প্রসঙ্গক্রমে
দমদমে অনড় ত্রাণসামগ্রী
বাঙলাদেশ থেকে আগত শরণার্থী সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৪৪ লক্ষে পৌঁচেছে। পশ্চিম বাঙলার সমস্ত প্রশাসনিক অবস্থা একেবারে ধ্বংসের মুখােমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতের আহবানে সাড়া দিয়ে দুনিয়ার বহু দেশের সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কলকাতায় ইতিমধ্যেই প্রচুর পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী পাঠানাে শুরু করেছেন। সবে শুরু, কিন্তু সরকারী পরিচালনায় চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলার ফলে এখনই দমদম বিমান ঘাঁটি জমে ওঠা ত্রাণ সামগ্রীতে বােঝাই হয়ে উঠেছে। একদিকে যখন কলেরা ও টাইফয়েডে হাজার হাজার শরণার্থী পথের উপর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোরে ঢলে পড়ছেন, অপর দিকে তখনই দমদমে কলেরা ও টাইফয়েড ভ্যাকসিন গাদা হয়ে পড়ে পড়ে ব্যবহারের পক্ষে বিপজ্জনক ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খােলা আকাশের নীচে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী বুকের শিশুদের নিয়ে ঝড়ে-জলে উৎসনে যাচ্ছেন ও অন্যদিকে বিমান ঘাটির গুদাম ও প্রাঙ্গণ বিদেশ থেকে পাঠানাে তাঁবুতে বােঝাই হয়ে উঠেছে। পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুঁড়ে দুধ, টিনের মাছ, নানা জাতীয় খাবার, ঔষুধ ও ইনজেকশন, অথচ মহামান্য সরকার এসব জিনিস জায়গামতাে পাঠানোর জন্য এমন পর্যন্ত একটা সাধারণ প্রশাসন গড়ে তুলতে পারেন নি। শরণার্থী অতি প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে যখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন সেই অতি প্রয়ােজনীয় জিনিসগুলিই দমদম বিমান ঘাঁটিতে জমে অব্যবহার্য ও বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে।
এ গাফলতির কোনাে ক্ষমা নেই। পূর্ব-বাঙলার বিগত প্রলয়ঙ্কর বন্যায় দূর্গত মানুষদের জন্য ত্রাণকার্যে ইয়াহিয়াচক্রের চরম ঔদাসীনের প্রতি রক্ত চোখ করে আমরা কম অভিযােগ বা বিক্ষোভ জানাই নি। আজ যেন ত্রানসামগ্রী পাঠিয়েও তা সময়মতাে ব্যবহার করতে না পারার অপরাধে সারা দুনিয়া আমাদের অপরাধী বলে তর্জনী উচিয়ে দেখাতে না পারে।
সূত্র: কালান্তর ১১.৬.১৯৭১