৩ ভাদ্র, ১৩৭৮ শুক্রবার, ২০ আগষ্ট ১৯৭১
এদিন হেলসিংকি থেকে ‘বিশ্বশান্তি সংস্থা’ পাকিস্তান সরকারের কাছে শেখ মুজিবের গোপন বিচার বন্ধ করে মুক্তি দেবার আবেদন জানান।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালীদের দ্বারা গঠিত সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠন ছিল বৃটেনের অ্যাকশন কমিটি। এদিন এর কনভেশন সাবকমিটির একটা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় কনভেনয়
নিযুক্ত হন আজিজুল হক ভূঁইয়া। এর লক্ষ্য ছিল প্রবাসীদের সংগঠিত করা হয় এবং কিভাবে কাজ পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ।
গেরিলা অপারেশনঃ
কুমিল্লার এক মাইল উত্তরে আজ এক অ্যামবুশে পাকিস্তানী টহলদার বাহিনীর ১১ জন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পলায়নপর শত্রুসেনাদের কাছ থেকে একটা মেশিনগান এবং কয়েকটা রাইফেল উদ্ধার করে। নরসিংদীতে তিতাস গ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ লাইন ধ্বংস, লাটু-বড়লেখায় রাজাকারদের ওপর আক্রমণ, তালুখালের বাঁধের আংশিক ক্ষতিসাধন-ফলে ২০/২৪ মাইল এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রাজশাহী দূর্গাপুর পুলিশ ষ্টেশন হামলা, নিহত ১১। শ্যামনগর ওয়াপদা কলোনীতে পাকিস্তানী অবস্থানে ওপর ক্যাপ্টন হুদা, লেঃ বেগ ও সুবেদার আবদুল হকে নেতৃত্বে দেড়শ’ মুক্তিযোদ্ধার আক্রমণ। এতে মুক্তিবাহিনী সুবেদার ইসিয়াসসহ ৭ জন শহীদ হন। শত্রুপক্ষে নিহত ৪ জন। ধরা পড়ে ৪ জন। বাকিরা পালিয়ে গেলে এখানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের কুড়িগ্রামে ৩ জন শত্রুসেনা নিহত, নাগেশ্বরী সেতু ধ্বংস, বেলবাড়ি ৯ জন আহত। ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টরের বৈজীপুরে ৫ জন, রায়গ্রামে ১ জন, কমাল্পুরে ১ জন, হালুয়াঘাত-তেলিয়াখালিতে টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন খালিঘাটে শত্রুসেনা নিহত হয়।
ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরের ছাগলনাইয়া-শুভপুরে সেনাবাহিনী পাকিস্তানী যান ধ্বংস ছয়ঘরিয়ায় সেনাবাহিনীর অন্য যানে গ্রেনেড নিক্ষেপ, রাঙামাটি অ্যামবুশে ১১ শত্রুসেনা নিহত, কানাশতলায় ২ জন সেনা নিহত এবং সোনাগাজিতে তিনটি সেনা ভর্তি গাড়ি মাইনের বিস্ফোরণে ১৫ জন শত্রুসেনা খতম হয়।
এ দিন পাক সামরিক সরকার ২৯ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠনসহ দেশদ্রোহীতার অভিযোগ আনায়ন করে। অভিযুক্তরা হলে সর্বজনাব আবদুল মোমিন, আবদুল হামিদ, আবদুল হাকিম, জিল্লুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোঃ হুমায়ুন খালিদ, শামসুর রহমান খান, তাহের উদ্দীন ঠাকুর, আলী আযম, আব্দুস সামাদ, মোঃ আব্দুর রব, মুস্তফা আলী, এ.কে. লতিফুর রহমান চৌধুরী (মানিক), দেওয়ান ফরিদ গাজী, মোহাম্মদ ইলিয়াস, ফজলুর রহমান, এ.কে. এম শামসুজ্জোহা, আবদুল করিম বেপারী, আব্দুর রাজ্জাক, শামসুক হক, কে এম ওবায়দুর রহমান, মোল্লা জালালউদ্দিন, এম.এ. গফুর শেখ আবদুল আজিজ, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, আবদুল মান্নান হাওলাদার, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং এনায়েত হোসেন প্রমুখ।
The gravity of the refugee problem was greatly increased in August by floods, said to be the worst for over century, caused by heavy monsoon rain. Many of the refugee camps in West Bengal were flooded and the breakdown in communications virtually stopped food and other supplies from reaching them. উল্লেখ্য অবরুদ্ধ বাংলাদেশে বন্যা পীড়িতদের অবস্থা তথা-সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে কিসিং আর কাইভস লিখেছেনঃ
“The civil war, following the cyclone disaster of November 1970, created the danger of a major famine in East Pakistan.
The situation as rendered worse by floods which, it was reported on Sept. 9 had affected nine of the 19 districts of the province and caused 110 deaths and damage to houses, crops and cattle estimated at 41.100.100” (KCA, P. 24990)
৯ নং সেক্টরে মেজর জলিল ও মাসে ক’কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করেন। এদিন শ্যামনগর ওয়াপদা কলোনীর পাকিস্তানী সেনাদের অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায়। প্রায় দেড়’শ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হুদা, লেঃ বেগ এবং ইপিয়ার-এর সুবেদার আবদুল হকের নেতৃত্ব শত্রুর ব্যুহের মধ্যে আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষে সুবেদার ইলিয়াস এবং ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়। ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শত্রু সেনাদের হাতে বন্দী হয়। শত্রুপক্ষে নিহত হয় ৪ জন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৪ জন আহত পাকসেনা বন্দী হয়। পাকসেনারা শ্যামনগরে পালিয়ে যায়। মুক্ত শ্যামনগরে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। উল্লেখ্য, এ মাসে ২৩টি যুব ট্রেনিং শিবির থেকে দশহাজার যুবক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন। এ সব উচ্চত্র ট্রেনিং ক্যাম্পের অবস্থান ছিল- বারাকপুর, বোতল, চাপড়া, পিফা, জামশেরপুর, গৌর বাগান, পতিরাম, ধান সারীগাও, গকুলনগর, তাপুর হাট, চরিলাম, কাঠালিয়াচরা মেনু, বাগিচা কল্যাণগড়, হাসন লাবু সলিন, ক্লোভার হাউজ, ডালু ও পরিমল। ডালুকেন্দ্রটি ছিল সম্পূর্ণভাবে ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ ক্ষমতা ছিল ৩০০০ জনের। গেরিলা কর্মতৎপরতা সম্বন্ধে কে সিএ লিখেছেনঃ
“Guerrilla activities in East Pakistan by the Mukti Bahini (Liberation Army), previously known as the Mukti Fouj, were greatly intensified from August onward, The nucleus of the guerrilla forces consisted of soldiers of the East Bengal Regiment and the East Pakistan rifles, which had reportedly rallied to the separatist cause in March virtually in a body, and all secotr commanders and most of their sub-ordinates were reported to be former officers of the Pakistan Army. Volunteers were also enrolled, especially for sabotage operations, from students and high school pupils, including boys in their early teens, who received two month training in the border sanctuaries controlled by the Mukti Bahini, whilst guerrilla groups organized by the left-wing National Awami party and the Communist party of Bangladesh operated in the interior of East Pakistan independently of the Mukti Bahini.” (K.CA, P-24989)
অবরুদ্ধ ঢাকা নগরী অবস্থা সম্বন্ধে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দিন লিখেছেন, ‘আল্লাহর আইন এবং কম্যুনিষ্ট আইন একঃ জলুম যত বৃদ্ধি পায় যুক্তিও তত তাড়াতাড়ি আসে। আ’লা ইয়াজিফু জাল্মনা ইল্লা খাসারা।’ (আত্মস্মৃতি, পৃঃ২৮৬)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী