২৪ শ্রাবণ, ১৩৭৮ মঙ্গলবার, ১০ আগষ্ট ১৯৭১
-এদিন করাচী থেকে প্রকাশিত ‘দি ডন’ পত্রিকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে মুজিবের বিচার হবে বলে সরকারী প্রেসনোট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়ঃ অধুনা বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবকে ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’ এবং অন্যান্য অপরাধের জন্যে বিশেষ সামরিক আদালতে বিচার করা হবে। আগষ্ট মাসের ১১ তারিখ থেকে গোপনে এ বিচার করা হবে এবং বিচার সম্পর্কিত সবকিছু গোপন রাখা হবে। (দি ডন) উল্লেখ্য, এদিনের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেই পাকিস্তান সরকার সর্বপ্রথম শেখ মুজিব সম্পর্কিত তথ্য পরিবেশন করে বলা হয়, তাঁকে মার্চ মাসের ২৬ তারিখ ভোরে তাঁর ধানমন্ডিস্থিত বাসভবন থেকে বন্দী করা হয়। পরে, তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু, কোথায় তাঁকে রাখা হয়েছে, সে সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করা হয়নি।
-এদিন পাকিস্তানের সকল মুসলিম লীগ একত্রীকরণের জন্য মিয়া দৌলতানা, ফজলুল কাদের চৌধুরী, খান আবদুল কাইয়ুম খানের মধ্যে আলোচনা হয়।
-কাইয়ুম খান সবাইকে পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি আস্থাশীল থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন ‘এই আদর্শের ওপরেই দেশের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। দ্বিজাতিত্বের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে দেশের জন্য তা বিপদজনক হবে। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিদানকারীরা এই বিপদকেই ডেকে এনেছে। (দৈঃপাঃ)
-খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মওলানা আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্যে পাকিস্তান আজ দেশদ্রোহী ও খোদাদ্রোহী সম্মিলিত শক্তির হুমকির মুখোমুখি। (আজাদ)
-এ দিন খুলনা জেলার দাকোপ থানার রাজাকাররা ৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। ডুমুরিয়ার মিকসিসি মিল ক্যাম্পের রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলকে আক্রমণ করে ৩ জনকে হত্যা করে এবং লুট করে অস্ত্রশস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রান্ত হয় বটিয়াঘাটা থানার আমিনপুর ও ফুলতাল্য।
-জাতিসংঘের মহাসচিব এদিন বললেনঃ U Thant said on Aug 10 that although the trail fell “within the competence of the judicial system of a member-state”. It was “a matter of extra ordinary interest and concern in many quarters, from a humanitarian as well as from a political point of view.” And that “any developments concerning the fate of sheikh Mujibur Rahman will in vitably have repercussion outside the borders of Pakistan.” উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ নিজেও (মহাসচিবের) এই বিবৃতির পর শেখ মুজিবের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সবিশেষ উদ্বিগ্ন হন। কিন্তু ভারত-সোভিয়েত মৈত্রীচুক্তির পরোক্ষ ফল হিসাবে পাকিস্তানীদের সম্ভব্য প্রতিহিংসা হত্যার আশংকা হ্রাস পায়। (মুলধারা ’৭১ পৃঃ ৯৯)
-যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মিঃ রজার্স বাংলাদেশ প্রশ্নে জাতিসংঘে মহাসচিব উ.ত্থান্টের সাথে আলোচনা করেন। চার ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে জাতিসংঘ মার্কিন রাষ্ট্রদূত (পরবর্তী
(প্রেসিডেন্ট) জর্জ বুশ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, পাক কারাগারে বিশেষ সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গোপন বিচার অনুষ্ঠানের সংবাদের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিং এদিন বলেন, পাকিস্তান সরকারের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগ জানানো হয়েছে। (সংবাদপত্র)
-এদিন ‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়, ইয়াহিয়া খান কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারের অকল্পনীয় সিদ্ধান্ত ভারত উপমহাদেশের জন্য অধিকতর তিক্ততা, যুদ্ধ ও ধ্বংস ডেকে আনবে।
-এদিন জেনেভা থেকে ‘দি ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিষ্টস’ শেখ মুজিবের গোপন বিচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের নিকট এক জুরুরী তারবার্তা প্রেরণ করে। (সংবাদপত্র)
-এদিন ক্যাপ্টেন রবের নেতৃত্বে পাঁচটি মুক্তিবাহিনী কোম্পানি শাহবাজপুর (লাতু) রেল ষ্টেশনে ৩১- পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি ও রাজাকারদের অবস্থানের ওপর একযোগে আক্রমণ করে। একটি কোম্পানি বিয়ানীবাজার থেকে সাহায্যের সকল পথ বন্ধ করে দেয়। এই যুদ্ধে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এ দিন ত্রিপুরায় মূখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লালা সিংহ অরুজতীনগরে এক বক্তৃতায় বলেন, পাক সামরিক সরকার পূর্ব বাংলার লক্ষ লক্ষ নরনারী শিশুকে এ রাজ্যে শরণার্থী করে পাঠিয়েছে । আরো বহু সংখ্যক অন্তর্ঘাতকও এই রাজ্যে প্রবেশ করেছে। সীমান্তে ভাইবোনেরা পাক হানাদারদের গুলিতে মারা যাচ্ছে, এর উপযুক্ত জবাব আমাদের দিতে হবে। (সংবাদ, আগরতা)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী