ঢাকায় শেখ মুজিবের বিপুল সংবর্ধনা
(নিজস্ব প্রতিনিধি)
ঢাকা, ১০ জানুয়ারি- আজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা নগরীর অগণিত জনতা বাংলার রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে বিপুল সংবর্ধনা জানায়। সকাল থেকেই বাংলার অগণিত জনতা শেখকে সংবর্ধনা জানানাের জন্য তেজগা বিমানবন্দরে সমবেত হন। বারােটার পর হাজার হাজার জনতার ভিড়ে বিমান বন্দরে প্রবেশ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অগত্যা আমরা কয়েক বন্ধু টেলিভিশনের পর্দায় শেখের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করি। বেলা ৩টা ৪২ মি. যখন শেখ চোখের জল মুছতে মুছতে বিমান থেকে বেরিয়ে আসেন তখন অগণিত জনতা তাঁকে অভিনন্দিত করেন, প্রায় তিন ঘণ্টা পর তিনি রেসকোর্সে আসেন। সেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক জনতার এ সমাবেশে তিনি বলেন, আজ আমার হৃদয় ভীষণ ভারাক্রান্ত। গত ৯ মাসের পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই-এ হাজার হাজার ছাত্র-যুবক-শ্রমিক, আমার সহকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন, হাজার হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের প্রতি আমার সালাম জানাই। দেশের হাজার হাজার ঘর-বাড়ি লুষ্ঠিত হয়েছে, পুড়িয়ে দিয়েছে, ১ কোটি লােক ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। আজ আমি আপনাদের নিকট ফিরে এসেছে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। তিনি সমস্ত দেশের নিকট বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে সর্বপ্রকার সাহায্য করার জন্য ও স্বীকৃতি দেয়ার জন্য, আহ্বান জানান। তিনি ভারতসহ যে সমস্ত দেশের মজলুম জনতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সাহায্য করেছেন তিনি তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক নীতি অবলম্বন করে চলবেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের একজন লােকও যদি অনাহারে থাকেন তবে স্বাধীনতার আদর্শ পূর্ণ হবে না। তিনি পাক দখলদার বাহিনীর গণহত্যার তীব্র নিন্দা করেন এবং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের দাবি জানান।
সূত্র: দেশের ডাক
১৪ জানুয়ারি, ১৯৭২
২৯ পৌষ, ১৩৭৮