You dont have javascript enabled! Please enable it! 15.04.1971 | ১ বৈশাখ ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১ বৈশাখ ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ১৫ এপ্রিল ১৯৭১

–প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন গোপনে কলকাতার পাক ডেপুটি হাইকমিশনের প্রধান হোসেন আলীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করেন এবং কতিপয় সিদ্ধান্ত কথা অবগত করে।

–মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কুমিল্লার গঙ্গাসাগর পুনরুদ্ধার করে। ভৈরব সেতুর কাছে মেখিকান্দা উভয় দলের মধ্যে দিনব্যাপি প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। পাকবাহিনী এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর বিমান ও কামান হামলা চালায়।

–মুক্তিযোদ্ধাদের চুয়াডাঙ্গা থেকে সরে এসে মেহেরপুরে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। কয়েকদিন ধরে প্রতিরোধ যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী রাজশাহী ও ঠাকুরগাও শহরের অবস্থান ছেড়ে দেয়।

–ঢাকায় নাগরিক শান্তি কমিটির নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি রাখা হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর ও খাজনা পরিশোধ করার জন্য জনসাধারনের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।

–করাচীতে জুলফিকার আলী ভুট্টো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার ন্যায় সঙ্গত কারণেই আওয়ামীলীগকে বে-আইনী ঘোষণা করেছেন।

–কলকাতায় কীডষ্ট্রীটের রাজ্য সরকারের এম , এন, এ , হোষ্টেলে বাংলাদেশ গণ প্রতিনিধিদের অস্থায়ী আবাসন  ব্যবস্থা করা হয়। আ,স,ম আব্দুর রব, শাহাজাহান সিরাজ সহ ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

–ফনি মজুমদার , আব্দুররব সেরনিয়াবাত,সোহরাব হোসেন, সৈয়দ কামাল বখত, সালাউদ্দিন ইউসুফ, ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, মতিউর রহমান, খোন্দকার আব্দুল হাফিজ, মোঃ শহীদ আলী খান, সদস্যগণ কিডষ্টীট এম, এল ,এ হোষ্টেলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমীর প্রিন্সিপ্যাল ডি আইজি আব্দুল খালেক সপরিবারে এম, এল, এ হোষ্টেলে আশ্রয় নিয়েছেন।

–জনতা ও মুক্তিফৌজ তীব্র প্রতিরোধ সত্ত্বে রাজশাহী, ঠাকুরগাঁ পাক বাহিনীর হাতে পতন। ব্রাক্ষণবাড়িয়া, সিলেট ময়মনসিংহ ইত্যাদি স্থানে পাকিস্তানী বিমান বোমাবোর্ষণ করে। মুক্তিফৌজ তিতাসনদীর উপরে রেল সেতু উড়িয়ে দিয়েছে।

—দৈনিক পাক্সিতান সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা থেকে বলেনঃ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিন্দুস্তান গোড়া থেকে শত্রুভাবাপন্ন ছিল। এখন ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে চায়।

–পাকবাহিনী ভৈরব সেতুর অপর পারে এখনো যেতে পারেনি। আখাউড়া ষ্টেশন মুক্তিফৌজের দৃঢ় ঘাটি হয়ে উঠেছিল।

–পাকবাহিনী রাঙ্গামাটি পৌছে যায়। ত্রিদিবায় পাকবাহিনীকে এনেছিলেন।

–সিনেট সভায় পাকিস্তানকে সামরিক সরঞ্জাম ও সাহায্য বন্ধ রাখার জন্য সিনেটোর মণ্ডেল, সিনেটর কেস সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তাঁদের প্রস্তাবের সঙ্গে সিনেটর কেস সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন সব সেনেটর বাইহ, ম্যাকগগর্ন, মুস্কী,এবং সানবে ঐক্যমত প্রকাশ করেন।

–পাকিস্তান সরকার দৈনিক পূর্বদেশের প্রথমপাতায় করাচী বিমানবন্দরে বসা অবস্থায় বন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি প্রকাশ করে,২৫ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর সঠিক সংবাদ জনগণের জানা ছিলনা।

–পাকবাহিনী ঈশ্বরদি (পাবনা) বিহারীদের সহায়তায় ৩০/৫০ জন হিন্দুকে হত্যা করে। ঈশ্বরদি বাজার বিহারীরা লুট করে।

–বিপ্লবী বাংলাদেশে সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে জনাব আব্দুল মালেক উকিল এম, এন,এ পাকিস্তান ডেপুটি হাই কমিশনার সরকারের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশের প্রস্তাব ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন সঙ্গে নিভৃতস্থানে বৈঠকের পর সকল শ্রেনীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিপ্লবী বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

–রংপুর ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিনে দেওয়াভোগ গ্রামের ২২ জন কৃষক স্থানীত মসজিদে নামাজরত ১৫জন কে পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে।

–মেজর খালেদ মোশারফের বাহিনী আকুতোভয় মুক্তি সৈনিকরা গঙ্গাসাগর ও নিয়ামতবাদে ক্যাপ্টেন আইন উদ্দিন, ক্যাপ্টেন গাফফার এবং একজন সুবেদারের নেতৃত্ব

আলফা, চার্লি এবং ডেল্টা কোম্পানীটি আলীরবাড়ী আক্রমণ করে বিশজন পাকসেনা নিহত হয়।

–মেজর খালেদ মোশারফ বাহিনীর ভৈরববাজার , ব্রাক্ষণবাড়িয়া , বিবির বাজার প্রভৃতি এলাকার তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

–নববর্ষের ছুটি বাতিল করে সামরিক সরকার । খবরে বলা হয় বৃহস্পতিবার প্রাদেশিক সরকারের যে ছুটী ছিল, জরুরী অবস্থার দরুন টা বাতিল করা হয়েছে। উল্লখ ১৯৬৬ থেকে রমনা বটমুলে বাঙ্গালীরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে আসছে।

–মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহীনির কাছ থেকে কুমিল্লার গঙ্গাসাগর পুনরুদ্ধার করে।

–ভৈরব সেতুর কাছে মেথিকান্দায় উভয় দলের মধ্যে দিনব্যাপী প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়।পাকবাহিনী এখানে মুক্তিযোদ্ধার ওপর বিমান ও কামান হামলা চালায়।

–মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গা থেকে সরে এসে মেহেরপুরে নতুন প্রতিরক্ষা  বহ্যু গড়ে তোলে । কয়েকদিন ধরে প্রতিরোধ যুদ্ধের পর।

–মুক্তিবাহিনী রাজশাহীও ঠাকুরগাও শহরের অবস্থা  ছেড়ে দেয়।

–ঢাকায় নাগরিক শান্তি কমিটির নাম পরিবর্তন করে পূর্বপাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি রাখা হয় । সামরিক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর ও খাজনা পরিশোধ করার জনসাধারণের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।

–করাচীতে জুলফিকার আলী ভুট্টো এক সংবাদ সম্মলনে বলেন,সরকার ন্যায় সঙ্গত কারণেই আওয়ামী লীগকে বেআইনী ঘোষণা করেছেন।

-সংবাদ সংস্থা এ এফ পি খবর দেয়ঃ ঢাকা এখন মৃতপুরী। রাস্তায় খুবই কম কম লোক দেখা যায়। অনেক লোক শহর ছেড়ে গেছেন । ঢাকা থেকে পালাতে চাচ্ছেন তাঁদের বাধা দেয়া হচ্ছে, সৈন্যরা ঘরে ঘরে তল্লাশি চালচ্ছে। তরুণদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্যের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করছে ।

–নিউজল্যণ্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মিঃ মার্শাল এক বার্তায় বলেন, আমরা আশাকরি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান গৃহযুদ্ধে অবসানের ব্যবস্থা করবেন।

–ফরিদ আহমদ ও নুরজ্জামানের নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটির দলছুট অংশটি ১৫ এপ্রিল তারিখে বৈঠকে মিলিত হয়ে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি ও কল্যাণ ইউনিট গঠন করে সারা পূর্ব পাকিস্তানে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সভায়  স্টিয়ারিং বডির পূর্ব।

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী