১৯ ভাদ্র ১৩৭৮ রোববার ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে গোয়ালহাটিতে পাকহানাদার বাহিনীর তিন দিক থেকে ষ্ট্যাণ্ডিং পেট্রোলকে আক্রমণ করে। সহযোদ্ধা সিপাই মুস্তফা, ল্যান্স নায়ক নাননু মিয়া ও ল্যান্স নায়ক নূর মোহাম্মদ পশ্চাৎ অপসারণ করতে বললেন।নূর মোহাম্মদ পিছু হটার প্রতিবাদ করেন। হঠাৎ পাকসেনার মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদ মারত্মক আহত হন। ঐ অবস্থায় তিনি শত্রুর প্রতি গুলি চালানো অব্যাহত রাখলেন। যাতে সিপাহী মোস্তফা এবং সিপাহী নান্নু মিয়া পিছু হটে যেতে পারে। তাঁর এই অকুতোভয় সাহস ও শত্রুর মোকাবেলা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। ল্যান্স নায়েক নুর মোহম্মদ পিছু না হটে সেখানেই তিনি শাহাদৎ বরণ করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভুষিত করেন।
-স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশ্য প্রচারিত এক ভাষণে প্রধান মন্তী তাজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, শত্রু অর্থনীতিতে বানচাল করার জন্য আমাদের দৃঢ় নীতি, জলে স্থলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জ্বল সাফাল্য শত্রুর সম্পূর্ণ পরাজয়ের দিনটিকে নিশ্চিতরূপে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।‘আপোষের প্রস্তাব’ প্রসঙ্গে জনাব তাজ উদ্দিন বলেন, এসব প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা। আমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের সংকল্পকে দুর্বল করা। (সাঃ জঃ বাঃ)
-ফরিদপুর জেলার নরীয়া থানার ওপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে একজন পাক-পুলিশ অফিসার সহ তিনজন পুলিশ এবং ১৬ জন রাজাকারকে খতম করে।
-কুমিল্লার লাকসাম বাজার, নেত্রকোনায় ধর্মপাশা ও রাজশাহীর দুর্গাপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ।
-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব জেনারেল ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত হিসেবে মস্কো যাত্রা করেন। এ প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে প্রকাশিত মন্তব্যে বলা হয়, জল্লাদ ইয়াহিয়ার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এম এম আহমদ যেমন মে-জুনে লন্ডন-ওয়াশিংটন-প্যারিস-বন প্রভৃতি স্থানে দৌড়াদৌড়ি করে খালিহাতে ফিরে এসেছিল, তেমনি ইয়াহিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা-কাম-পরারাষ্ট্র সচিব মস্কো থেকে খালি হাতে ফিরে গেছেন। (সাপ্তাহিক জয়বাংলা ১৭,৯,৭১)
-মুক্তাগাছা ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধা সংঘর্ষ।
-পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যেসব এম এন এ, এমপিএ সরকারী কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষময়া প্রযোজ্য হবে না।
-৪০ জন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মুজিবনগর প্রাধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বিরুদ্ধে অনাস্থা ঘোষণা করেন। এই প্রস্তাবের নেতৃত্বদেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাৎ ও শেখ আব্দুল আজীজ। আঞ্চলিক কমিটি অফিসে তাঁরা কতিপয় প্রস্তাব গ্রহণ করে তন্মমধ্যে ৭ জুলাই জারীকৃত জোনাল কাউন্সিল অর্ডার প্রত্যাহার, কেবলমাত্র আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ দিয়ে জাতীয় মুক্তি পরিষদ গঠন ইত্যাদি দাবী উত্থাপতি হয়।
-পাকপ্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ারখান ১ মার্চ থেকে ৫ সেপ্টম্বর পর্যন্ত অভিযুক্ত দের সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন। যাদের প্রতি সাধারণ ক্ষময়া প্রদর্শন করা হয়েছে, তাদের সশস্ত্র বাহিনী, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ মুজাহিদ ও আনসার বাহিনীর সদস্যগনও রয়েছে।(দৈঃপাঃ)
-পেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আইন কাঠামো (দ্বিতীয় সংশোধনী) আদেস ১৯৭১ জারী করেন জারীকৃত আদেশে জাতীয় অথবা প্রাদেশিক পরিষদের কোন আসন সাময়িকভাবে শূণ্য হলে, আসন শূন্য হওয়ার চার মাসের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে জারীকৃত আদেশে তিন সপ্তাহের মধ্যে উপনির্বাচনের বিধান ছিল।
-ভারত নেপার একযুক্ত ইশতেহারে বলা হয় যে, দুই দেশেই আশা করে যে, শরনার্থীরা যেন তাদের দেশে অতি সত্ত্বর ফিরে যেতে পারে এবং সেজন্য সেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার। (বিডি ১ পৃঃ ১৬১)
-সিলেট সীমান্তে চাতলাপুর হতে মুক্তিফৌজের ক্যাম্প টিলা বাজারে স্তানান্তর করা হয় ৪ নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর সিয়ার দত্ত, এবং সেক্টরের রাজনৈতিক লিয়াজো ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী এম এন এ। মোহাম্মদ আজিজুর রহমান এম পিএ কৈলাশ্বর ও ধরমনগরের রাজনৈতিক লিয়াজোর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য চীফ অব ষ্টাফ কর্নেল রবকে চেয়ারম্যান এবং ডক্টর হাসানকে প্রাশাসনিক অফিসার নিয়োগ করে হবিগঞ্জ জোনাল কাউন্সিল গঠন করা হয়। (১৫ খণ্ড পৃঃ ৩৩৪)
-ফরিদপুর জেলার নড়িয়া থানা ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা একজন পাকিস্তানী পুলিশ অফিসারসহ তিনজন পুলিশ এবং ১৬ জন রাজাকারকের হত্যা করে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী