হয়ে গেছে। হেগাে কুফা অবস্থা হয়ে গেছে। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের হানাদার বাহিনীর লগে আইজ-কাইল একজন কইর্যা মওলবীসাব দিতাছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা বাহিনীর আঙ্কা আর আন্ধারিয়া মাইর খাওনের পর যহন হেগাে সােলজাররা শেষ দমডা ফালাইবার জন্য শরীলডা খিচূতে শুরু করে, তহন এই মওলবী সা’বে এটুক আল্লাহর নাম হুনাইয়্যা দেয়। ব্যস, লাহােরে যে পােলাডা পয়দা অইয়া পয়লা দম পাইছিল, আমাগাে ভুরুঙ্গামারীতে হেই ব্যাডায় আখেরী দমডা ছাড়লাে। এরপর ক্যাদোর মাইদ্দে হােতনের পালা- আর কোনাে নিশানা রইলাে না।
আগেই কইছিলাম এক মাঘে শীত যায় না। অহন এগুলা কি হুনতাছি? পয়লা দিকে বাংলাদেশে ইয়াহিয়া-সা’বের সােলজাররা যেমন শতশত মাইলাই করছিল, অহন আবার বিচ্ছুর লাহান পােলাগুলা হেইখানে দিয়েন বিয়েন ফু করতাছে। এর মাইদ্দেই এইসব গেরিলারা রাজশাহী, চিটাগাং, কুমিল্লা আর ঢাকাতে বােমাবাজি করছে। সাতক্ষীরা, যশাের, ঠাকুরগাঁ, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ আর নােয়াখালীর অনেকগুলা জায়গা অহন মুক্ত এলাকা হয়ে গেছে। পিডানীর চোটে হেতাইনরা ভাগােয়াট হইছে। হের মাইদ্দে আবার হেগাে জখমি সােলজাররা এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেগাে ফালাইয়া আইলে বাকি সােলজাররা ভাবে, গুলি খাইলে তাে অমাগাে এ্যাতেই ফালাইয়া আইবাে। আবার কান্ধে কইর্যা ক্যাম্পে আনলে মেজর সা’বে খুবই গরম হইগ্যা চিল্লায়। কিন্তুক চিল্লাইলে কি অইবাে? বিচ্চুগাে কাম বিচ্ছুরা করবােই।
এইরকম একটা ছ্যাছছেরা অবস্থায় লেঃ জেনারেল নিয়াজী সা’বে বেশি না ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের কাছ থেকে আরও দু’ডিভিশন সৈন্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক নিউজউইক পত্রিকা এখবরটা Disclose কইর্যা কইছে, ভিয়েতনামেও ঠিক এমৃতেই কারবার শুরু হইছিল । নিউজউইক আরাে কইছে, যতই দিন যাইতাছে ততই মুক্তিফৌজরা জোরদার হইয়া উঠতাছে।
এদিকে লাহাের রেডিওর এক ঘােষণায় বলা হয়েছে যে, রাওয়ালপিণ্ডির National Service Directorate General Head Quarters থেকে এইমর্মে এক নির্দেশ জারি করা হয়েছে যে, সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি মিল-ফ্যাক্টরিতেও যেসব জোয়ান লােক কাম করতাছে তাগাে সােলজার হিসেবে ট্রেনিং লওনের জন্য ডাকনের লগে লগে ‘ইয়েস স্যার’ কইয়্যা হাজির হইতে হইবাে। এছাড়া রাওয়ালপিণ্ডির থনে পাঞ্জাবি আর পশতু জবানে এলান করা হইতাছে, নাথিয়াগলি, মনশেরা, আটক, পিন্ডি, মুলতান, মন্টগােমারি, পেশােয়ার, কোহাট আর ডেরা গাজীখাতে সােলজার রিক্রুটমেন্ট চলতাছে। অহন ক্যামন বুঝতাছেন! হেরা কি রকম সােন্দর মউতের রাস্তা ধইরা আগাইতাছে। আলজেরিয়া আর ভিয়েতনামেও ফরাসিরা এই রকম একটা কপিকলে আটকা পড়ছিল। আর অহন কাম্বােডিয়া-ভিয়েতনামে মার্কিনীরা হাইদ্দ্যা শাল নিতাছে।
বাংলাদেশের গেরিলাগাে বাড়ীর চোটে মওলবী সা’বরা অহন ঢাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরাে মজবুত করতাছে। কেন আবার হইলাে ডা কি? হ-অ-অ-অ বুঝছি। হেগাে মােছ নামাইবার টাইম আইছে। হেরা ডরাইছে।
এর মাইদ্দে করাচীর থনে আবার এক জব্বর খবর আইছে। হেই খানকার মর্নিং। নিউজ কাগজে লন্ডন টাইমস্, বিবিসি, ডেইলি টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ান আর বৃটিশ পার্লামেন্টের সফরকারী দলরে Warning দিছে। কেমন ব্যাডা একখান! চামচিকাও একটা পাখি। মর্নিং নিউজ গােস্বা হইয়া কইছে, এইটা কি কারবার হইতাছে, বিদেশ থনে যাগাে লগেই Permission দিয়া বঙ্গাল মুলুক ঘুরবার দিতাছি, হেরাই ছদর ইয়াহিয়া সা’বরে ধােলাই করতাছে? আমাদের মহব্বতের কি কোনােই দাম নাইক্যা? ব্যাডারা কি একটুক মিছা কথা লিখতে পারে না? হেগো ট্যুর করণের Permission দিয়াই ভুল হইছে। এই রকম যদি চলতে থাকে তয় হুঁশিয়ার কইরা দিতাছি, আংরেজগাে লগে কিন্তু আমাগাে Connection cut off হইয়া যাইতে পারে।
মর্নিং নিউজ কাগজটার একটা Colourful History আছে। এই কাগজের জন্ম কইলকাত্তায়। কিন্তু হিন্দুস্তান-পাকিস্তান হওনের লগে লগে কইলকাত্তার মুসলমানগাে থুইয়া এক রাইতে ঢাকায় হাজির। তারপর ১৯৫২ সালে ঢাকায় রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের সময় বাঙালি পােলাপানগাে ইংরেজিতে গা’ল দেওনের জন্যি এই কাগজরে একটুক দুরস্ত করা হইছিল। মানে কিনা ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে এই কাগজের জুবিলী প্রেসরে আগুন লাগাইয়া ছাই বাননাে হইছিলাে। আর এডিটর সা’বে গবর্ণর হাউসে ভাগােয়াট হইয়াছিলেন।
এর পর মর্নিং নিউজ কাগজ করাচীতে হেড অফিস চালান করলাে। আর ঢাকা-করাচী দুই জায়গা থনে ছাপানাের ব্যবস্থা করলাে। বাইশ কপির বেশি সার্কুলেশন হইল না। আর এইদিকে ঢাকা মর্নিং নিউজ পুরানা অভ্যাসে আবার বাঙালিগাে সম্পর্কে কি যেনাে লিছিলাে। ব্যস্ ১৯৬৯ সালে আইয়ুব-বিরােধী গণঅভ্যুত্থানের সময় একদিন লাখখানেক লােক ঢাকার মর্নিং নিউজের নুতন অফিসের দেয়ালে খালি একটা কইর্যা থাপড়া মারলােদেয়াল শ্যাষ। হের পর আগুন- মেসিন, অফিস পুইড়া শ্যাশ।
এই রকম একটা কাগজ ব্রিটিশ প্রেসরে হাঁচা কাথা ল্যাহনের জন্যি ধমকাইছে। যাই কই? এদিকে ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার ব্রিটেনের কাছে তিনটা প্রতিবাদ জানিয়েছে আর ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা মিঃ আর্থার বটমূলীর টেলিভিশন ইন্টারভিউ দেখানাে বন্ধ করেছে। কিন্তু হের মুখ বন্ধ করতে পারে নাইক্যা। মিঃ বটলী যেসব তথ্য প্রকাশ করেছেন, সমস্ত সভ্যজগত তাতে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। কানাডা, পশ্চিম জার্মানি, হাঙ্গেরি, যুগােশ্লাভিয়া, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন হলেই সেনাপতি ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারের কাণ্ডকারখানা Criticise করতাছে। ভুট্টো-হরিবল্বজ্জাত হােসেন কোনাে ডেলিগেশইে আর কোনাে কাম হইতাছে না।
আর এইদিকে কোরবানীর খাসী জবাই-এর পর মাইনষে য্যাতে খাসীর চাম খােলে, হেই রকম মুক্তিফৌজরা অহন হানাদার সৈন্যগাে চাম ছিলতে শুরু করছে। লাহাের রেঞ্জার্স, গিলগিট স্কাউট, নর্দান রেঞ্জার্স, আর্মড পুলিশ, উপজাতীয় এলাকার ফৌজ, 9th আর 12th Division কোনােটাতেই কিছু কাম হইতাছে না। হেরা অহন পুকুরকে দরিয়া আর নদীরে সমুন্দর ভাবতাছে। আর হেই পানির মাইদ্দে অহন চুবানি শুরু হইছে। হবায় তাে সাড়ে তিন মাস হইছে। অহনই কান্দলে চলবাে ক্যমূতে?
হেইর লাইগ্যা কইছিলাম। হয়ে গেছে। হেগাে অহন কুফা অবস্থা হয়ে গেছে।