You dont have javascript enabled! Please enable it! 1962.09.27 | সবার আগে গণতন্ত্রঃ সোহরাওয়ার্দীর ঘোষণা, ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান কর্মসূচীর ব্যাখ্যা - সংগ্রামের নোটবুক

সবার আগে গণতন্ত্রঃ সোহরাওয়ার্দীর ঘোষণা

ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান কর্মসূচীর ব্যাখ্যা

(নিজস্ব সংবাদদাতা)

সেপ্টেম্বর ২৭, লাহোরঃ জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আজ এখানে ঘোষণা দেন যে একটি ইউনিটকে বাধা অথবা সহায়তা প্রদান করা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কর্মসূচীর অংশ ছিল না। তিনি বলেন সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ফ্রন্টিয়ারের মত সাবেক প্রদেশগুলোর কিছু নেতা, ফ্রন্টের প্রোগ্রামে এক ইউনিট অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে জোর-জবরদস্তি করেছিল, কিন্তু এই পর্যায়ে ফ্রন্টের প্রধান কাজ ছিল একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান বাস্তবায়ন, যেখানে পাকিস্তানের জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিফলিত হয়।

জনাব সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের লিগ্যাল সেন্টার আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য প্রদান করেন, যার প্রেসিডেন্ট এবং হাইকোর্ট ও জেলা কোর্ট বার সমিতির সদস্য ছিলেন তিনি।

জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন যে, এটা সত্য যে অনেকেই এক ইউনিটের বিরোধিতা করেছিলেন এবং তারা আবার এটার সমর্থকও ছিলেন। দেশের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে এটি অন্যতম একটি সমস্যা এবং এর সমাধানে যারা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠায় অনুরাগী তাদের উচিত জনসমর্থিত নেতাদের নিয়ে এক সাথে বসে মতবিনিময় করা এবং একে অপরের চাহিদা অনুযায়ী সামঞ্জস্য বিধান করা। এভাবেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সমস্যার নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।

তিনি এক ইউনিট বিরোধীদের মনোভাব উপেক্ষার ব্যপারে দৃঢ়ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, যারা এর সমর্থক তাদের উচিত এর বিরোধীদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা। তিনি বলেন, পাঞ্জাবে, এক ইউনিটের পক্ষে অনেক সমর্থন রয়েছে বলে তিনি জানেন। কিন্তু দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এর বিরোধীরাও আছে, “আপনি এটা(এক ইউনিট) জোর করে তাদের গলধঃকরণ করাতে পারবেন না, কারন এমনটি করে আপনি তাদেরকে ধবংস করে ফেলবেন।” তিনি আরও বলেন, “সবার জন্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং ন্যায্যতা প্রতিবিধান করাই হবে ফ্রন্টের নীতি”।

পিপিএ যোগ করেনঃ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতা জনাব এইচ এস সোহরাওয়ার্দী আজকে ঘোষণা দেন যে এক ইউনিটের সংরক্ষণ বা ভাঙ্গন, ফ্রন্টের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত নয়।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জনপ্রতিনিধিরাই পারস্পরিক যোগাযোগ এবং আলোচনার মাধ্যমে এই প্রশ্নের সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

জনাব সোহরাওয়ার্দী, যিনি তার সম্মানার্থে হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পাকিস্তান লিগ্যাল সেন্টারে এক বক্তব্য পেশকালে বলেন, গণতন্ত্র ছিল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের মৌলিক মতবাদ এবং প্রমাণিত হবেযে গণতন্ত্রই হচ্ছে সকল সমস্যার সমাধান। 

ব্যাক্তিগত মতামত গুরুত্বপূর্ণ নয়

পাকিস্তান লিগ্যাল সেন্টারের প্রেসিডেন্ট, জনাব সোহরাওয়ার্দীকে একজন প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেন যে এক ইউনিট সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর’ বিবৃতি দিয়ে তিনি তার নিজস্ব আন্দোলনের ক্ষতিসাধন করছেন কি না। জবাবে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন যে তার বিবৃতিতে কোনরকম ‘অস্পষ্টতা’ছিল না এবং তিনি এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, এক ইউনিট-এর ভাঙ্গা বা সংরক্ষণ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কর্মসূচীর অংশ হিশেবে গঠিত হয় নি ।

“আমরা গণতন্ত্র চাই বা আমরা চাই না – এই প্রশ্নটিই আমাদের সামনে” জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন।

তিনি আরও বলেন, “এক ইউনিটের পক্ষে যারা আছেন তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো এর বিপক্ষে যারা আছেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে চেষ্টা করার। যদি পারস্পরিক কোন সমঝোতা না থাকে, তাহলে সবকিছু ভেঙে পড়ার মত বড় বিপদ হতে পারে”।

এক ইউনিট সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত অভিমত কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয় বলে জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন, “আমার একটি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এবং এখনও সেটা আছে কিনা আমি সেটা বলতে যাচ্ছি না”।

এর আগে, বিশিষ্ট আইনজীবীর সমাবেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হয় যখন জনাব সোহরাওয়ার্দী বক্তৃতা দেয়ার জন্যে দাঁড়ানো মাত্র সমাবেশে উপস্থিত কয়েকজন প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় জোর পীড়াপীড়ি শুরু করেন। সমাবেশের বাকি মানুষেরাতখন প্রশ্নকর্তাকারীদেরকে চেঁচিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলেন।

জনাব সোহরাওয়ার্দী নিজেই তারপর বলেন যারা যারা তার কথা শুনতে চান, তারা হাত উঁচু করুন। এবং তারপরে হাত উঠানোর একটি সাধারণ হুল্লোড় বয়ে গেল।

জনাব সোহরাওয়ার্দী: “যারা আমার কথা শুনতে চান না, দয়া করে তারা হাত তুলুন”। ভিন্নমত পোষণকারী একটি হাতও কাউকে উঠাতে দেখা যায় নি।