১১ ভাদ্র, ১৩৭৮ শনিবার, ২৮ আগষ্ট ১৯৭১
মুসলিম লীগের সফিকুল ও খাজা খয়েরউদ্দীন ও জামায়াতে’ ইসলামী গোলাম আযম ও মাওলানা আবদুর রহিম ও সময় ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। এদিন মুসলিম লীগ নেতাদের সম্মানে আয়োজন করা হয় এক সম্বর্ধনা সভার। এতে মিয়া মমতাজ দৌলতানা নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা ও আত্মোৎস্বর্গের জন্যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, যতদিন এসব দেশপ্রেমিকদের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন বজায় থাকবে অখণ্ড পাকিস্তানের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আতিকুজ্জামান খান ব্রিটিশ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরকে এক ‘চমকপদ্র ফাকা আওয়াজ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
পাকিস্তানী হানাদারদের সাহায্য না করার আহবান সম্বলিত ইন্দিরা গান্ধীর চিঠির জবাবে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই আজ নয়াদিল্লীতে জানান, চীন যে কোনো অবস্থাতেই পাকিস্তানকে সহযোগীতা করবে।
নারায়ণগঞ্জের রাজাকাররা এ দিন একজন মুক্তিযোদ্ধকে আটক করে অস্ত্রশস্ত্রসহ। সিলেটের সীমান্ত এলাকা থেকে দ’মাইল দূরে চয়খায়েরে হানাদার ঘাতকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি নেয় ১ টি সেতু ধ্বংস করার। স্থানীয় রাজাকাররা বাঁধা দেয় এতে। ২৮ আগষ্ট প্রচার করা হয় হবিগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য ডাঃ আবুল হাসিমসহ ৪৮ জন বিদ্রোহী স্থানীয় শান্তি কমিটির কাছে পাকিস্তানের আদর্শ ও অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানান কোরআন স্পর্শ করে শপথ করে। এদের মধ্যে রয়েছেন হবিগঞ্জ মহকুমার আওমী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ।
রাজশাহী শান্তিকমিটির আয়েনউদ্দীনের সভাপতিত্বে শহীদ রাজাকারের পরিবারকে খাস জমি থেকে অথবা পরিত্যক্ত জমি থেকে ১০ বিঘা জমি দেয়াড় ঘোষণা দেয়া হয়।
পাকিস্তানীদের অত্যাচার নিপীড়ন ার হত্যাযজ্ঞের বিবরণ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন ব্রিটিশ এমপি আর্থার বটমলে। জুলাই মাসে বিভিন্ন এলাকা সফর করার পর দেশে ফিরে গিয়ে অত্যাচারের প্রকৃত সংবাদ প্রকাশ করেন। কেননা, পাকিস্তান সরকার তখন দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করেছে’ এই মিথ্যা প্রচারণা চালাতো। একাত্তরের এদিনে বটমলে বাংলাদেশের ঘটনাবলীর ওপর বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যের শিররোনাম ছিলোঃ ‘ইয়াহিয়া খান অ্যাডাম্যান্ট’। এতে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শেখ মুজিবর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের সমস্যা সমাধান সম্ভব। পাকিস্তান সফরকালে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে এ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, ইয়াহিয়া একরেখা এ প্রস্তাব মানাবে না।
লন্ডনে বাঙালীদের সংগঠনের মুকুল এন্টারপ্রাইজ ‘জয়বাংলা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ দিনে। লন্ডনের বেথনাল গ্রীনের ইয়র্ক হলে অনুষ্ঠানটি হয়। বিশেষ অথিতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, পল কনেট, রেডি জেফর্ড, ব্রিটিশ এমপি পিটার শোর, ষ্টোন হাউজ, ব্রুস ডগলাস মানসহ আরো অনেকে। নৃত্য, গীত আর বাদনে সুসজ্জিত অনুষ্ঠানটি সবাই উপভোগ করে।
বৃটনে গঠিত বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি ডঃ এনামুল হকের কাছে কলকাতা থেকে চিঠি লেখেন আলমগীর কবির। এতে তিনি জানান স্বাধীনতাযুদ্ধের ওপর পপ্রামান্য চলচ্চিত্রের প্রথম পর্ব বাংলাদেশ ওয়ার অব ন্যাশনাল লিবারেশন’ –এর কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্বে গণহত্যার কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। বার্থ অব এ ন্যাশন হলো ছবিটির দ্বিতীয় পর্ব যা শেষের পথে। আরো চারটি ছবি দ্রুত শেষ করা যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন। প্রতিটি ছবির সময়কাল ২০ মিনিট। ইউরোপ, আমেরিকার টেলিভিশন থিয়েটার এসব ছবি প্রদর্শনের জন্যে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান আলমগীর কবির।
সোনার বাংলা শ্মশান কেন? এ জিজ্ঞাসা ছিল পশ্চিম বঙ্গ জমিয়তে উলামা’র। বাংলাদেশের সমর্থনে আজকের দিনে প্রকাশিত বক্তব্যে সংগঠনটি বলেঃ ধর্মের নামে, ইসলামের নামে , দেশের ঐক্য সমৃদ্ধি নিরাপত্তার নামেই এই শোষণ এবং অবিচার চলছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মে শোষণের অবকাশ মাত্র নেই, ‘ইসলামাবাদচক্র জেয়ারেল ইয়াহিয়া বাংলাদেশের ভাষা এবং রায়কে পদদলিত করে জাতীয় পরিষদের বৈঠক বাতিল করেছলেন। ধর্মের নামে বাংলাদেশে তাদের পৈশাচিক মৃত্য চলছে।
আজকের আনন্দবাজার পত্রিকা ও হিন্দুস্তান ষ্ট্যাণ্ডার্ড পত্রিকায় বলা হয় ২০ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মুক্তিসেনার প্রায় ৪০০ পাকসেনা হত্যা করেছে। যুগান্তর পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয় পি.টি.আই-এর সুত্র অনুযায়ী ২৩ থেকে ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে কমপক্ষে ১০০ রাজাকারসহ ১০ জন পাকসেনা খতম হয়েছে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী