শিরনাম | সুত্র | তারিখ |
ঢাকায় কৃষ্ণ দিবস | দৈনিক পাকিস্থান | ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ |
দোকানপাট যানবাহনে কালো পতাকা: ঢাকায় কৃষ্ণ দিবস
ছাত্রদের ক্লাস বর্জনঃ সভা ও মিছিল
( স্টাফ রিপোর্টার)
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম আহবান কমিটির গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ছাত্র ও বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকরা কৃষ্ণ দিবস পালন করেন। এ দিন সব ধরনের যানবাহন, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শহরের প্রতিটি বাস ও ট্রাকের গায়ে “ আইয়ুব ফিরে যাও” পোস্টার দেখা যায়। এ ছাড়া শহরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীগণ ধর্মঘট করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কলাভবনে এক ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়, ও পরে এক বিরাট সোভা যাত্রা শহর পরিক্রমণ করে।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীগণ ক্লাস বর্জন করে খণ্ড খণ্ড শোভাযাত্রা সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনে এসে সমেবেত হতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন প্রাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষুব্ধ সমাবেশে পূর্ণ হয়ে যায়।
এই বিপুলসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশের উদ্দেশ্যে বক্তিতা দানের জন্য ছাত্র নেতৃবৃন্দ গাড়ি বারান্দার ছাদকে মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেন।
গাড়ি বারান্দার ছাদ থেকে সমবেত ছাত্র-ছাত্রীর উদ্দেশ্যে বক্তিতাকালে ডাকসুর সহ-সভহাপতি জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেন পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকের বুকের রক্তে বাংলার মাটি রঞ্জিত হয়েছে, আর ১১-দফা দাবি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকের শপথে পরিণত হয়েছে। এই রক্ত অক্ষরে লিখিত শপথ আদায়ের জন্যই ছাত্র সমাজ আন্দলন করে, এবং ১১-দফা দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিক জনতার আন্দলন খান্ত হবে না। গোল টেবিল বৈঠক প্রত্যাখ্যান করে জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেন যে, কয়েকজন নেতার সাথে গোল টেবিল বৈঠক করলে পূর্ব বাংলার ছাত্র জনতা টা মানবে না, গোল টেবিল বৈঠকে পূর্বশর্ত হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান, ওয়ালী খান, অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ, ভুট্টুসহ সকল রাজনৈতিক নেতা ও ছাত্র বন্দীদের মুক্তিদান, জরুরী আইন প্রত্যাহার, ইত্তেফাক পুনঃপ্রচারের ব্যাবস্থা, জনাব মোহাম্মদ তোয়াহা, জনাব আব্দুল হক ও জনাব মোহাম্মদ ফরহাদসহ সকল নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে জারীকৃত হুলিয়া ও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন আগামী রোববার পল্টন ময়দানে সর্বদলীয়, ছাত্র সংগ্রাম কমিটি এক জনসভা অনুষ্ঠান করবে
এবং উক্ত জনসভায় কমিটি ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে আগামী দিনের আন্দলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে টাঙ্গাইলে গত বুধবার ছাত্র- জনতার শোভাযাত্রার ইপর ই পি আরের গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা করা হয় এবং নিহত ছাত্রদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
সভাশেষে এক বিরাট মিছিল বের করা হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীগণ কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এছাড়া শোভাযাত্রী কালো পতাকা ও তাঁদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া সম্মিলিত পোস্তার ফেস্টুন বহন করেন।
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের সময় বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কলা ভবন থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে নীলক্ষেত রোড, নিউমার্কেট, আজিমপুর, লালবাগ, উর্দু রোড, চকবাজার, ইসলামপুর। সদরঘাট, নবাবপুর, জিন্নাহ এভিনু, তোপখানা রোড প্রদক্ষিণ করে বিকাল সাড়ে তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয় এই দীর্ঘ পথ অতিক্রমকালে শোভাযাত্রার কলেবর বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন এলাকার নাগরিকগণ করতালি য় পুষ্প বর্ষণের মাধ্যমে শোভাযাত্রীদের অভিনন্দন জানায়।
বুধবারের ছাত্র ধর্মঘট
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রামের কমিটির আহবানে গত বুধবার ছাত্র য় গণহত্যা সহকারী নির্যাতন ও ব্যাপক হারে গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রদেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
এই দিন ঢাকা শহরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীগণ ধর্মঘট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনে এক বিরাট ছাত্র সভায় মিলিত হয়। ডাকসুর সহ-সভহাপতি জনাব তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ছাত্র জনতার দাবী মেনে নিয়ে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান হয়।
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, ছাত্র- জনতার দাবী মেনে নেয়া না হলে ক্ষমতাসীনদের সাথে কোন বৈঠক জনসাধারণ য় ছাত্রসমাজের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
সভায় ছাত্র, শ্রমিক ও কৃষক নেতাসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তিদান, আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা ও হুলিয়া প্রত্যাহার, জরুরী আইন, দেশরক্ষা আইন ও নিরাপত্তা আইন বাতিল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান, ইত্তেফাক ও অন্যান্য সংবাদ পত্রের উপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, বাকস্বাধীনতা ব্যাক্তিস্বাধীনতা প্রদান সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার, ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকের দাবী পূরণ পুলিশের গুলিতে নিহতদের পারিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ দানের দাবী জানান হয়।
সভায় গৃহীত অপর দুটি প্রস্তাবের প্রাদেশিক গভর্নর জনাব আবদুল মোমেন খানের অপশরণ এবং ছাত্র, শ্রমিক য় কৃষকের নির্যাতনের জন্য সরকারী কর্মচারীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করা হয়।
সভাশেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন রাজপথে প্রদক্ষিণ করে।