You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.26 | ৯ ভাদ্র, ১৩৭৮ বৃহস্পতবার, ২৬ আগষ্ট ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৯ ভাদ্র, ১৩৭৮ বৃহস্পতবার, ২৬ আগষ্ট ১৯৭১

 

এদিন ঢাকায় মুক্তি্যোদ্ধারা গেরিলা অপারেশন চালায়। মেজর খালেদ মোশারফ এ অপারেশনের নাম দিয়েছিল ‘সিটি টেরোররাইজিং অপারেশন’। এ সব অপারেশনের ফলে ঢাকায় পাকসেনারা কাঁহা মুক্তি বলে রাস্তায় রাস্তায় চিৎকার শুরু করে। সমস্ত শহএ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরাই বিদ্রোহ করেছে-এই ছিল আজ পেশোয়ারে সংবাদ সম্মেলনে গোলাম আযমের দেয়া বক্তব্যের সারমর্ম। তিনি জানান, সাধারণ জনগণ পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্যে জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নেতা শফিকুল ইসলাম মুসলিম লীগ একত্রীকরণের পর জমিইয়াতে উলামায়ে ইসলামকে আহ্বান জানান তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্যে।

হানাদার ও রাজাকাররা এ সময় মুক্তিযোদ্ধার আক্রমণে মরিয়া হয়ে ওঠে। সিলেটের চরখায়েরে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধারা একটি দলকে সম্পূর্ণরূপে হত্যা করে রাজাকাররা।

টাঙ্গাইল শহরের তিন মাইল দূরে জলপাই গ্রামে মাইন ও গ্রেনেডসহ আটক করা হয় দ’জন মুক্তিযোদ্ধাকে। এদের একজনকে তখনই গুলি করে হত্যা করে রাজাকাররা।

রাজাকার, মুজাহিদ বাহিনী, গ্রামরক্ষী বাহিনী এসব গঠন করার পর এ সময় পাক-হানাদাররা সিদ্ধান্ত নেয় শিল্পরক্ষী বাহিনী গঠন করার।

পাকিস্তানী বর্বরতা, অত্যাচার প্রতিবাদ করে বাঙালীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে সিনেটর টেড কেনেডী আজ মার্কিন জাতীয় প্রেসক্লাবে বক্তৃতা করেন। মাত্র কয়েক মাস আগে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের কারণে লাখ নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-শিশু ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেছেন, শরণার্থী শিবিরগুলোয় মানবেতর অবস্থার মাঝে বসবাস করছেন তারা। খুবই করুণ তাদের অবস্থা। শিশু আর বৃদ্ধদের অবস্থা সবচাইতে খারাপ। তাদের জন্যে দ্রুত সাহায্য প্রয়োজন। (সংবাদপত্র) উল্লেখ্য ২৪-২৫ আগষ্ট জেনেভায় পাক রাষ্ট্রদূতের গোপন আলোচনা সংবাদ উল্লেখ করে বলে যে, “আওয়ামী লীগ ও বাস্তুহারাদের প্রতি সিনেটর কেনেডীর সমর্থনের ফলে পাকিস্তানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাছাড়া, চীন বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে রাজী নয়।“ (৩০ অক্টোবর, ফ্রন্টিয়ার)

রুমানিয়ার পাগওয়াশে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন। (২৬ থেকে ৩১ আগষ্ট ) এখানে বাংলাদেশ বিষয়ক কমিটি বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্বে পাকিস্তানে সৃষ্ট নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে সমগ্র বিশ্ব পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন।

বাংলাদেশের ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে চীনের ভূমিকার সমালোচনা করে ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এদিন একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ভারত-সোভিয়েত চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে চীনের সঙ্গে অমন চুক্তি করার জন্যে আহ্বান জানায় পার্টি। সকল দ্বন্দ্ব  পরিহার করে অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনুরোধ করে তারা। পূর্ব বাংলার পাকিস্তানী বর্বর আক্রমণে চীনের নীরবতায় তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করে। এদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জেনারেল ইয়াহিয়ার প্রতারণামূলক কাজের সমালোচনা করে সংবাদ পর্যালোচনা প্রচারিত হয়। গণতান্ত্রিক রায়কে নিষ্ঠুর হাতে দমনের পর ইয়াহিয়া জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের দায়িত্ব পালনের আহবানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলা হয়…।“ বড় দেরি হয়ে গেছে।  এ আবেদন আজ শুধু মানুষের মনে বিদ্রুপ, ঘৃণা আর ধিক্কারই সৃষ্টি করবে। ”

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী