You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.06.08 | ৭ ই জুনের হরতালঃ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহতঃ সরকারী প্রেসনোট | দৈনিক ইত্তেফাক | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম – ৭ ই জুনের হরতালঃ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহতঃ সরকারী প্রেসনোট

সূত্র – দৈনিক ইত্তেফাক

তারিখ – ৮ জুন , ১৯৬৬

                               ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত

                                               ( সরকারী প্রেসনোট )

ঢাকা ৭ ই জুন, আওয়ামী লীগ কর্তৃক আহূত হরতাল ৭–৬–১৯৬৬ তারিখে অতি প্রত্যুষ হইতে পথচারী ও যানবাহনের ব্যপক ধার সৃষ্টির মাধ্যমে সংগঠিত করা হয়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছোকরা ও গুন্ডাদের লেলিয়ে দেয়া হয়। ইপিআরটিসি বাসগুলিতে ইট পাটকেল ছোড়া হয় এবং টায়ারের পাম্প ছাড়িয়া দিয়া সর্বপ্রকার যানবাহনের অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়। নিরীহ জনসাধারণ ও অফিস যাত্রীদের অপমান ও হয়রানী করা হয়। হাইকোর্টের সম্মুখে তিনটি গাড়ি পোড়াইয়া দেওয়া হয়। পুলিশ কার্জন হল, বাহাদুর শাহ পার্ক ও কাওরান বাজার নিকট গুন্ডাদের বাধা দান করে এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করিয়া তাহাদেরকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়।

তেজগাঁও দুই–ডাউন চট্টগ্রাম মেইল তেজগাঁও রেল স্টেশনের আওটার সিগ্ন্যালে আটক করিয়া লাইনচ্যুত করা হয়। ট্রেনখানা প্রহরা দানের জন্য একদল পুলিশ তথায় গমন করে। জনতা তাদের ঘিরিয়া ফেলে এবং তূমূলভাবে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, ফলে বহু পুলিশ কর্মচারী আহত হয়। যখন পুলিশ জনতার কবলে পড়িয়া যাবার উপক্রম হয় তখন আত্মরক্ষার জন্য তাহারা গুলি বর্ষণ করে। ফলে ৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

নারায়ণগঞ্জের উচ্ছৃঙ্খল জনতা সকাল ৬-৩০ মিনিটের সময় গলাচিপা রেলওয়ে ক্রসিং এর নিকট ঢাকাগামী ট্রেন আটক করে। পরে জনতা নারায়ণগঞ্জ গামী ৩৪ নং ডাউন ট্রেন আটকাইয়া উহার বিপুল ক্ষতি সাধন ও ড্রাইভার কে প্রহার করে। জনতা জোর করিয়া যাত্রীদেরনামাইয়া দেয়। যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য আগত একটি পুলিশ দল আক্রান্ত এবং বহুসংখ্যক পুলিশ কর্মচারী আহত হয়। পুলিশ দল লাঠিচার্জের সাহায্যে জনতা ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়। অতঃপর বন্দুকসহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে এক জনতা নারায়ণগঞ্জ থানা আক্রমনকরিয়া দারুন ক্ষতি এবং বন্দুকের গুলিতে পুলিশ অফিসারদের জখম করে। উচ্ছৃংখল জনতা থানা ভবনে প্রবেশ করার পর পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করার ফলে ছয় ব্যক্তি নিহত ও আরো ১৩ ব্যক্তি আহত হয়। ৪৫ জনপুলিশ আহত হন এবং তাহাদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুতর। টঙ্গীতে বিভিন্ন মিলের শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে এবং একটি মিছিল বাহির করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেনীর ছাত্র পিকেটিং করে এবং সেখানে আংশিক ধর্মঘট পালিত হয় ।

দুপুরে আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ডেমরা এলাকার শ্রমিকগন ১৪৪ ধারা লংঘন করিয়া শোভাযাত্রাসহকারে ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর হইতে থাকে। ঢাকা নগরীর দুই মাইল দূরে ইপিআর বাহিনীর একটি দল শোভাযাত্রার গতিরোধ করে। অপরাহ্নে এক জনতা গেন্ডারিয়ার নিকট একখানি ট্রেন আটক করে, চট্টগ্রামগামী গ্রীন এরো ও ঢাকা অভিমুখী ৩৩–আপ ট্রেনখানিকে অপরাহ্নের দিকে তেজগাঁও স্টেশনে আটক করা হয়। …… সন্ধ্যার পর একটি উচ্ছৃংখল জনতা কালেক্টরেট ও পরে স্টেট ব্যাঙ্ক আক্রমন করে। রক্ষীগন জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলিবর্ষণ করে।

বেলা ১১টায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্র সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করিয়া হয় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শহরে অন্যান্য স্থানে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিল ।