কামের বেলায় কাজি, কাম ফুরাইলে পাজি। জুনাগড় রাজ্য থাইক্যা ভাইগ্যা যাওইন্যা পেরধান মন্ত্রী স্যার শাহনেওয়াজ ভুট্টোর কেতাবী পােলা, আইয়ুব খানের পােষ্যপুত্র আর সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের এক গিলাসের দোস্ত জুলফিকার আলী ভুট্টো সা’বে এদ্দিনে। আন্তাজ করতে পারছেন যে, ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা তার লগে হাত মিলাইয়া বাঙ্গালি মার্ডার শুরু করলে কী হইবাে, ভিতরে ভিতরে তারে ল্যাং মারনের তালে আছে। তাই জুলফিকার আলী ভুট্টো সা’বে তাঁর বােতলের দোস্ত ইয়াহিয়া খানের উপর খুবই চেইত্যা গেছেন। ভুট্টো সাবের মনে বহুত আশা আছিল, বাঙালি মার্ডার আর আওয়ামী লীগ বেআইনী ঘােষণার পর দোস্ত ইয়াহিয়া তার হাতে ক্ষেমতা দিয়া ফেলাইবাে। কিন্তু হেই গুড়ে বালি। বাঘে একবার মাইনুষের রক্তের গন্ধ পাইলে যেতে ধান ক্ষেতে নাইম্যা আসে, ইসলামাবাদের সামরিক জান্তার এখন হেই অবস্থা। দুনিয়ার মাইনষেরে ভােগা মারনের লাইগ্যা সেনাপতি ইয়াহিয়া বঙ্গাল মুলুকের দখলীকৃত এলাকায় ঠ্যাটা ম্যালেক্যারে দিয়া এখন কী সােন্দর বেসামরিক শাসন কায়েমের বায়ােস্কোপ
২৪৯
দেখাইতাছে। গরু খোঁজা কইর্যা সব হারু পাড়ীর লেতাগাে খুঁইজ্যা খুঁইজ্য মিনিষ্টার বানাইতাছে। ইয়াহিয়া সা’বে ঠিকই বুঝতে পারছেন, এইগুলারে উঠু কইলে উঠবাে, বইট কইলে বইবাে। ছাগলের দুই বাচ্চায় দুধ খায় বাকিগুলা এমতেই ফাল পাড়ে। এইগুলা হেই রকম ফাল্ পাড়ইন্যা ছাগলের বাচ্চা। এরা হইতাছে হারু পাট্টি। পাবলিকে এগাে গতরের মাইদ্দে থু দিয়া ভরাইয়া থুইছে। এর পরেও খান সা’বে আরও ট্রিকস্ করছে। পিপিপি মানে কিনা ভুট্টো সাবের পাকিস্তান পিপলস পার্টির পাঞ্জাব গুরুপের লেতা মাওলানা কাওসার নিয়াজী আর মাহমুদ আলী কাসুরীরে হাত করনের লাইগ্যা টেরাই করতাছে। পাকিস্তানে একাশিজন পিপিপির মেম্বর election-এ জেতনের পর বেকার হইয়া বইস্যা বইস্যা অক্করে ক্ষেমতা পাওনের লাইগ্যা ঘেঁকী মাল হইয়া উডনের গতিকেই সেনাপতি ইয়াহিয়া চান্সিং করছুইন। তু’ কইর্যা ডাকনের লগে লগে হেইগুলা ইয়াহিয়া সা’বের চাইরাে মুড়ার গন্ধ হুংতে শুরু করছে। এই খবর না পাইয়া, লারকানার লাড্ড ভুট্টো সা’বে কী রাগ! বেডায় অক্করে চিল্লায়ে উঠছে, এই রকম টিরিক্স করলে খারাপ কারবার কইয়্যা ফেলামু- আমার লগে মামু আছে। ঠ্যাটা মালেকা বঙ্গাল মুলুকে পিপলস পার্টির লােকরে কোনাে মিনিস্টার না বানাইয়া কবিরা গুনাহ’ করছে। এর পর সদর ইয়াহিয়া পাকিস্তানে আমার ভুখা মেম্বারগাে ভাগাইবার তাল তুলছে- এইডা খুবই খারাপ কাথা। মেলেটারির মাইদ্দে আমারও লােক রইছে। আইয়ুব খানের পােষ্যপুত্র ভুট্টো সা’বে আউর ভী কাহিস্ ইয়াহিয়া সা’বে মানুষের লাশ রাখুন্যা একটা কফিনে তিনটা মরা মুসলিম লীগের লাশ ঢুকাইয়ার টেরাই করতাছে।’- মানে কিনা তিনটা মুসলিম লীগরে একত্র করণের কোশেশ করতাছে। ব্যাস, ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা ভুট্টো ছা’বের খবরের কাগজ ‘মুসাওয়াৎ’-রে ট্রেস্টিং কারবার হিসাবে সাতদিনের জন্যি বেআইনী কইরা থুইলাে। জুলফিকার আলী ভুট্টো চিল্লাইয়া উঠলাে, ঠিক আছে আমার বাড়িতে আর গার্ড লাগবাে না। হারু পাটির লেতাগাে মতাে আমার বাড়িতেই যেসব রাইফেল হাতে গার্ড রইছে হেইগুলার আর দরকার নাইক্যা। আমি কী হারু পাট্টি নাকি? এইদিকে পিপল্স পার্টির মেরাজ মােহাম্মদ জব্বর কাথা কইছে। হেতনে ভাণ্ডা ফুট কইরা এলান করছে ঠ্যাটা মালেকোর under-এ যে বাই ইলেকশন হইতাছে, হেইডা অক্করে বােগা। এর মাইদ্দে আবার কে বা কাহারা ইয়াহিয়া সা’বের Advisor এম এম আহম্মকরে চাকু মারনের গতিকে ছদর ইয়াহিয়ার হগল Advisor-এর লাইগ্যা মেলেটারি গার্ড বাহাইছে।
পাকিস্তানে যখন এই রকম একটা ফাটাফাটি কারবার চলতাছে, তখন এইদিককার কারবার হুনছেন নি? ঠ্যাটা মালেকার মন্ত্রী খুলনার খবরের কাগজের হকার-এজেন্ট জামাতে ইসলামীর মওলানা ইউসুপ্যা একটা জব্বর কাম কইর্যা বইছে। বছরের পর বছর ধইরা খুলনায় যেসব বাড়িতে খবরের কাগজ দিয়া বিল হাতে টেকার লাইগ্য ঘােরাঘুরী করতাে, এইবার বেড়ায় মিনিষ্টার হওনের লগে লগে খুলনায় যাইয়া হেইসব বিশিষ্ট নাগরিক মানে কিনা জেন্টেলম্যানগাে মিডিং Call করছে। একদল নাগরিক
২৫০
মছুয়াগাে লগে মহব্বতের লাইগ্যা, আর একদল মছুয়াগাে ডরে হেই মিটিং-এ হাজির হইলাে। তারপর বুঝতেই পারতাছেন। খুলনার খবরের কাগজের হকার এজেন্ট জামাতে ইসলামীর হারু মাল ঠ্যাটা মালেকার মন্ত্রী মাওলানা ইউসুপ্যা একটা লেকচার দিলাে। হেই লেকচারের মাইদ্দে বেড়ায় কী কান্দন! আমরা এমন এক গণতন্ত্র বানাইছি, যেখানে Election-এ হারলে মিনিস্টার হওয়া যায়। আপনারা এর পর থাইক্যা ইয়াহিয়ামালেকার গণতন্ত্রে Election-এ হারনের লাইগ্যা কোশেশ করবেন। আর থাইক্যা থাইক্যা মুছলমান মুছলমান ভাই ভাই’ কইর্যা চিল্লাইবেন। চান্স পাইলেই বাঙালি Murder করবেন। তা হইলেই মিনিষ্টার হইতে পারবেন। এলায় কেমন বুঝতাছেন।
আল্কা মেরহামত মিয়া অক্করে ফাল্ পাইড়া উঠলাে। আমি কইলাম, আমাগাে ছকুরে আইজ দেখতাছি না কেন? মেরহামত মিয়া একটু Angle কইর্যা চোখ মাইরা কইলাে, ভাই সা’ব ছুকু U.G.গেছে, মানে কিনা Under ground-এ গেছে- আঃ হাঃ ভাগছে, ভাগছে! ঠ্যাটা মালেকা ঢাকার থনে মিনিস্টার বানাইবার জন্যি বলে ছক্করে খোঁজাখুঁজি করতাছে। মিনিষ্টার মাওলানা ইসাহাক হেইদিন বােমা খাওনের পর থাইক্যাই ছক্কু গায়েব হইয়া গেছে। হ-অ-অ-অ এইদিকে রেডিও গাইবী আওয়াজ এক জব্বর কাথা এলান কইর্যা বইছে। কইছে, ৩১শা অক্টোবরের মাইদ্দে যাগাে কাছে যত শিশু খাদ্য মানে হরলিকস, ওভালটিন, গ্লাস্কোর স্টক আছে স-অব গবর্ণমেন্টেরে জানাইয়া গুদামের ঠিকানা পর্যন্ত লিইখ্যা দিতে হইবে।’ ঢাকা টাউনের মাইল তিরিশেকের মাইদ্দে ঘােড়াশাল, আশুগঞ্জ, ডেমরা, কাঁচপুর, বৈদ্যের বাজার, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, আড়াই হাজার, মির্জাপুর- এইসব জায়গার বগল দিয়া বিচ্ছুগুলার কারবার শুরু হওনের গতিকেই গবর্ণমেন্ট এই অর্ডার দিছে। এর মাইদ্দেই আড়াই হাজার Power station গুড়া হইছে, তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইন গায়েব, ভায়া কালীগঞ্জ হইয়া সিদ্দিরগঞ্জ থাইক্যা ঘােড়াশাল পর্যন্ত যে লাইনে বিজলী যাইতাে, হেইডা ছেরাবেরা হইছে। তাই গবর্ণমেন্ট অফিসার আর দালালরা চিন্তা করতাছে- এরপর শীতের মাইদ্দে বিচ্ছুগুলা গাবুর মাইর শুরু হইলে তাে ঢাকার হগ্গল supply বন্ধ হইবাে- তখন গেদা পােলাপানগাে বাঁচামু কেমতে? হেইর লাইগ্যা আগের থনেই শিশু খাদ্য জোগাড় করণের লাইগ্যা এই নতুন কিসিমের আর্ডার দিছে। বেডারা এখন চাল, ডাইল, লবণ, কেরাসিন তেল, ম্যাচ বাত্তি, কাড়ুয়ার তেল, শিশু খাদ্য স্টক করণের বুদ্ধি করছে।
এই দিককার খবর হুনছেন নি? কইছিলাম না, বিগুলার Regular সােলজারের ট্রেনিং পরায় Complete হইয়া গেছে। শীতের মাইদ্দেই গাজুরিয়া মাইর শুরু হইবাে। অখন হেই খরব আইছে। শনিবার দিন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্ত এলাকায় কয়েকশ’ Commissioned অফিসারগাে ট্রেনিংComplete হওনের পর সার্টিফিকেট দিছে। খাইছে রে খাইছে, এদ্দিন ধইর্যা বিচ্ছুগুলার গেরিলা মাইরেই হাজার হাজার মছুয়া খতম হইছে। এইবার কামান লইয়া। মুক্তি বাহিনীর Regular সােলজাররা বাইড়াইন শুরু করলে না জানি কী অবস্থা হয়।
২৫১
বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার খাল-খন্দক, নদী-নালা, ঝােপ-জঙ্গল সবই তাে এগাে অক্করে মুখস্থ আর লগে রইছে গেরামের হগ্গল মানুষ। বুঝছি, বুঝছি, বাঙালিরা আবার একটা রেকর্ড কইরা বইবাে। এইবার সবেবরাতে আল্লায় বেবাক মছুয়াগাে মউত এই বঙ্গাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মাইদ্দে লিইখ্যা থুইছে। এই খবর না পাইয়া জেনারেল হামিদ খান, মেজর জেনারেল আকবর খান, মেজর জেনারেল গুল হাসান, লেঃ জেনারেল টিক্কা খান আর সি.এস.পি. রােয়েদাদ খান- এম এম আহম্মকের দল সেনাপতি ইয়াহিয়ারে দিয়া কাশ্মীর বর্ডার থাইক্যা হায়দ্রাবাদ সিন্ধু পর্যন্ত আড়াই লাখ মছুয়া সােলজার খাড়া কইর্যা খালি চিল্লাইতাছে, “হে আমেরিকা, হে জাতিসংঘ আমারে আটকাও, আমি খুব চেইত্যা গেছি। আমি ইন্ডিয়া Attiack করমু। কী সােন্দর বুদ্ধি করছে! ইণ্ডিয়া Attack করলেই তাে দুনিয়ার হলে আইস্যা সালিশ করবাে। কিন্তুক মওলবী সা’ব ইন্ডিয়ার ব্যবস্থা ইন্ডিয়াই করবাে- এই দিকে বঙ্গাল মুলুক সামলাও। চীনে যেই রকম আমেরিকান মাল-পানি আর অস্ত্রপাতি লইয়াও চিয়াং-এর দল মাও বাহিনীর বাড়ির চোটে গাঙ পার হইয়া ফরমােজাতে ভাগছিল, বঙ্গাল মুলুকেও হেইরকম মুক্তি বাহিনীর গাবুর মাইরের চোটে আপনাগাে ভাগতে হইবাে। কিন্তুক বঙ্গালমুলুক থাইক্যা আজরাইল ফেরেশতার কোল ছাড়া আর তাে ভাগনের জায়গা নাইক্যা? হেরপর বুঝতেই পারতাছেন, আইজ যেমন চীনের লগে মহব্বত করণের লাইগ্যা আমেরিকা দিল জারে জার কইরা দিতাছে; বঙ্গাল মুলুক থাইক্যা মছুয়া Clear হওনের লগে লগেই আবার আমেরিকা বাঙালিগাে লগে সম্পর্ক করণের লাইগা কাউ কাউ কইরা উঠবাে। সেনাপতি ইয়াহিয়া তখন কইবাে, কেউ ইয়াদ আ রাহা হায়, গুজরে হুয়ে জামানা। হের লাইগ্যাই কইছিলাম, কামের বেলায় কাজি, কাম ফুরাইলে পাজি।’