You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.08 | ২৩ আষাঢ়, ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী | একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২৩ আষাঢ়, ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই১৯৭১

–শ্রমিকদের এমপি মিঃ কনরাড  ও বেইন বাংলাদেশ বিষয় আলোচনার জন্য জাতিসংঘের আপদকালীন বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। (সংবাদপত্র)

-ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এদিন হেনরী কিসিঞ্জারকে জানালেন পাকিস্তানকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহে এ অঞ্চলে শান্তির প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এদিন সরদার শরণ সিংয়ের সাথে পৃথক বৈঠকে মিলি হন ডঃ কিসিঞ্জার।

-পাকবাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। কসবার (কুমিল্লা) জনৈক আখতারউদ্দিনের বাড়ীতে গ্রামবাসী রাজাকারদের সম্বন্ধে আলোচনাকালে পাকবাহিনী ও তাঁদের দেশের সঙ্গী রাজাকারদের নিয়ে গ্রামবাসীর উপর অপারেশন চালায়। ঘটনাস্থলে ৩০ জন গ্রামবাসী নিহত হয় এবং ৩০ জনকে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়। ( সংগ্রহ)

-জুলাই মাসে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে এদিন পর্যন্ত ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীরা ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত প্রদেশের ৯৩৫ টি শিবিরে অবস্থান করছিল। উল্লেখ্য, এসব ক্যাম্প ছিল পশ্চিমবঙ্গে ৬১৫, ত্রিপুরা ২৭৩, মেঘালয় ১৭, আসাম ২৭ এবং বিহারে ৩টি (লেখক)

-মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে, খবর পৌছে যে, পাক বাহিনী নির্মমভাবে বহু সরকারী কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে শহীদদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার ডিসি শামসুল হক খান, সি এস পি, রাজশাহীর এডিসি কুদরত এলাহী চৌধুরী, নূরল আমিন খান

সিএসপি, কাজী আজিজুল ইসলাম (ইপিসিএস), সিরাজগঞ্জের এসডিও শামসুদ্দিন আহমেদ, ডিআইজি মামুন মাহমুদ, চট্টগ্রাম এসপি শামসুল হক, এসপি শাহ আব্দুল মজিদ, এসপি কবির উদ্দিন, সিলেট মেডিকেল কলেজের ডাঃ সামসুদ্দিন আহম্মদ, যশোরের সাব জজ সন্তোস দাশ গুপ্ত, বরিশালের সাব জজ নীতেন্দ্রনাথ দাস, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপ্যাল কর্নেল এম রহমান, আনসার এ্যাডজুন্টেন্ট এ বরকত (পাবনা), আবুল হোসেন যশোর, হাবিবউল্লাহ (নোয়াখালী), ফজলুল হক (জামালপুর) আজিজুর রহমান (যশোর)। আরও বহু কর্মকর্তা পাকবাহিনীর হাতে বন্দী জীবনে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন এরা হলেনঃ ফরিদপুরের ডিসি  আনম ইউসুফ, বরিশাল ডি সি আইয়ুববুর রহমান, গোয়ালন্দ এসডিও শাহ মোঃ ফরিদ, সৈয়দ রেজাউল হায়াৎ সিএসপি, নূরুল মোমেন খান পিএসপি, আব্দুল আউয়াল, এম.এ.এ নূর, হাবিবুর রহমান, স্কোয়াড্রন লীডার মঞ্জুরুল হক, টি এন্ডটি প্রকৌশলীর পরিচালনা জনাব লোকমান হোসেন ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ আলী খান।

-নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যমে বাঙালী শরণার্থীদের দুর্দশার সংবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। সচিত্র প্রতিবেদনসহ সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। নিউজিল্যাণ্ডের প্রধান মন্ত্রী স্যার কেইল হলিউক পার্লামেন্টে বলেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে শরণার্থী সমস্যা সমাধান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছেন।

-মালোয়েশিয়ার প্রধামন্ত্রী তুন আব্দুর রহমান সেদেশে সংসদে বলেন, মালয়েশিয়া পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জড়্যে পড়তে চায় না। বাংলাদেশেকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্নোত্তরে বলেন পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ সে কারণে বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রশ্নই ওঠে না।

-পশ্চিম পাকিস্তান পিডিপির সভাপতি নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে যতো শিগগির সম্ভব আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার অনুষ্ঠানের দাবি জানান।

-জাতীয় যুব কাউন্সিলের সভাপতি ও ঢাকা হাইকোর্টের এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্টের জঘন্য চক্রান্তের দৃঢ় ও সাহসিকতাপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পাকিস্তান সরকারকে অভিনন্দন জানান, প্রয়োজনে বৃটেনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহান জানান। তিনি দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (মুক্তিযোদ্ধা) বিরুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানা। (সংবাদপত্র)

–সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ মার্কিন সিনেটর নিক্সন প্রশাসনের সমালোচনা করে অবিলম্বে পাকিস্তানে প্রেরিত অস্ত্রবাহী জাহাজ ফেরত আনার জন্য আহ্বান জানান।

–জাতিসংঘ শরণার্থী হাইকমিশনার সদর দফতর থেকে জানান হয় হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দীন আগাখান পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে গতকাল ইসলামাবাদ পৌঁছেছেন। তিনি  পাক সরকারের সঙ্গে শরণার্থী বিষয়ে আলোচনা করবেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মহাসচিব ই থান্ট প্রিন্স আগাখানকে শরণার্থী বিষয়ে বাস্তবমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ সহ বিভিন্ন দেশের সাহায্য সামগ্রী গ্রহণের জন্য ইউএনএইচসিআর- এর সদর দপ্তরটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহারের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। (KCA p-24 686)

 

বনগাঁ সফররত কানাডীয় পার্লামেন্টারী প্রতিনিধি দলের কাছে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী বুদ্ধিজীবিগণ এক স্মারকলিপি পেশ করেন। স্বারকলিপিতে বাংলাদেশের মুতিজুদ্ধে সহায়তা, পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্য বন্ধ, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গণহত্যা বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি দানের দাবি ছিল। (৪ খঃ পৃঃ ৫৪৮)

বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান ডাঃ আসহাবউল হক এমপিএ কানাডীয় পালামেন্টারী প্রতিনিধিদলের কাছে পাক সেনাদের গণহত্যা বন্ধ ও জাতিসংঘের চার্টার মোতাবেক ব্যবস্থা কানাডীয় প্রতিনিধির কাছে এক স্মারক লিপি পেশ করেন। (৪ খৃঃ পৃঃ ৫৫০)

 বাংলাদেশের প্রথম ব্রিগেড ‘জেড’ ফোর্স গঠিত হয়। মেজর জিয়াউর রহমানের নামনুসারে এই ব্রিগেডের নামকরণ করা হয় ‘জেড’ ফোর্স। এই ফোর্সে তিনিটি নিয়মিত পদাতিক বাহিনী ছিল ১ম ঈষ্ট বেঙ্গল, ৩য় ইষ্ট বেঙ্গল এবং ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়ান। ব্রিগেড কমান্ড করেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর ছিলেন ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ। ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী (পরে মেজর জিয়াউদ্দিন)। সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারী এ্যাডজুট্যান্ট এবং কোয়ার্টার মাষ্টারের দায়িত্ব পালন করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট লিয়াকত আলী খান। ব্যাটালিয়নের ৪টি কোম্পানি যারা কমান্ড করেছেন তাঁরা হলেনঃ ‘এ’ কোম্পানি কমান্ডারঃ ক্যাপ্টেন মাহবুব। ‘বি’ কোম্পানি কমান্ডারঃ ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দীন ‘সি’ কোম্পানী কমান্ডারঃ ক্যাপ্টেন আব্দুল কাউয়ুম চৌধুরী। ‘ডি’ কোম্পানি কমান্ডারঃ ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারী লেঃ আনিসুর রহমান এবং লেঃ এম, ওয়াকার হাসানও এই ব্যাটালিয়নে কাজ করেছেন। ৩য়বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার মেজর শাফায়াত জামিল, সেকেন্ড ইন কমান্ড ক্যাপ্টেন মহসীন। ‘এ’ কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন, ‘বি’ কোম্পানী কমান্ডার! ক্যাপ্টেন আকবর হোসেন, ‘সি’ কোম্পানি কমান্ডারঃ ক্যাপ্টেন মহসীন, ‘ডি’ কোম্পানি কমান্ডার লেঃ নূরনবী চৌধুরী। এছাড়া, লে মঞ্জুর, লেঃ ফজলে হোসেন, ফ্লাইট লেঃ আশরাফুল আলম প্রমুখ অফিসার এবং নায়ক সুবেদার আজিজ বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ৮ম বেঙ্গলে ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার মেজর এ. টি. এম আমিনুল হক, সেকেন্ড ইন কমান্ড; ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী, ‘এ’ কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী, ‘বি’ কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাদেক হোসেন, ‘সি’ কোম্পানি কমান্ডার লেঃ মোদাসেসর হোসেন ‘ডি’ কোম্পানি কমান্ডারঃ লেঃ মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া লেঃ এমদাদুল হক, লেঃ কাজী মনিয়ুর রহমান, লেঃ অয়ালি-উল ইসলাম, লেঃ বাকের বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

‘জেড’ ফোর্সা কামালপুর, বাহাদুরবাদ ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ থানা, চিলমারী, হাজীপাড়া, ছোটখাল, গোয়াইনঘাট, টেংরাটিলা, গোবিন্দগঞ্জ, সালুটিকর বিমানবন্দর, ধলাই চা বাগান, ধামাই চা বাগান, বাকিগঞ্জ, আলি ময়দান, এম সি কলেজ, ভানুগাছা, কানাইয়ের ঘাট, বয়মপুর, ফুলতলা, বড়লেখা, লাতু, সাগর নাল চা বাগান ইত্যাদি স্থানে পাক-সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে নজির বিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। (১০ খঃ পৃঃ ৬৮১-৮২)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী