১৮ শ্রবাণ, ১৩৭৮ বুধবার, ৪ আগষ্ট ১৯৭১
-এদিন ৭ নং সেক্টরের হাবিলদার শফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহীর পুটিয়া থানার ঝলমলিয়া সেতুর নিকট শত্রু সৈন্যদের ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষে ৪জন পাকসেনা নিহত হয়। এদিন নৌপথে তাহেরপুরে টহলরত পাকসেনাদের ওপর এ্যাম্বুশ ১৮ জন পাকসেনারা হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিন ওয়াশিংটন দূতাবাস থেকে পদত্যাগ করলেন মিনিষ্টার এনায়েত করিম, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা কাউন্সেলর যথাক্রমেঃ এস এ এম এস কিবরিয়াম এম এ মুহিত ও এ আর মতিনুদ্দীনসহ ১৩ জন কর্মচারী। নিউইয়ার্কে জাতিসংঘ পাকিস্তানের ডেপুটি পার্লামেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ এস এ করিম ও পদত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসে কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলী সহ পদত্যাগ করেছিলেন ৬৫ জন কর্মচারী, দিল্লীর ২ জন বাঙালী কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতি উল্লেখ করে কিসিং আরকাইভস লিখেছেঃ “A join statement by the diplomats said that they had” decided to join the suffering millions of Bangladesh who are resisting with their lives the barbakyy of the west Pakistan Army who are determined to. Reduce East Pakistan to a Colony. “They described the government of Pakistan as a “military junta” whose authority “rests solely on its military strength” and whose control was “ limited by the range of its artillery. [KCA, P.24760] এই সব কর্মকর্তাগণ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশন খোলার ব্যবস্থা নেন।
-৩ আগষ্ট সারা পশ্চিম বাংলায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের দাবিতে যে সকল ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়, আজ ভারতের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার সংবাদ প্রকাশিত হয়। সুবোধ মল্লিক স্কয়ারে ছাত্র জামায়েতে সভাপতি ছিলেন সফিউল আলম। (সংবাদপত্র)
-ভারতীয় লোকসভায় এদিন পাকিস্তানী সামরিক জান্তা কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার হুমকি প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণ করেন সমরগুহ, এস এ শামীম, এইচ এন মুখোপাধ্যায়, জগজীবন রাম প্রমুখ। (আঃ বাঃ পঃ)
-চট্টগ্রাম সেক্টরের কামারহাট-ফেণী এলাকায় তুমুল যুদ্ধ হয়েছিলো এ মাসে। এই দিনে পাঁচ ঘন্টা যুদ্ধ করে মুক্তিবাহিনী ৩৭ জন শত্রুসেনা ও ৫০ জন রাজাকারকে খতম করে। একজন ক্যাপ্টেন ও জেসিও নিহত হলেও, জনৈক পাক মেজরের মাথা কেটে তা হেডকোয়ার্টারে পাঠায় মুক্তিবাহিনী। এই আক্রমণের পর শত্রুবাহিনী কামারহাট এলাকা ছেড়ে চলে আসে। অন্য আক্রমণে হরিমঙ্গল ও রাজপুরে হত্যা করা হয় ৭ জন শত্রুসেনা। বিবিরবাজারে টহল পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানো হলে ২জন সেনা খতম হয় এদিন; নারায়ণপুর রেলষ্টেশনে মারা যায় ৪০ জন। (খঃ ৮; পৃঃ) ২ নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জাকির হোসেন এ দিন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার শালদানদীর তীরে ভাঙ্গাপুলের কাছে পাকসেনাদের ব্যাংকার আক্রমণে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। মন্দভাগ রেলওয়ে ষ্টেশনের সন্নিকটে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মোঃ জাকির হোসেনের সাহসিকতার জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত হন।
-এদিন বিদেশী সাংবাদিকদের কাছ দেয়া ইয়াহিয়া খানের সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ মুজিব রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত। অবশ্য তার বিচার করা হবে। শেখ মুজব দেশদ্রোহী কার্য, প্রকাশ্য বিদ্রোহ এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের উস্কানি দিয়েছে। তার জন্যেই আজ দেশের এই অবস্থা। তাছাড়া তিনি তার নির্বাচনী ওয়াদা থেকে সরে এসেছিলেন। শেখ মুজিব বিদেশীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এমন অপরাধ করেছেন যে তাকে অনুরূপ অপরাধকারী যে কোনো ব্যক্তির ন্যায় শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ (দৈঃ পাঃ)
-রাজাকাররা কুষ্টিয়া সদর মহকুমার কুমারখালী থানা পাল্টি গ্রামে ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা এবং ২ জনকে আটক করে। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খেলাফত আলী ও তার ছেলে শহীদুল ইসলাম রাজাকারদের সহায়তার আরও ৬ জনকে হত্যা করে।
–লন্ডনের একটি পত্রিকায় পাক-সেনাদের পূর্ববঙ্গে গণহত্যাকে সমর্থন করে এক বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। এ বিজ্ঞাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পাক-বাহিনীর আক্রমণ ছিলো অনিবার্য। তিনি জানান, কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও দুস্কৃতকারী দেশে এমন অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলো যে সেনাবাহিনীকে বাধ্য হয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়। সেনাবাহিনী ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর কারণেই বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।
এদিন যশোর জেলার শৈলকূপা থানার আলফাপুর গ্রামে পাকসেনা অ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ সংঘঠিত হয়। ৮নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা টহলরত হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। এই অতর্কিত হামলায় পাকসেনারা একজন ক্যাপ্টেনসহ মোট ৩৮ জন সেনা নিহত হয়। এই সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধা করিম আহত হয়। উল্লেখযোগ্য সাহসিকতার পরিচয় দেয় শেখপাড়ার দবিরউদ্দিন, নজরুল মনোহরপুরের চান্দ এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাই আঃ ছাত্তার প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধাগণ।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী