You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.29 | ১২ ভাদ্র, ১৩৭৮ রোববার, ২৯ আগষ্ট ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১২ ভাদ্র, ১৩৭৮ রোববার, ২৯ আগষ্ট ১৯৭১

প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতিশীল রাষ্ট্রগুলোয় মিলয় স্থাপন করে কূটিনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেছিল। এদিন বৃটেনে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সালমান আলী বাংলাদেশ কমিশন খোলার অনুমতি দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ ব্রিটিশ সরকারের কাছে। তিনি জানান ব্রিটেনের এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং তারা প্রকারান্তেরে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন করেছে।

কাইউম খান আজ বলেন, আগরতলা মামম্লা প্রত্যাহার করার কারণেই পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মামলার আসামীরা ছাড়া না পেলে কোনোদিনই আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না।

রাওয়ালপিন্ডিতে এদিন গোলাম আযম জামায়তের কর্মীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে সেনাবাহিনীকে আরও কাঠোরভাবে সামরিক বিধিগুলো প্রয়োগ করার আহবান জানান। আলাদা নির্বাচন না হওয়াতে গত নির্বাচনে হিন্দুদের সমর্থন পেয়ে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে চরম বোকামী।

-রেডিও পাকিস্তান থেকে এ দিন একজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। প্রচণ্ড নির্যাতন চালিয়ে তাঁর কাছে থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয় যে, ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে শত শত বাঙালীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজ চালানোর জন্যে পাঠানো হচ্ছে সীমান্তের এ পারে।

এ দিন ঢাকা শহরের কয়েক জায়গায় হামলা চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে। অন্যদিকে হানাদারদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দশ্যে নারায়ণগঞ্জের কাছে একটি সেতু ধ্বংসের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় হানাদার ও রাজাকাররা।

ভারতের প্রত্যক্ষ সাহায্য সহযোগিতাও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ উদ্যোগের ফলে বিপুলসংখ্যক গেরিলা প্রশিক্ষণ নেয়ার পর মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য-থেকে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধা নিয়ে মুজিব বাহিনী গড়ে তোলা হয়। কিন্তু

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান সেনাপতি যথাযথভাবে অবগত ছিলেন না। এই বাহিনীর নাম প্রথমে দেয়া হয়েছিল বি এল এল এফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স) পরে  নামকরণ হয় ‘মুজিব বাহিনী’। শেখ ফজজুল হক মনি এই বিশেষ বাহিনী গঠনের সাথে জড়িতে ছিলেন। উল্লেখ্য, ভারতীয় মিজো এবং নাগা বিদ্রোহীদে নাশকতামূলক তৎপরতা প্রতিরোধের দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল উবান। তাঁর নেতৃতবেই ‘মুজিব বাহিনী’ সদস্যদের বিশেষ ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়। এ প্রসঙ্গে আজকের দিন বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ভারতের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন মিঃ ডি. পি. ধর।

যশোরের লেবুতলা, রায়পুরা ও হাসিমপুর থেকে পাকবাহিনী হটিয়ে দিয়ে মুক্তিবাহিনী আধিপত্য বিস্তার করে। আজকের দিনে নওহাটা পাক ঘাঁটি আক্রমণে ১৩০ শত্রুসেনা খতম হয়।

রাজশাহী-দিনাজপুর-রংপুর সেক্টরের বসন্তপুরে দুঃসাহসিক অভিযানে মুক্তিবাহিনীর হাতে ১ ক্যাপ্টেনসহ ৫ শত্রুসেনা নিহত, আহত ২।

ভোমরা সীমান্ত চৌকি এলাকায় ভারুখালী ব্রিজ পুরোপুরি ধ্বংস। প্রচন্ড গোলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা এ কাজটি করে। পাকবাহিনীর নিহতের সংখ্যা ৩।

যশোরের মেহেরুল্লাহ নগর এলাকার পাক ঘাঁটি থেকে টেলিফোণ সেট, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও ঝিকরগাছা থেকে এয়ারগান গ্রেনেড উদ্ধার। তুরিরহাটে গেরিলা ছদ্মবেশে পাকবাহিনীর ১০ দালালকে খতম করে।

কসবার পশ্চিম জলপথে পাকিস্তানীদের চলাচলের পথে মুক্তিবাহিনী অ্যামবুশ পেতে থাকে। বেলা ২-৩০ মিনিটে পাকসেনাদের ২ টি নৌকা আসতে থাকে, আর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের ফলে নৌকাগুলো ডুবে যায়। নিহত হয় ৩০ পাকসেনার সবাই। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

মাত্র ছ’জন মুক্তিসেনা দল বিস্ফোরকের সাহায্য ঢাকার সায়দাবাদ সেতু উড়িয়ে দেয়। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ সময়েই দুশ’ মণ পাটসহ একটি ট্রাক লতিফ বাওয়ানী মিলে যাচ্ছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা ট্রাকটি ধ্বংস করে দেয়। পুড়ে যায় পাট।

বেরিদের কাছে তিন’শ মণ পাট পুড়িয়ে দেয়া হয় ফসফরাস বোমার সাহায্যে। ডুবিয়ে দেয়া হয় পাঁচ হাজার বেল বহনকারী চামচাম ফ্ল্যাটটি। আরসি এম জুট মিলের একজন শ্রমিক গেরিলা দলে ছিলেন। তিনি আজ ফসফরাস গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে মিল গুদামের ১ লাখ বেল পাট পুড়ে যায়। প্রা ৩/৪ ঘন্টা ধরে পাট আগুন জ্বলছিল।

    

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী