৩১ আষাঢ়, ১৩৭৮ শুক্রবার, ১৬ জুলাই ১৯৭১
-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল বারী ও ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডঃ আমিরুল ইসলামকে যথাক্রমএ ঢাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উপচার্য নিযুক্ত করা হয়।
-মুন্সিগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির সদস্য খলিলুদ্দিন শিকাদার এদিন গেরিলা হামলায় নিহত হন। (সংগ্রহ)
-মার্কিনী সাপ্তাহিক নিউজ উইকে বলা হয়েছে, পাঁচ ডিভিশনের মধ্যে এখন পূর্ব বাংলায় মাত্র আড়াই ডিভিশন আছে বাকি জখমি ও নিহত। নিয়াজী, টিক্কা খাঁ আরো দু ডিভিশন সৈন্য চেয়ে পাঠিয়েছে।
-পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম রাজশাহীতে বলেন, পাকিস্তানের সংহতি রক্ষা করার জন্যই কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী নির্মূল করার জন্য এখন দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে একত্রিত হতে হবে।
-ফরমোজার জাতীয়তাবাদী সরকার (তাইওয়ান) মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। (কেসি এ, পি-২৪৭৬৫)
-জামাতে ইসলামীর মিয়া তোফায়েল আহমদ কুষ্টিয়ায় পীস কমিটির বক্তৃতায় বলেছেন, মুজিব ক্ষমতা নিতে অস্বীকার করার আজ পূর্ব বাংলার এ দূর্গতি। (সংবাদপত্র)
-ফিলিপাইনের পত্রিকা ‘ম্যানিলা ক্রোনিকেল’ পাকিস্তানে মার্কিন সরকারের অস্ত্র সরবরাহে তীব্র সমালোচনা করা হয়।
-কলকাতায় মেজর জিয়ার সাথে ন্যাপ নেতা মশিউর রহমানের (যাদু মিয়া) যোগাযোগ ঘটে এবং তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। (সংগ্রহ)
আখতারুজ্জামান মন্ডল লিখেছেন, ন্যাপ (ভাসানী) নেতা ও রংপুরে মশিউর রহমান যাদু মিঞা মে মাসের শেষে শিতাই সীমন্ত দিয়ে ভারত প্রবেশ করে প্রথমে কচুবিহার ও জলপাইগুড়িতে অবস্থান করে কোলকাতা চলে যান। তিনি ভারতে অবস্থানরত মৌলান্য আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করে, কিন্তু মৌলানা ভাসানী যাদু মিয়াকে সাক্ষাৎ দিলেন না। (১৯৭১ উত্তর রণাঙ্গণে বিজয় পৃঃ ৯০)
বরিশালের শান্তি কমিটি স্বাধীনতা বিরোধিদের দমন করার আহ্বান জানায় ব্যারিষ্টার আখতারউদ্দিন আহম্মদ, এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বিশ্বাস। উল্লেখ্য, এসময় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট আদেলউদ্দিন আহমদ, কাজী খলিলুর রহমান দলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন।
আওয়ামী লীগ মুখপত্র “জয়বাংলা” পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে ৫ ও ৬ তারিখে মুজিবনগরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের অধিবেশন সম্বন্ধে আশাবাদ প্রকাশ করা হয় যে, “ এই বৈঠক বাংলাদেশের মানুষ ও মুক্তিবাহিনীর মনোবল দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের মানুষ জেনেছে তাদে গণ প্রতিনিধিরা রমনায় দশ লক্ষাধিক জনতার সামনে ৩রা জানুয়ারি ’৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে যে শপথ গ্রহণ করেছিল সে শপথ তারা ভঙ্গ করেনি বরং অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। ” (৪ খঃ পৃঃ ৫৫৪)
-বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণদান কালে ঘোষণা করেন, সামরিক বিজয়ই বাংলাদেশ সমস্যার একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় দেশকে শত্রুমুক্ত করা। বৈঠকে পরিষদ সদস্যরা বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার শপথ গ্রহণ করেন। বৈঠকে মুক্তিবাহিনীর নৌ ও বিমান শাখা গঠনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরিষদ সদস্য উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের বীর সন্তানেরা জয়লাভ করার জন্যই অস্ত্র ধারণ করেছে। জয় আমাদের হবেই।’
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী