১১ বৈশাখ ১৩৭৮ রোববার ২৫ এপ্রিল ১৯৭১
—সিলেট জেলার তেলিয়াপাড়া, মুকুন্দপুর, সালদা নদীর তীরে বীরত্বপূর্ণ মুক্তিফৌজের যুদ্ধ। মেজর সফিউল্লার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ মুক্তিফৌজ ক্যাপ্টেন মতিন সহ কতিপয় অকুতোভয় মুজাহিদের লড়াই ইতিহাসের এক গৌরবগাঁথা। মুক্তিফৌজের জয় বাংলা শ্লোগানে পাক বাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছিল উল্লেখ্য ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা থেকে তেলিয়াপাড়ার যুদ্ধ পরিচালিত হয়।
-পাকবাহিনীর হাতে আজ মাদারীপুরের পতন ঘটে। প্রতিরোধকারী মুক্তিযোদ্ধারা নৌপথে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গৌরনদীতে প্রতিরোধে শহীদ হলেন জহিরউদ্দীন মোল্লা সহ চারজন মুক্তিযোদ্ধা (৯খ: পূ: ৫৩২)
—পাকবাহিনী অতর্কিতে চড়িয়া মধ্যপাড়া (পাবনা) গ্রাম আক্রমণ করে এবং ৫৬ জনকে লাইন করে গুলি চালিযে হত্যা করে। গ্রামের দেড়শ বাড়ি জ্বলিয়ে ভস্মীভূত করে। তারপর অত্যাচার উল্লাপাড়ার থানার বিভিন্ন এলাকায় নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে যায়। মাঝ দিয়া গ্রামের চারশ জনের বেশী নিরীহ লোককে হৃদয়হীনভাবে হত্যা করে। জবাই করে হত্যা করে ১১৫ জনকে। বিহারীরা সমস্ত গ্রামই লাশ হয়ে যায় বহু নারী নারীত্বে চরম অবমাননার গ্রানী বহন করতে হয়।
–আজ সকালে তিনদিক থেকে (মূলাদি –লুকনা –ফরিপুর) পাকবাহিনী ব্যাপক শেলিং করতে থাকে। ৪ টি জেট অনবরত বোমা বর্ষণ করে। ৬ টি হেলকপ্টার থেকে ছাত্রী সেনা নামতে থাকে বরিশালে
–আওয়ামীলীগ এম এন এ সর্বজনাব নূরুল ইসলাম মঞ্জু ও মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ধীণ মুক্তি যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের সত্ত্বে ও বরিশাল পাক বাহিনীর হাতে পতন ঘটে।
–পাকবাহিনীর হাতে করেরহাটের পতন ঘটে। তারপর তিন দিক থেকে রামগড় অভুমূখে অগ্রসর হয়। করেরহাট রামগড় সড়কে একদল, নারায়ণহাট –হিয়াকু –রামগড় পথে দ্বিতীয় দল এবং মহালছড়ি –রামগড় সড়ক ধরে তৃতীয় দলের পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। (৯ খঃ পৃঃ ১১১)
-শেরপুরে মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আজিজ। তিনি শেরপুর যুদ্ধে আহত হলে তাকে কালীঘাট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই দিনেই শেরপুর সেক্টরের পাকবাহিনীর হাতে পতন হয়। (১৫খঃ পৃ ৩৩৩)
সামরিক কর্তৃপক্ষ খ অঞ্চলকে (বাংলাদেশ)তিনটি সামরিক সেক্টরে ও ১০ টি সাবসেক্টরে ভাগ করেন। সেক্টর তিনটি হচ্ছে ঢাকা , কুমিল্লা , ও বগুড়া।
–সিলেটের গোলাপগঞ্জ, যশোরের সোসিলা ও দিনাজপুর –রাধিকাপুর সীমান্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে সং ঘর্ষ হয়। প্রচণ্ড লড়াই শেষে বরিশাল শহর কব্জা করে । তুমুল যুদ্ধে মধ্যে করেরহাট প্রতিরক্ষা ব্যুহের পতন হলে মুক্তিবাহিনী রামগড়ে গিয়ে সদর দপ্তর স্থাপন করে।
–প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূত হিসাবে সাবেক পররাষ্টড়মন্ত্রী মিয়া আরশাদ হোসেন মস্কো যাত্রা করেন
–দশজন মার্কিন সেনেটর ওয়াল্টার মল্ডেল, এডওয়ার্ড মাস্কি, হিউবাট হামপ্রে বার্চ বে, জর্জ ম্যাকগভার্ন , ফ্রেড হ্যারিস, হ্যারল্ড হিউস, উইলিয়াম প্রক্সমায়ার, টমাস এগ্রেটন ও ক্লি ফোর্ড কেস এক যুক্তি বিবৃতিতে বলেন পাকিস্তান সরকার যতদিন না বাংলাদেশের জন্য আপৎকালীন ভিত্তিতে ত্রাণ কাজের ব্যবস্থা করবে এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস্কে সেখানে কাজ করতে দেবে , ততদিন পাকিস্তানকে সাহায্য দাতা পাশ্চাত্য দেশসমূহ ও জাতি সংঘের উচিত তাঁদের সমস্ত বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়া।
–২৫ শে এপ্রিল কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় , কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির মিশন সফল করার উদ্দেশ্যে জেলা ও মহকুমা সদের শান্তি কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিদল পাঠানো হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে যদি কোন জেলা বা মহ কুমায় দেশ প্রেমিক লোকদের উদ্যোগে শান্তি কমিটি গঠিত হয় থাকে তবে সে সব কমিটির নাম অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কতৃপক্ষের কাছে অনুমোদিত ইউনিট সম্পর্কে রিপোর্ট দেবেন। শহরে পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় শান্তি স্কোয়াড যাতায়াত করেছেন মাথায় সাদা বা লাল পট্টি বাধা শান্তি কমিটির এই শান্তি স্কোয়াড সদস্যরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে বাঙ্গালী হত্যা করে, তাঁদের লুটতরাজ করে অগ্নি সংযোগ করে। বাঙ্গালী বিশেষতঃতরুণ ও যুবকদের দেখা মাত্র পিটিয়ে বেয়নেট চার্জ করে গুলি করে হত্যা করে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাঙালীদের বাড়িঘরে পেট্টোলে ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সে সময় পর্যন্ত ঢাকা শহরে আটকে পড়া বাঙ্গালী মাত্রই এই স্কোয়ায়ডের অত্যাচার সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নেতৃত্ব বৃন্দ জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে সারা বাংলাদেশ সাংগঠিন সফর করেন। ইতিমধ্যে অধিকাংশ এলাকায় শান্তি কমিটি লিয়াজো অফিসগুলো ছিল ঢাকা শহরের শান্তি কমিটির মূল ঘাঁটি। লিয়াজো অফিসারদের তাঁদের নিজ নিজ এলাকার রাজাকারদের ওপর পুর্ণ কর্তৃতব ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতা মনা বাঙ্গালীদেরকে চিহ্নিত করে ক্যান্টনমেন্টে পাক বাহিনীর কাছে তাঁদের নামের তালিকা পৌঁছে দেওয়া ছিল লিয়াজো অফিসারগুলো মূল কাজ। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় কোন মুক্তিযোদ্ধার থাকা সম্ভব ছিলনা।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী