You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.08 | মুজিব কর্তৃক দশ দফার ঘোষণা | দ্য ডন - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুজিব কর্তৃক দশ দফার ঘোষণা দ্য ডন ৮ মার্চ, ১৯৭১

মুজিব কর্তৃক দশ দফার ঘোষণা
৭ই মার্চ ১৯৭১’এ শেখ মুজিবুর রহমানের বিবৃতি

আজ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল থেকে এক সপ্তাহ ব্যাপি কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
বিবৃতে, আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন অবিলম্বে সামরিক আইন রহিত করন এবং অর্জিত ক্ষমতা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করার আগ পর্যন্ত অহিংস এবং অসহযোগ আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন আমাদের সংগ্রাম অবশ্যই চলবে।
কর্মসূচিগুলো হবেঃ
১) কর প্রদান বন্ধ।
২) সচিবালয়, সরকারী এবং আধা-সরকারী অফিস, উচ্চ আদালত এবং বাংলাদেশ জুড়ে অন্যান্য আদালতগুলো হরতাল পালন করবে। সময়ে সময়ে এর অব্যাহতি ঘোষণা করা হবে।
৩) রেলপথ এবং বন্দর চলতে পারে, কিন্তু রেলপথ এবং বন্দরগুলো মানুষের বিরুদ্ধে দমন পূরণকল্পেশত্রুবাহিনীর সংহতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার হলে রেলপথ শ্রমিকেরা এবং বন্দর শ্রমিকেরা সহায়তা করবে না।

৪) রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রগুলো আমাদের বিবৃতিগুলোর পূর্ণাজ্ঞ ভাষ্য প্রচার করবে এবং মানুষের আন্দোলনের খবর প্রচার বন্ধ করবে না অন্যথায় বাংলাদেশ এই সকল প্রতিষ্ঠানের কাজে সহায়তা করবে না।

৫) শুধুমাত্র স্থানীয় এবনহ আন্তঃজেলা ট্রাঙ্ক টেলিফোন যোগাযোগ চলবে।

৬) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৭) রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ব্যাতিত অন্যান্যব্যাংকগুলো অয়েস্ট্রান উইং’এ রেমিটেন্স দিবে না।*

৮) প্রতিদিন সকল ভবনের উপর কালো পতাকা উত্তোলিত হবে।

৯) অন্য সকল স্থানের হরতাল রহিত কিন্তু অবস্থার বিবেচনায় পূর্ণাঙ্গ অথবা আংশিক হরতাল যেকোনো মুহূর্তে ঘোষণা হতে পারে।

১০) প্রত্যেক ইউনিয়ন, মহল্লা, থানা, উপজেলা এবং জেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হবে।

কর্মসূচি ঘোষণায়, শেখ মুজিব বলেন পরিবহন সেবা চলার অনুমতি থাকবে। এ প্রসঙ্গে তিনি রেলপথ, রিক্সা এবং পরিবনের কথা উল্লেখ্য করেন। তিনি বলেন ব্যাংকগুলো দুই ঘণ্টা খোলা থাকতে পারবে লেনদেনের জন্য ও বেতন প্রদানের জন্য কিন্তু একটি পয়সাও পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠাতে পারবে না। কারখানা মালিকেরা অবশ্যই তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবে।
শেখ মুজিব রেডিও, টেলিভিশন এবং পত্রিকা বিশ্বাসযোগ্যতার সাথে কর্মসূচি ও আন্দোলনের প্রতিবেদন করতে বলেন। “যদি আমাদের খবর প্রকাশ না হয়, বাঙ্গালিদের তাদের কাজে যোগ দেবে না।”

জয়স্বাধীনবাংলা
ফরওয়ার্ডস্টুডেন্টসব্লকেরডাক
আপোসেরচোরাবালিতেবাংলারএস্বাধীনতারউদিতসূর্যযেন
মেঘাচ্ছন্ন না হয়

সংগ্রামী বন্ধুগণ ,
সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে – ঘরে ঘরে আজ স্বাধীন বাংলার পতাকা । দুই যুগ ধরে যারা বাঙলার রাজনৈতিক , সামাজিক আর অর্থনৈতিক ঐতিহ্যের চিহ্নটুকু নিশ্চিহ্ন করার জন্য স্বৈরাচারের নির্মম , হিংস্র নখরের ধাবা এ বাঙলার মাটিতে চালিয়েছিল – জাগ্রত বীর বাঙালীর রুদ্ররোষের মুখে আর কালের অবধারিত বিচারে বাঙলার মাটি থেকে উৎখাত হয়ে আজ তারা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবার পথে ।

সংগ্রামী সাথী ভাইবোনেরা ,
স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এ দুর্যয় সংগ্রামকে খতম করার নিমিত্তে শোষক চক্রের কারসাজির জাল বিস্তার সবিশেষলক্ষণীয়।মুক্তিপাগলবাঙালিরাশোষকদেরদুএকটিকারসাজিরমুখোশইতিমধ্যেইআঁচকরতেসক্ষমহয়েছে।

বাঙলারজনপদআজবাঙলারবীরমুক্তিফৌজদেররক্তেরঞ্জিত। বিদেশী সেনাদের পদচারণা বাঙলার মাটি আজও অপবিত্র ও কলঙ্কিত ।

এরই পটভুমিতে সে রক্তশোষকদের রুদ্ররোষের দাবানলের বহ্নিশিখা সাময়িক ক্ষীণতর হয়ে এ বাঙলার মানুষের নজ্য কুম্ভীরাশ্রু করা আরম্ভ করেছে ।

মুক্তিকামী জাগ্রত ভাইবোনেরা,
ইয়াহিয়া – ভুট্টো – কাইয়ুম চক্র আজ আপোসের চোরাবালি সৃষ্টি করতে যাচ্ছে । প্রসাদচক্রের এ বিস্তারিত জালের পতন অবশ্যম্ভাবী কিন্তু আজ আমাদের সর্বাগ্রে আপোসের সে জালে পদচারণা থেকে বিরত থাকার শপথ নিতে হবে ।

সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নিপীড়িত বাঙালী যদি পশ্চিমাদের সে আপোসের চোরাবালিতে পদচারণা করে তাহলে যুগের নির্ধারিত স্থানে আর ইতিহাসের অবধারিত কলঙ্কিত অধ্যায়েই বাঙালীদের স্থান হবে । আজকের এ স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কদের এ শিক্ষা গ্রহন করা উচিত হবে , নচেৎ তাদেরকেও পলাশীর বিশ্বাসঘাতকদের দলেই ইতিহাসের রূড় বাস্তব চিহ্নিত করে রাখবে ।

পরিশেষে বাংলার সাড়ে সাত কোটি জাগ্রত স্বাধীনতাকামী ভাইবোনদের নিকট আমাদের আকুল আবেদন , টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত বাংলার ঘরে ঘরে মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার যে দুর্জয় প্রতিজ্ঞা গর্জে উঠেছে তাকে যেকোন মূল্যে বাঁচিয়ে রেখে “ স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাঙলা দেশ “ গঠন করতে হবেই । এরই প্রেক্ষিতে সর্বস্তরে ‘বাঙলা যুক্তিফ্রন্ট ‘ ( Bengal Liberation Front ) গঠনকরুন , গ্রামে – গ্রামে , নগরে – নগরে , মুক্তি ফৌজ গড়ে তুলুন আর স্বাধীনতা সংগ্রামকে সঠিক গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলুন । জয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী ।

জয় স্বাধীন বাঙলাঃ

বিনীত-

মোঃ লুতফর রহমান
সভাপতি

সৈয়দ ওয়াজেদুল করিম
সাধারণ সম্পাদক