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। অবশ্য পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার পৌছানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোন ফর্মুলার প্রস্তাব দেয়নি।

-পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ এম ইয়াহিয়া খান এদিন ডাঃ এ এ এম মালিককে তার বিশেষ সহকারী নিযুক্ত করেন।

-পাকিস্তান অবজারভার-এর মালিক হামিদুল হক চৌধুরী ও মাহমুদ আলী ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট রবাট-ম্যাকনামারার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট পর্যালোচনা করার আবেদন জানান।

-দিল্লীতে জামাতে উলেমা-ই-হিন্দি’এর কনভেনশনে এক প্রস্তাবে বাংলাদেশে গণহত্যার তীব্র সমালোচনা করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয় ইসলাম ধর্মে গণহত্যার কোন স্থান নেই। গণহত্যা ইসলাম বিরোধী। (সংবাদপত্র)

-বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ তার সচিবালয় থেকে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য ৯টি প্রশাসনিক জোনাল অফিস প্রতিষ্ঠার নির্দ্দেশনামা জারি করে। সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীসভার সম্মতিক্রমে নয়টি জোনাল অফিস গঠন, প্রশাসনিক সদর দপ্তর ও নির্বাচিত গণ পরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব দেয়ায় উল্লেখ করা হয়।

-এদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার বাশার রায়পুরের বেলাবোতে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পত্যক্ষ সংগ্রামে ৭ জন বীর যোদ্ধাসহ শহীদ হন। এদিন নোয়াহাটা, মেহেরপুর, রাজশাহী, বাজিতপুর, সাতক্ষীরা সহ বিভিন্ন সেক্টরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণ চালায়।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী