৩০ চৈত্র ১৩৭৭ মঙ্গলবার ১৩ এপ্রিল ১৯৭১
–চৈনিক প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাই বলেন, বাহিঃ আক্রমণ থেকে পাকিস্তান অখণ্ডরতা রক্ষার জন্য গণচীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশ মুষ্টিমেয় লোক গেরিলা যুদ্ধ চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে । (সংবাদপত্র)
–বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকার জনগণের প্রতি নয়টি নির্দেশ নামা জারী করেছে। ১। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার সুযোগ নিন। ২। মুক্তিসংগ্রামের বিশ্বাসঘাতকদের খতম করুন শাস্তিদিন । ৩। আওয়ামী লীগ স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ জেনে নিন। ৪। নিকটতম মুক্তিফৌজ দপ্তরে তরুণরা যোগ দিন। ৫। সমস্ত খবরা খবর সকলকে জানিয়ে রাখুক। ৬। মুক্ত অঞ্চলে সরকারী কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় দপ্তর থেকে নির্দেশ নিন। ৭। রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত নির্দেশ উপেক্ষা করুন। ৮। মুক্তিফৌজ কম্যাণ্ডের নির্দেশ অসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত নিয়ম মেনে চলুন। ৯। সন্দেহভাজন লোক সম্বন্ধে নিকটতম মুক্তিফৌজ কেন্দ্রে খবর দিন।
–ঢাকার বাবুরহাট থেকে জিনারদী , মাঝখানে পাঁচদোনা গ্রাম মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। পাকবাহিনী নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ( ৬ খঃ পৃঃ৩৭)
–জনতার প্রতিরোধ ভেদ করে নরসিংদি , চন্দ্রঘোনা পাক বাহিনীর হাতে পতন ঘটে । রেলগাড়ী নরসিংদি পর্যন্ত আসা যাওয়া করতে শুরু করে।
–চুয়াডাঙ্গার মন্ত্রীসভার আনুষ্ঠিক শপথ গ্রহণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পাকবাহিনী বিমান বহর চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইপি আর দপ্তর সম্পূর্ণ বিধস্ত করে দিয়েছে ২ এপ্রিল। আগারতলার আলোচ্য মন্ত্রসভার শপথ গ্রহণের স্থান নির্ণয় হল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলা। উল্লেখ্য , বিদেশের পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গায় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্য্যলয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মর্মে সংবাদ ফাঁস হয়ে যায়।
–পাকসেনারা রাজশাহীর সারদার পতন ঘটায়। সৈন্যরা পিটিসিতে ঢুকে আশ্রিত লোকদের একত্রিত করে বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়ে প্রায় দেড় হাজার বাঙ্গালীকে হত্যা করে।
–সিলেটের পুরানলেনস্থ জ্ঞানচন্দ্রের বাড়ি পাকবাহিনীর আক্রমণ শিকার হলে পরিবারের সকলেই নৃশংশভাবে নিহত হয়। স্থানীয় দালালরা পাক বাহিনীকে পথ দেখিয়ে এনেছিল।
–পাকবাহিনী কালিগঞ্জের ( যশোর)পতন ঘটায়।
–ঢাকায় খাজা খায়ের উদ্দিন ও জামাত নেতা গোলাম আজম জোহারের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে শান্তিকমিটির মিছিল বের করে। পাকবাহিনীর সাফল্যের জন্য মোনাজাত পরিচালনা করে জামাতের আমীর গোলাম আজম। তিনি ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমনদের মোকাবিলা করতে জেহাদের জিগির দেন। (দৈঃ পাঃ / পৃঃ দেঃ)
–চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে পাক বাহিনীর রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) দখল করে ও রাঙ্গুনিয়া কলেজে শিবির স্থাপন করে। পাকবাহিনী আশেপাশে তাঁদের গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রাহে। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ডাঃ মোঃ ইদ্রিস মিয়া চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
–পাকবাহিনী মির্জাপুর (টাংগাইল) হাসপাতাল সংলগ্ন গ্রামের বর্বর হত্যালীলা চালায়। ৭২ জন পুরুষ (সাহা পরিবার) নিহত। বহু নারীরা শ্লীলতাহানি ঘটে এবং ১ মণ সোনা লুট করে সাহাপাড়ার ৫শত ভস্মীভূত হয় । শান্তিকমিটির মওলানা আব্দুল ওদুদ ও তাঁর দুই পুত্র মাহবুব (২) মান্না (১৮) কাফের নিধনের নামে প্রকাশ্যে নিরিহ হিন্দুদের হত্যা করে ।
–এদিন (১৩ এপ্রিল) শান্তি কমিটির ঢাকায় সমাবেশ এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু নিধন ও ভাংচুরের মাধ্যমে তাঁদের কাজ শুরু করে। ৫ নং মগবাজার হ’ল শান্তিকমিটি কেন্দ্রীয় অফিস। (উল্লেখ্য,১৯৭৬ সালের পর থেকে ৫ নং এলিফ্যান্টলেন, মগবাজার জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় দপ্তর হিসেবে ব্যবহ্যত হচ্ছে)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী