৩১ ভাদ্র, ১৩৭৮ বুধবার, ১৮ আগষ্ট ১৯৭১
এদিন ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জের মধ্যবর্তীস্থানে দু’টি রেলওয়ে সেতু মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়। ঐ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে দু’জন রাজাকার মারা যায়। এই ঘটনার পর স্থানীয় উৎসাহী শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকাররা টহলরত পাক- সেনাদের সহায়তায় অকুলস্থলের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নাটাই, ভাটপাড়া, রাজঘর, থলিয়ারা, বিরাশা থেকে বহু যুবক গ্রামবাসীকে-ওয়াপদা ক্যাম্পের কাছে বধ্যভূমিতে হত্যা করে। (সংবাদপত্র) উল্লেখ্য গেরিলা হামলার প্রেক্ষিতে হানাদার পাক-সেনা ও দোশর রাজাকারদের অত্যাচার সম্পর্কে পশ্চিমা পত্র-পত্রিকায় এভাবে উল্লেখ করা হয়। Military Reprisals against guerrillas: Reports by refuges entering India alleging that the Army and the Raznkars (the civilian militia) had let loose a virtual reign of terror as a reprisal for the guerrillas’ activities appeared to be confirmed by Western correspondents in East Pakistan. The Times’ reported on Sept. 12 “Military terror is continuing in East Pakistan.. Political suspects are still lifted although care is taken to make their arrests unobtrusive. Army reprisals continue to be savage. In the last week of August 70 suspects were take from seven village, lined up and shot. Their homes were destroyed……” (KCA, P-24989)
পাক-সামরিক শাসক তাদের অবৈধ কার্যকলাপ বৈধ করার জন্য জারি করে ৮৮ নং সামরিক আদেশ। এ আদেশবলে আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসকদের ঢালাওভাবে এক বা একাধিক ফৌজদারী আদালত গঠনের ক্ষমতা দেয়া হয়।
পাকিস্তানী সরকার ১৪ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতে হাজির হবার জন্যে তাদের নাম প্রকাশ করে। তাদের অনুপস্থিতি ৪০ নম্বর সামরিক বিধিবলে তাদে বিচার করা হবে জানানো হয়।
গেরিলা যুদ্ধের বিবরণঃ
ফেনী এলাকায় পাক-সেনা বহনকারী প্রাইভেট বাসে মাইন বিস্ফোরণ করে ২ জেসিও, ১৯ পাক-সেনা নিহত, আহত ৩০ জন। ভোলা নদীতে পাকবাহিনী গানবোট ধ্বংস, আর নোয়াখালীর রামগঞ্জ থানায় মুক্তিবাহিনীর হাতে পাক সেনার ২ জন অফিসার নিহত হয়। সিলেট শহরে জীপ বিস্ফোরণে ১ অফিসারসহ ২ পাকসেনার মৃত্যু হয়। অন্যত্র রামসিরাবাড়িতে ৮, আন্ধেরীঝর খামারে ৪, নদীপার হবার সময়ে ধলারপারে ১ ট্রুপ, কানাইঘাটে ২, দিলকুশে ১ পাকসেনা হত্যা।
সুতারংকান্দি এলাকায় গুলি বিনিময়ে অনেক পাকসেনা হতাহত। চাঁদগাজি বাজার, রামসিরাবাড়ি, শমশেরনগর প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর ৩৪ জন আহত। বাবমারি, কাতিয়ামারাতে ৫ রাজাকার হত্যা আহত ৩। আহমেদনগর কুন্নি ও আন্ধেরীঝর খামার-লালমনির হাটের মধ্যবর্তী টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাণীগঞ্জ-নাগেশ্বরী টেলিফোন লাইনের ২০০ গজের কাটা, চরগ্রামের রেলওয়ে সেতু ধ্বংস, শাহজি বাজার-সিলেটের মধ্যবর্তী ২ টি বৈদ্যুদিক পাইলস, পূর্বাধলায় শান্তিকমিটির সদস্য হত্যা, শমশেরনগরে রেলওয়ে সেতু ধ্বংস, মাথুরাপুরে ২ টি রেলওয়ে বগী লাইনচ্যুত করা প্রভৃতি অপারেশনের মুক্তিযোদ্ধারা সাফল্য অর্জন করে।
ভুরুঙ্গামারীর পাকঘাটিতে পাঞ্জাবী ও পাঠান সৈন্যদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হলে পাঠান দলের নেতৃত্ব দানকারীদের এ দিন গ্রেফতার করা হয়।
হংকংয়ে পাকিস্তানী দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার মহিউদ্দিন আহমদ পাক সরকারপক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাঙালীদে সংগঠন অ্যাকশন বাংলাদেশ বৃটেন বাংলাদেশ আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির জন্যে আজ খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করেন। অ্যাকশন কমিটি ২০ আগষ্ট কনভেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়। আহবায়ক ছিলেন আজিজুল হক ভূঁইয়া। এ উপলক্ষে প্রচারিত বিজ্ঞপতিতে বলা হয়, ২০ তারিখে ১০ নম্বর গোরিং ষ্ট্রিট, লন্ডনে কনভেশন অনুষ্ঠিত হবে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আজ এক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মিঃ এস.এন. সেন। যার শিরোনাম ছিল- ‘ব্লিডিং বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ পাকিস্তানী নির্যাতন, পৈশাছিক হত্যাকান্ড আর নিপীড়নের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে ছবিগুলোর মধ্যদিয়ে। সভাপতির ভাষণে মিঃ সেন বলেন, আদিম বর্বরা আর নির্মম অত্যাচার থেকে বাঙালী শিশু-কিশোর তরুণ বৃদ্ধা কেউ রক্ষা পায়নি। এ ছবিগুলো ব্যাপক অত্যাচারের সামান্য সংস্করণ মাত্র।(সংবাদপত্র)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী