You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.06 | ২০ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শুক্রবার, ৬ আগষ্ট ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২০ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শুক্রবার, ৬ আগষ্ট ১৯৭১

-ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র মাসু, হাশেম ও সুবেদার মেজর জিয়াউল হকের নেতৃত্বে আজ বান্দরকাটা বর্ডার আউটপোষ্টে আক্রমণ চালানো হয়। এতে৩০ শত্রুসেনা ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কাজীপাড়া আক্রমণ করে ৩৮ জন জামাতীকে হত্যা করে মুক্তিবাহিনী আজ। জয়কালার অন্য হামলায় হৃত ১ জন পাকসেনা। ধর্মপুরে উড়িয়ে দেয়া হয় একটা কাঠের সেতু। (স্বাঃ যুঃ দুঃ)

-এইদিন মুসলিম লীগ নেতা সবুর খান ঢাকায় অবস্থানরত পি ডি পি নেতা নওয়াবাজাদা নসরুল্লা খানের সঙ্গে তাঁর বাসায় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সবুর খান সাংবাদিকদের জানান, দেশের বর্তমান সংকটে পাকিস্তানের আদর্শ ও অখন্ডতার প্রতি বিশ্বাসী নেতাদের মধ্যে দরকার মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। ভারতের হুমকি ও তাদের রক্তপিপাসু যুদ্ধবাজ দালালদের মোকাবেলা করতে হলে অবশ্যই একত্রিত হতে হবে। (সংগ্রাম)

-ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশের কৃতী ফুটবলাররা মঙ্গলগর ভারতের প্রখ্যাত বাঙালী ফুটবলার শ্রী গোষ্ঠপালের নামে গঠিত মোহনবাগান দলের সঙ্গে কলকাতা ময়দানে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। এদিন ভীষণ বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় এক লক্ষ দর্শক মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ দলে খেলেছিলেনঃ অনিরুদ্ধ, আইনুল, জাকির, পিন্টু, ইমামা, খোকন, কায়কোবাদ, প্রতাপ, বিমল, সাগর, এনায়েত, সুভাষ, তুর্য, তসলিম, নওশের ও আমিনুল। ফলাফলঃ বাংলাদেশ ২, গোষ্ঠপাল একাদশ ৪। উল্লেখ্য স্বাধীনতাযুদ্ধে স্বপক্ষে জনমত সৃষ্টি ফুটবল খেলার উদ্দেশ্য। এই ফুটবল দলের দায়িত্ব ছিলেন সংসদ সদস্য মোস্তফা এম এ মতিন এবং সংসদ সদস্য নুরুল আহমদ চৌধুরী (কালু চৌধুরী)। দতি ছিলেন প্রখ্যাত খেলোয়ার জাকারিয়া পিন্টু আর ম্যানেজার ছিলেন তানভীর মোজাহার তান্না।

-সিনেটর কেনেডি বাংলাদেশের শরণার্থীদের সমস্যার  প্রতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও বাস্তববিবর্জিত নীতি গ্রহণ জন্য নিক্সন প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেন। সিনেটের উদ্ধাস্তু বিষয়ক বিচার বিভাগীয় উপপরিষোদের চেয়ারম্যান সিনেটর কেনেডি বলেন, পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দেয়ার ফলেই উদ্ধাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় সংসদে (লোকসভা) সাড়ে চারশ’য়েরও বেশী সদস্য জাতিসংঘ মহাসচিব উথান্টের কাছে লিখিত এক স্মারকলিপিতে পাকিস্তানের কারাগারে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রহসন বিচার বন্ধ করার জন্য দাবী জানান। তাঁরা (সাংসদগণ)  বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। (মর্নিংষ্টার)

-লন্ডনস্থ পাকিস্তান দূতাবাস ডাইরেকটর অব অডিট একাউন্টস পদে নিয়োজিত লৎফুল মতিন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।

-দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ঢাকা থেকে প্রেরিত মিস ক্লেয়ার হোলিং ওয়ার্থের এক সংবাদে বলা হয়, তথাকথিত শ্বেতপত্র দলিলে উল্লেখিত হত্যাকান্ড পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে সংঘটিত হয়েছে। উল্লেখ্য, রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’ এ বলা হয়ঃ

১. ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চের মধ্যে পূর্ববঙ্গে আওয়ামী লীগ এক লক্ষ পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের হত্যা করে।

২. ২৬ মার্চ সকালবেলা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের জন্য আওয়ামী লীগ একটি তৈরী করে।

৩. ভারতের সঙ্গে গোপন পরামর্শ করে আওয়ামী লীগ তাদের পরিকল্পনা তৈরী এবং ভারত অস্ত্র সৈন্য দিয়ে বিদ্রোহীদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।

৪.সংবিধান প্রণয়ন সম্পর্কে আলোচনা কালে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার জন্যপ্রকারান্তে স্বাধীনতা আদায়ের চেষ্টা করে। তাদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা সশস্ত্র বিদ্রোহীর মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পরিকল্পনা করে।

৫.২৫ মার্চ শেখ মুজিব কর্নেল ওসমানী “বিপ্লবী সৈন্য বাহিনীর কমান্ডার” পদে নিয়োগ করে। (দি টাইমস দি গার্ডিয়ান) (পরিশিষ্ট-২ এবং ১২(ক) দেখুন)

-এদিন বাংলাদেশের সরকারের মুখপাত্র সংবাদপত্রে এক বক্তব্য ৫ আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধ করার ঘোষণার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে। মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মিঃ টোমাস মর্গান, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মিঃ কর্নেলিয়াস গালাঘার প্রমুখের বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। (বিডি-১ পৃঃ ৩৪০)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী