২৫ শ্রাবণ, ১৩৭৮ বুধবার, ১১ আগষ্ট ১৯৭১
-এ দিনের মুক্তিযুদ্ধের ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরঃ
নয়নপুর রেলষ্টেশনে ২৩, হরিমঙ্গলে ২০, মধুপুরে ৪ ট্রুপ, কামাল্পুরে ৩ ট্রুপ, কটেশ্বরে ৩ ট্রুপ, কসবায় ৬ জন, ঢাকার সঙ্গীত কলেজে ২ ট্রুপ পাকসেনা নিহত হয়। আহতের সংখ্যা প্রচুর। এছাড়া গোমতী নদী, ঢাকা-নরসিংদী, কসবা, ঘোড়াশালে দালাল গ্রেফতার, ব্রিজ ধ্বংস, টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়।
-ময়মনসিংহ- সিলেট – মৌলভীবাজার সেক্টরঃ সুরমা নদীতে ২ জন, কানাইয়েরঘাটে ৩ জন পাকসেনা হত্যা ও ব্রিজ ধ্বংস করা হয়।
কুষ্টিয়া- যশোর, খুলনা সেক্টরঃ চিন্দ্রাবাসে ৫ জন রাজাকার গ্রেফতার, জগন্নাথপুরে ৩ ট্রুপ সালতাননগরে ৫ জন রাজাকার বা শত্রুসেনা খতম।
রাজশাহী-দিনাজপুর-রংপুর সেক্টোরঃ পানিমাঙ্গে ৮ জন হত্যা
৮ নম্বর সেক্টরের কপতাক্ষ নদীতে ১১ ট্রুপ, ছুটপুরে ৯ জন হত্যা। হিজলীতে মুক্তিবাহিনীর ২ বাক্সগুলি উদ্ধার, কাকদডাঙ্গায় ৬ জন শত্রুহত্যা, আহত ৩ জন, হাতেমগঞ্জে আগুন, ৩০০ গজ টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন, ৫টি মাইন পোঁতা হয়। শাহবাজপুরের বরলেখায় আক্রমণ।
-এদিন ধলেশ্বরী নদীতে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ আই এস ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল সি- ৩ রংপুর যাওয়ার পথে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়।
ফজলুল কাদের চৌধুরী নেতৃত্বধীন কনভেনশন মুসলীম লীগ নেতারা মিলিত হন দলীয় নীতি নির্ধারণী বৈঠকে। এতে স্বাধীনতা সংগ্রামকারীদের হাট থেকে পাকিস্তানকে রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিয়ে আলোচনা করেন ফজলুল কাদের চৌধুরী, মালিক মোহাম্মদ কাসেম, শামসুল হুদা, মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ নেতারা। (সংগ্রাম)
-এদিন পিডিপি নেতা নূরুল আমিনের বাসায় পিডিপি নেতারা একত্রিত হয়ে ঠিক করেন তাদের কর্মপন্থা। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পিডিপি’র পশ্চিম পাকিস্তান নেতা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান, মিয়া গোলাম দস্তগীর, মোঃআরসাদ চৌধুরী রফিকুল হোসেনসহ আরো অনেকে। (আজাদ)
-ঢাকার ২৫ মাইল দূরে আড়াইখোলার কাছে রাজাকাররা ১ টি নৌকা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা বারুদসহ গ্রেফতার করেন ১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে। ঢাকায়ও কয়েকজনকে আটক করা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রচারপত্র এবং পোষ্টার বিলি করার জন্যে।
-এদিন ৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে সুবেদার মেজর এম এ মজিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ থানার কলাবাড়িতে হানাদার পাক সেনাদের বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক ও সফল আক্রমণ চালিয়ে কলাবাড়ি শত্রুমুক্ত করে। পাকসেনারা কনসার্টে পিছু হটে যায়।
-এ দিন দিল্লী থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সামরিক সরকারের সতর্ক করে বলেন যে, মুক্তি্যোদ্ধাদের হাতে যে সব পাকসেনারা বন্দী রয়েছে বঙ্গবন্ধু বিচারে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সাথে সাথে ঐসব বন্দীদের খতম করা হবে। তিনি বিশ্ব নেতৃত্ববৃন্দের কাছে আবেদন জানিয় বলেন যে, ইয়াহিয়া সরকার জন প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নয়। তারা কি করে জনগণের অবিসংবাদিত নেতার বিচার করবে। তিনি প্রশ্ন করেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে পাকিস্তান সরকার কোন আন্তর্জাতিক বিধিমতে বিচার করেছে। (সংবাদপত্র) এ প্রসঙ্গে KCA লিখেছেঃ When the trial opened on Ang.11 in Lyallpur (Pakistan) Sheikh Mujibur Presented a list of three lawyers whom he wished to engage in his defence, headed bye Mr. Allahbux Khan Brohi, a distinguished constitutional lawyer who had defended him at his previous trial in 1968.” (pp/24955)
-এদিন লন্ডনের হাইড পার্কে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধুর বিচারের প্রতিবাদ জানান হয়। সভাশেষে পিটার শোর, মাইকেল বার্নস, ব্রুস ডগলাস ম্যান, জন ষ্টোনহাউন ও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী শোভাযাত্রা করে ১০ নম্বর ডাউনিং ষ্ট্রীটে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের বাসভবনে স্মরকলিপি পেশ করেন। (প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি)
-এদিন ‘ফাইনান্সিয়াল টাইমস’ এ এক সংবাদ ‘ভারত-সোভিয়েত চুক্তিকে পাকিস্তান আক্রমণাত্মক চুক্তি বলে অভিহিত করে। পিপলস পার্টির নেতা জেড.এ.ভুট্টো এই চুক্তিকে গত মহাযুদ্ধের সময় হিটলারের সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরের সঙ্গে তুলনা করেন।
-জামায়ে ইসলামের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম এক বিবৃতিতে বলেন, তথাকথিত বংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকরা ইসলামের দুশমন। (সংগ্রাম)
-এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার শরণ সিং জাতিসংঘের মহাসচিব উ-ত্থান্টসহ যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ফ্রান্স ও যগোশ্লভিয়া প্রমুখ
২৪টি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছে শেখ মুজিবের জীবন রক্ষার আবেদন জানান। (দি টাইমস)
-এদিন ‘ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন’ পত্রিকার এক সংবাদ বলা হয়, জাতিসংঘের মহাসচিব উ-ত্থান্ট শেখ মুজিবের গোপন বিচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, পাকিস্তানের বাইরে এর প্রতিক্রিয়া অনুভূত হবে। বহু দেশের প্রতিনিধির ঐ ধরনের মনোভাবের সঙ্গে তিনিও একমত।’
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী