You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.08 | ২২ ভাদ্র ১৩৭৮ বুধবার ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২২ ভাদ্র ১৩৭৮ বুধবার ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

-অধ্যাপক সমরগুহ বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠনের জন্য শ্রী ডিপিধর এবং পররাষ্ট্র সচিব টি এন কাউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। ষ্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশঃ সোভিয়েত সাহায্য ও সমর্থন লাভের নামে জোর করে তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে পরিবর্তন ঘটনোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সার্দান এভিন্যুর বিড়লা ললিতকলা একাডিমীতে বাংলাদেশের ষোলজন চিত্র শিল্পীর শিল্পকর্মের এক প্রদর্শনী শুরু হয়। প্রদর্শনী ১৩ সেপ্টম্বর পর্যন্ত খোলা থাকে। অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশের খ্যাতনামা চিত্র শিল্পী কামরুল হাসান, দেবদাস চক্রবর্তী স্বপন চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ, চন্দ্র শেখর, মোস্তফা মনোয়ারের ছবি রয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য পাক প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষণা করা হয়। এই দলের সদস্যরা হচ্ছেন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদদ আলী (দলনেতা), শাহ আজিজুর রহমান, জুলমত আলী খান, বিচারপতি জাকিউদ্দিন, ব্যারিষ্টার কামাল ফারুকী ডঃ বেগম এনায়েতউল্লাহ, মিসেস রাজিয়া ফয়েজ, ডঃ ফাতেমা সাদিক্ম এডভোকেট এ টি সাদী, এডভোকেট খোকন বাবর প্রমুখ।

-বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে পাঁচটি সংগ্রামী দলের প্রতিনিধিদের সমবায়ে মন্ত্রীসভার পরামর্শদাতা কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহম্মেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহম্মেদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অধ্যাপক মোজাফফর আহম্মেদ, কমিউনিষ্ট পার্টির কমরেড মনি সিং, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং জাতীয় কংগ্রেসের শ্রীমনোরঞ্জন ধর। আওয়ামী লীগের দু’জন প্রতিনিধি এই কমিটির অন্তর্ভূক্ত হলেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন এই কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য মুজিবনগরে অনুষ্ঠিত এ উপদেষ্টা কমিটির প্রথম বৈঠকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারই যে বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ সরকার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের আবিসংবাদী জাতীয় নেতা এ সত্যাটি আকুন্ঠ অভিব্যাক্তি দেখা গেছে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে জাতীয় দৃষ্টি ভঙ্গীর এই সমঝোতা ও অভিন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের গপপ্রজাতন্ত্রী সরকার এবং এই সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির মধ্যে স্বাভাবিক চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু রয়েছে উদ্দেশ্য ও লক্ষগত ঐক্য। এই লক্ষ্য হল বাংলাদেশের পূর্ণ জাতীয় স্বাধীনতা। চরিত্রগত পার্থক্যের ক্ষেত্রে বলা চলে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত একমাত্র সংস্থা, জনগণের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তা কার্যকর করবে সম্পূর্ণ এখতিয়ার তাঁর। অন্যদিকে জনগণের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর করার ব্যাপারে সাহায্য ও সুপরামর্শ দান হবে উপদেষ্টা কমিটির কাজ। তাই এই উপদেষ্টা কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধকে জোরদার করার কাজে একটি বলিষ্ঠ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে বলা চলে। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের সকল এলাকায় স্বাধীনতা এবং হানাদার দস্যুদে চূড়ান্ত পরাজয়ের দিন অবশ্যই তরান্বিত হবে। ( আমি বিজয় দেখিছিঃ পৃ ৩৮২)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী