You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.12 | ২৭ আষাঢ়, ১৩৭৮ সোমবার, ১২ জুলাই ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২৭ আষাঢ়, ১৩৭৮ সোমবার, ১২ জুলাই ১৯৭১       

বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের নেতা পিটার কারগিলের পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থা, জনমনে আতঙ্ক ও দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে মর্মে এক প্রতিবেদনে  উল্লেখ করে। প্রতিবেদনটি ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে বিলি করা হয়। দি সানডেটাইমস পত্রিকা এদিন তা ফাঁস করে দেয়। সানডে টাইমস-এর হেনরী ব্রান্ডন সংবাদে উল্লেখ করেন যে, বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে পূর্ব বাংলার গণহত্যা ও পাক সামরিক বাহিনীর ৭০ হাজার সদস্যের অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃত বিবরণের উল্লেখ ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এ দিন কয়েকটি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান সংযোজন করেন পরিচালক জনাব শামসুল হুদা চৌধুরী। তন্মধ্যে জল্লাদের দরবার, দৃষ্টিপাত, ইসলামের দৃষ্টিতে, রাজনৈতিক মঞ্চ ও পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে বিশেষ পর্যালোচনা উল্লেখযোগ্য। এসব অনুষ্ঠানে যারা নিয়মিতি অংশ নিয়েছেন, তারা হলেন সর্বজনাব অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, ডঃ মাযহারুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল হাফিজ, সাংবাদিক রণেশ দাশগুপ্ত, আব্দুল গফফার চৌধুরী, ফয়েজ আহমেদ, সাদেকীন, আমির হোসেন, গাজীউল হক সাংবাদিক সলিমুল্লাহ, কবি মাহবুব তালুকদার, সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী, মাহমুদুল্লাহ, সৈয়দ বদরুল হাসান, মোহাম্মদ মুসা, নাসিম চৌধুরী প্রমুখ। উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বাঙালীদের মনে উদ্দীপনা শক্তি সৃষ্টি করে সংগ্রামী চেতনা অক্ষণ্ন রাখে। 

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী জগজীবন রাম এদিন লোকসভায় বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের পূর্ন সমর্থন ও সহানুভূতি রয়েছে। (সংবাদপত্র)

  পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো তেহরান থেকে আকস্মিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তেহরান থেকে কাবুল রওনা হবার কথা ছিল।

  জামতে ইসলামী আমীর মওলানা আবুল আলা মওদুদী এক বিবৃতিতে ভূট্ট কর্তৃক পাকিস্তান সরকারকে শেখ মুজিবর রহমান ও আওয়ামী লীগের সাথে আপোস মীমাংসার পরামর্শকে ‘রাজনৈতিক হঠকারিতা ও দূরভিসন্ধিমূলক’ বলে অভিহিত করেন। (সংবাদপত্র)

  কনভেশন মুসলিম লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ন স্বাভাবিক তবে ভারতের দালালরা সেখানে সক্রিয় রয়েছে। এদের হুমকি মোকাবিলা করার জন্য দেশপ্রেমিক নাগরিক আজ ঐক্যবদ্ধ। (সংবাদপত্র)

 আওয়ামী লীগের কয়েকজন খুলনা, যশোর থেকে নির্বাচিত এমএনএ এবং এম পি এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে (৪৫ প্রিন্সেস ষ্ট্রীট) এসে মন্ত্রী এ. এইচ. কামরুজ্জামানকে বললেন, তাজউদ্দিন সাহেব কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হলেন। আপনি নিখিল পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ক্ষণিকের জন্য শান্ত থেকে মন্ত্রী কামরুজ্জামান বললেন, ‘দেশ, বাড়ি-ঘর, স্ত্রী-পুত্র, আত্মীয়-স্বজন, সহায়- সম্পত্তি সব ফেলে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসেছেন, কিন্তু চরিত্রটা ফেলে আস্তে পারেননি? দেশ স্বাধীন করুন, তারপর দেশে ফিরে গিয়ে যত পারেন দলাদলি করবেন’। উল্লেখ্য, এ সময়ে ক’জন এম এন এ/ এম পি এ পাকপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে ফিরে যান। কেউবা

সমঝোতার প্রশ্নে কনফেডারেশন প্রশ্ন উত্থাপনের কথা আলোচনা করতে শোনা যায়। অনেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনকে ‘জেনারেল তাউ’ বলতে শোনা যায়। যাহোক ইতিহাস নিজস্ব গতিপথে এগিয়ে যায়। (লেখক)

-মার্কিন সাময়িকী ‘নিউজ উইক’ (জুলাই ১২) এ বলা হয়ঃ পাকিস্তান যেদিন বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য সৈন্য পাঠায় সেদিনই পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী