গ্যাড়াকল । সেনাপতি ইয়াহিয়া এখন জব্বর গ্যাড়াকলে পড়েছেন। যে কামের মাইদ্দেই হাত দিতাছেন, হেই কামই গড়বড় হইয়া যাইতাছে। কেইসটা কি? পয়লা নিজের মেলেটারি খাড়া কইর্যা ইলেকশন করাইলাে। ব্যাডায় ভাবছিল এক ঢিলে দুই পাখি মারবাে। দুনিয়ার মাইনষেরে বুঝাইবাে জন প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দেওনের লাইগ্যা হের দিলডা খালি জারে জার করতাছে। পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যখন তার পকেটের মাইদ্দেই রইছে তখন বাংলাদেশ থনে তিনডা মুছলিম লীগ, জামাতে ইসলাম, পি.ডি.পি নেজামে ইসলাম জমিয়তে ইসলামের ফকা, ফরিদ, ছবুর-ঠাণ্ডা, আলিম-কাদের, খাজাআজম, কাসেম, শফিকুল, চুষ পাজামা-এরা মিইল্যা ধর্মের জিগির আর মাল-পানি খরচ কইর্যা কিছু সিট পাইলেই তাে’ কেল্লা ফতে। কিন্তুক ইলেকশনের মাইদ্দে হগল দালাল মহারাজই হুইত্যা পড়লে এলায় উপায় কি? আওয়ামী লীগ ১৬৯টা সিটের ১৬৭টা সিট দখল করণের গতিকে মওলবী সা’ব নতুন ট্রিক্স করলাে। এই ট্রিক্স-এর নাম
১৯৬
মাখনবাজী’। সেনাপতি ইয়াহিয়া তার গলার আওয়াজ খু-উ-ব নরম কইর্যা শেখ মুজিবরে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী বইল্যা ডাক দিলাে। কিন্তু ডাইল গললাে না।
এইবার ইয়াহিয়া ছা’ব ভুট্টোর লগে গুফতাগু কইর্যা আকা পার্লামেন্টের অধিবেশন বন্ধ করলাে। উনি Think কইর্যা দেখলেন, এমতে কইর্যা চাপ দিলে যদি শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ কাইত হয়। কিন্তু জবাবে শেখ সাহেব শান্তিপূর্ণ অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। এইবার ব্যাড়ায় আলাপ-আলােচনা শুরু কইর্যা তলে তলে। পশ্চিম পাকিস্তান থাইক্যা আরাে সৈন্য আনলেন। হের পর কথা নাই বার্ত নাই Internal Affair কইয়া বেশুমার মানুষ মার্ডার কইর্যা বাহাত্ত্বর ঘণ্টার মাইদ্দে বাংলাদেশ কন্ট্রোল করণের লাইগ্যা হের চিরকিৎ হইলাে। কিন্তু বাহাতুর ঘণ্টা কেন বাহাত্ত্বর দিনেও কিছুই হইলাে না। বছরের পর বছর ধইর্যা ভইষ্যা ঘি আর ডালডার পরাটা খাইয়া যে সােলজারগুলার গতরের মাইদ্দে জেল্লা দিতাছিল বিক্ষুগুলার কোবানীর চোটে হের পরায় দুই ডিভিশন হয় বাংলাদেশের কাদ্যোর মাইদ্দে হুইত্যা পড়তাছে, না হয় গতরের মাইদ্দে ব্যান্ডেজ বাইন্দা কাতরাইতাছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া তার Prestige ঢিলা হওনের গতিকে লাহাের রেঞ্জার্স, নর্দান রেঞ্জার্স, সশস্ত্র পুলিশ, গিলগিট স্কাউট, গায়ের এলাকার ফৌজ, যারেই হাতের কাছে পাইলাে সব বঙ্গাল মুলুকে পাডাইলাে। কিন্তুক Position আরাে খতনাক হইয়া পড়লাে। এই টাইমের মাইদ্দে হাজারে হাজার গেরিলা ট্রেনিং লাইয়া বাংলাদেশে ছড়াইয়া আরে মাইর-রে মাইর ।
এইবার ছদর ইয়াহিয়া তার দালাল ফকা-ফরিদ-হরিবল, ছবুর, ঠাণ্ডা-আজমগাে লইয়া ঘেটু-সরকার বানাইতে চাইলাে। তার জানি দোস্তরা পর্যন্ত কইলাে, এইগুলা তাে হারু পার্টির দল- এইগুলা দিয়া কাম হইবাে না। কইলকাত্তার আদি নিবাসী উর্দুভাষী আলহাজে জহির উদ্দিন ময়দানে নামলাে- যদি কিছু আওয়ামী লীগ মেম্বাররে জালে ধরা যায়। চেহারাডারে বাংলা অংকের পাঁচের মতাে কইর্যা হাজী সা’বে বায়তুল মােকাররমে জুম্মার নামাজ আদায়ের পর কুর্মিটোলায় যাইয়া ইয়া আল্লাহ্ তুমি কি করলা’ কইয়া দম ফালাইলাে। লগে লগে বহু চোটপাট কইর্যা বেগম আখতার সােলেমান স্পিশাল মিশনে করাচীর থনে ঢাকায় আইলাে। চারদিকে খালি হারু পার্টির নেতা ছাড়া আর কাউরেই বেগম সাহেবানের নজরে আইলাে না। বহুত টেরাই করণের পর মহিলা অক্করে লন্ডনে ভাগােয়া।
এলায় খান সাহেবে ২৭শা জুন এক বেতার বক্তৃমা দিয়া কইলাে, “আওয়ামী লীগরে বেআইনী ঘােষণা করছি বটে, কিন্তু Individual Capaciy তে হেরা মেম্বার রইছে। আমি শিঘ্রী ইনকোয়ারি কইরা কিছু মেম্বাররে ভালাে লােক বইল্যা সার্টিফিকেট দিলে হেগাে মেম্বারশিপ থাকবাে- বাকিগুলার কাছ থনে কৈফিয়ত লইয়া উপনির্বাচন কইর্যা পার্লামেন্ট বানামু। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
এর মাইদ্দে আবার পশ্চিমী দেশগুলার চাপে মওলবী সা’ব রিফিউজি ফেরত লওনের লাইগ্যা Reception centre খুইল্যা রেডিওর মাইদ্দে কি কান্দন! মনে লয় লায়লী-মজনু আর শিরি-ফরহাদের পালা শুরু হইছে। দিনা দুইয়ের মাইদ্দে ঘােষণা কইর্যা বইলাে হাজারে হাজার রিফিউজি ফেরৎ আইতাছে। কিন্তুক একজন সাদা চামড়ার রিপাের্টার
১৯৭
Reception Centre গুলা ঘুইর্যা রিপাের্ট দিলাে, একটা সেন্টারে মাত্র গােটা ছয়েক ঘেঁকি কুত্তা ছাড়া অর কিছুই দেখতে পাই নাইক্যা। জাতিসংঘের প্রতিনিধি প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান কইলাে, রিফিউজি ফেরৎ গেলে হেগাে লাইফের Risk নিতে পারি না । বাইস জঙ্গী সরকারের হগল কেরামতি ফাঁস হইয়া গেল। দুনিয়ার মাইনষে হাড়ে হাড়ে বুঝলাে বাংলাদেশে Normal হওয়া তাে দূরের কথা হেইখানে দারুণ গ্যানজাম। চলতাছে। আর এর মাইদ্দে শুরু হইছে বিক্ষুগুলার ক্যাচকা মাইর।
এইবার সেনাপতি ইয়াহিয়া নতুন ট্রিক্স করলাে। ব্যাডায় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর লগে আলােচনার প্রস্তাব দিলাে। যদি কোনােমতে ইন্ডিয়ারে এই আলােচনার টোপ গেলানাে যায়, তা হইলে লগে লগে চিল্লাইয়া উঠবাে, কেইসটা পশ্চিম পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মাইদ্দে না, কেইসটা হইতাছে দিল্লী আর ইসলামাবাদের মাইদ্দে। শ্রীমতী গান্ধী ‘ননা’ কওনের লগে লগে ইয়াহিয়া খান চেঁচাইয়া উঠলাে, ‘আমি ইন্ডিয়ার লগে যুদ্ধ করমু- আমার লগে নতুন মামু আছে। তবুও ব্যাডায় পুরা ব্যাপারটারে দিল্লীইসলামাবাদের ব্যাপার বইল্যা প্রমাণ করতে চায়। অ্যাঃ অ্যাঃ ক্যাডা যেনাে ব্যাডার কানের মাইদ্দে কইলাে, ‘বেশি ফাল পাড়িস না। অমতেই খান সা’বে কাউঠার মতাে মাথাডারে ভিতরে ঢুকাইয়া লইলাে। কিন্তু ব্যাডার ট্রিকসের শ্যাষ নাই। আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পত্তি নীলাম করলাে।।
এরপর আওয়ামী লীগের মাইদ্দে ভাঙ্গাভাগি করণের দূরাশায় ইয়াহিয়া-টিক্কানিয়াজীর দল ৮৮ জন আওয়ামী লীগ মেম্বারের আইনী আর ৭০ জন বেআইনী ঘােষণা করলাে। মনে লয় হেগাে এই এলানে আওয়ামী লীগ মেম্বারেরা অকরে দৌড়াইয়া যাইয়া মউতের দরবারে হাজির হইবাে আর কি? কিন্তু তাগাে Propaganda র শেষ নাই । হেগাে ঘােষণায় বেআইনী আওয়ামী লীগ মেম্বারগাে ২৬শে আগস্ট কুর্মিটোলায় হাজির হইতে কইছিল কিন্তু একজনও যায় নাই বইল্যা ১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টাইম বাড়াইছে। | ইয়াহিয়া-টিক্কা-নিয়াজীর মাথায় বুদ্ধি অক্করে গিজগিজ করতাছে। এইদিকে আওয়ামী লীগের হগ্গল মেম্বাররা মুক্ত এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে শামিল হইছেন। মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের গাবুর মাইরের চোটে যখন চট্টগ্রাম চালনা বন্দরে দশটা জাহাজ ঘায়েল হওনে বাকীগুলা ভাগছে, সিলেট এলাকায় হানাদারদের স্টিমার, লঞ্চ, গাধা বােট গেরিলারা দখল করছে। খুলনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লায় বিরাট এলাকা মুক্ত হইছে, পেরতেক রাত্রি ঢাকা টাউনে বিক্ষুগুলার হেইকাম চলতাছে, বাড়ির চোটে জঙ্গী সরকার আদম শুমারী পর্যন্ত এক বছরের লাইগ্যা পাউছাইয়া দিছে। পিআইএর আরাে সােলজার মউতের মুখে ঢওয়াইতাছে আর ইয়াহিয়া খান নিজেই পশ্চিম পাকিস্তানে রক্ত সংগ্রহের আবেদন করছে, তখনও ব্যাডায় ট্রিসের পর ট্রিক্স করতাছে। হগগলের শ্যাষে মরা গবর্ণর বহাইয়া আবার ট্রিক্স।
কিন্তুক কইছিলাম না গ্যাড়াকল। সেনাপতি ইয়াহিয়া অখন জবর গ্যাড়াকলে পড়ছেন। যে কামের মাইদ্দেই হাত দিতাছেন, হেই কামই গড়বড় হইয়া যাইতাছে। ইয়ে কেয়া মুসিবত?
১৯৮