২১ ভাদ্র ১৩৭৮ মঙ্গলবার ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-পাকসামরিক সরকার শেখমুজিবের দেশদ্রোহী মামলায় বিবাদী পক্ষের কৌশুলী হিসেবে তিনজনের তালিকা শেখ মুজিবের কাছে প্রেরণ করেন। তন্মমধ্যে আল্লাবক্স খান ব্রোহীকে (একে ব্রোহী) শেখ মুজিব তাঁর কৌশলী নিয়োগ করেন। জনাব ব্রোহী তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পাকসরকার প্রণীত মামলায় ১৯৬৮ সালে কৌশুলী হিসাবে লড়েছেন। বর্তমানে দেশদ্রোহী মামলায় সাক্ষ্যপ্রমান গ্রহণ এ দিনে লায়লাপুরের সামরিক বিশেষ ট্রাইবুনালে শুরু হয়।
-ঢাকায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর বলেন, পাক-ভারত যুদ্ধ বাঁধলে তা বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে। ভারত পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করতে পারবে না বলেই পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিবাহিনী নামে পঞ্চম বাহিনী গড়ে তুলেছে। শাহ আজিজুর রহমান বলেন, কেবল বহিঃশত্রু নয় অভ্যন্তরীণ শত্রূদের সম্পর্কেও আমাদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে। রাশিয়া, বৃটেন, আমেরিকা, ভারতে সাহায্য করছে। দেশবাসীকে ভারতের দালালদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলে তিনি আহবান জানান।
-পাক বাহিনীদ্বারা অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ব্যাপী স্মরণাতীত কালের প্লাবনে প্লাবিত হয়। পাকবেতারের খবরেই বলা হয় বন্যায় এ পর্যন্ত ১৭২ জন মারা গেছে, ৫০ জন মারা গেছে কলেরায়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলো হল ফরিদপুর, পাবনা, যশোহর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহের ব্যাপক অঞ্চল পানির নীচে। বিভিন্ন জেলার লক্ষ লক্ষ লোব অনাহারে খোলা আকাশের নীচে দিন যাপন করে। ঈশ্বরদি বিমান বন্দর দুফুট পানির নীচে। রাজশাহী থেকে বন্যাপীড়িত ১০ হাজার লোক মুর্শিদাবাদের আশ্রয় নিয়েছিল। উল্লেখ্য গত ১২-১৩ নভেম্বর ৭১ সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে ৫ লক্ষ উপকূলীয় লোক নিহত হয়। মৃত্যুরই দেশ যেন দুঃখিনী বাংলা। কবি সুকান্তর ভাষায় “অবাক পৃথিবীর অবাক যে বারবার এদেশে দেখি মৃত্যুরই কারবার।” তবু ঝড় বৃষ্টি প্লাবন উপেক্ষা অকুতোভয় মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার জন্য জীবন বাজী রেখে অপারেশন চালিয়ে যান।
-জামালপুর ময়মনসিংহ এলাকায় কুখ্যাত রাজাকার-আলবদর বাহিনীর আশরাফ ও মান্নান এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। অসহায় নিরীহ লোকদের উপর বর্বর অত্যাচার চালিয়ে বহুলোককে হত্যা করে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী