You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.13 | চরমপত্র ১৩ জুন ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

সারছে রে সারছে! হেগাে কামডা সারছে! সেনাপতি ইয়াহিয়া অক্করে চিৎ হইয়া পড়ছে। ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকার এখন চোখে মুখে সরষের ফুল দেখতে শুরু করেছেন। একাশি নম্বরের সামরিক বিধি একেবারে ব্যুমেরাং হয়ে নিজেদের গায়ে এসে লেগেছে। পাকিস্তানের ধ্বসে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দেয়ার উদ্দেশ্যে আর বাঙালিদের শায়েস্তা করবার জন্যে সামরিক জান্তা রাতারাতি পাঁচশ’ ও একশ’ টাকার নােট বেআইনী ঘােষণা করে যে বগল বাজিয়েছিলেন, সেই বগল অহন অক্করে ফাইট্টা গেছে। করাচী থেকে একটা মার্কিন সংবাদ সরবরাহ সংস্থা খবর দিয়েছে যে, সেখানকার রাস্তাঘাট ও নালাগুলাে হাজার হাজার পাঁচশ’ ও একশ’ টাকার নােটে ভরে গেছে। কি চমক্কার ব্যবস্থা। ইয়াহিয়া সরকার কলমের এক খোচায় ভানুমতীর খেল দেখিয়েছেন। আর খেল না দেখিয়েই বা উপায় কি? দিনকে দিন পরিস্থিতি যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে এখন যে একেবারে গ্যাড়াকলের অবস্থা। 

এদিকে পেশােয়ার আর কোয়েটা থেকে খুবই খারাপ খবর আইছে। ইরান ও আফগানিস্তানের সীমানা বরাবর কাস্টম্স Checking দারুণভাবে কড়াকড়ি করবার নির্দেশ হয়েছে। কেননা এলায় হেগাে পালা। সেখানকার শিল্পপতি আর ব্যবসায়ীরা সব সােনা পাচার করতে শুরু করেছে। | কেন আপনাগাে আবার কি অইলাে? এর মধ্যেই ইয়াহিয়া সরকারের উপর আস্তা

হারিয়ে ফেলেন? বাংলাদেশের দখলকৃত এলাকা থেকে পশ্চিমা শিল্পপতিদের ভাগাে হুয়া রুস্তমের একটা অর্থ বুঝি। কেননা এখানকার কারবার লাটে উঠেছে। এছাড়া দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা এমনকি খােদ ঢাকা শহরেই যখন Action মানে কিনা গেরিলা Action শুরু হয়েছে আর মুক্তিফৌজের কোদালিয়া মাইর শুরু হইছে, তহন টাইম থাকতে কাইট্যা, পড়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু করাচী, লাহাের, কোয়েটা, পেশােয়ার থেকে পাতাড়ি গুটাবার অর্থ কি? নাকি সেখানেও হেই কাম Begin হয়ে গেছে!

করাচীর কন্ট্রাকটারদের মাথা চামড়াতে শুরু করেছে। জুন মাসের মাঝামাঝি। তবু মাল-পানির দেখা সাক্ষাৎ পর্যন্ত নেই। অর্থাৎ কিনা Government থেকে কোনাে পেমেন্টই হয়নি- হবার সম্ভাবনাও নেই। এর সঙ্গে সঙ্গে আবার এখন থেকে ব্যাঙ্কের টাকা তােলাই বন্ধ ঘােষণা করা হয়েছে। এখন বুঝুন কেটা কি? বাংলাদশে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ইয়াহিয়া সা’ব অক্করে পাগলা হয়ে গেছেন। পশ্চিমা দেশগুলাের কাছ থেকে ধারকর্জ পাওয়ার কোনাে আশা নেই দেখে এবার মুসলমান, মুসলমান ভাই ভাই’ শ্লোগান দিয়ে জঙ্গী সরকার আরব দেশগুলাের কাছে একটা Chance নিতে চাচ্ছে। করাচী আর ইসলামাবাদে এখন একেবারে সাজ সাজ রব উঠে গেছে।

শিল্পপতি আর ব্যাংকারদের একটি প্রতিনিধিদল সৌদী আরব, সিরিয়া ও কুয়েত সফরে যাবেন। সেখান থেকে ১০ কোটি ডলার ধার আসবে। গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল। নিজেদের Idea তে নিজেরাই ফাল্ পাড়তে শুরু করেছেন। সৌদী আরবের কাছ থেকে ছ’কোটি আর সিরিয়া ও কুয়েতের কাছ থেকে চার কোটি- এই হচ্ছে একুনে দশ কোটি ডলার। বড় বড় গোঁফ আর ভুড়িওয়ালা জেনারেলদের মুখ থেকে লালা পড়তে শুরু করেছে। যদি আবার কিছু মাল-পানি কামানাে যায়।

কিন্তু একি? মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলাে আবার এর মধ্যেই বাকিতে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদেরও ঘটে কিছু বুদ্ধি আছে তাে। নাকি তাও নাই? ইসলামাবাদের জঙ্গী সরকারের স্টেট ব্যাংক অক্করে সাফা হওনের খবরেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি বলি কি ব্রাদার কসাই- থুকু ব্রাদার ইয়াহিয়া একডা কান্ করবাইন। হগলেই যখন আপনারে ট্যাহা দিতে চায় না। তহন এলায় কাবুলীয়ালাগাে কাছে একবার Chance লউন। আপনার পেয়ারা এম.এম. আহম্মককে এবার তােরখামে পাঠিয়ে দিন। কপালডা ভালাে থাকলে কিছু মাল-পানি পেতেও পারেন। যা পারেন গুছিয়ে নিন। 

কেননা এদিকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা আর ঢাকায় জোর হ্যান্ড গ্রেনেড ছােড়া হয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা আর নােয়াখালীর গ্রামাঞ্চলে আবার দিব্বি জয় বাংলার পতাকা উড়ছে। কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা আর সিলেটে বিচ্ছুর লাহান পােলাগুলা আরামসে মেসিনগান কাঁধে ঘুরতাছে।

এদিকে আপনার হানাদার বাহিনীর সােলজাররা লুট করা টাকার শােকে আর মুক্তিফৌজের কোদালিয়া মাইরের চোটে আন্ধারের মধ্যে আইজ কাইল বাইর হওন বন্ধ

৬৭

কইরা দিছে। হেরা তাে শ্যাষ। বাংলাদ্যাশে হেগাে উপর আজরাইলে আছর করছে। কিন্তুক আপনার লাইগ্যা পরানডা অক্করে ফাইট্টা যাইতাছে। সেইজন্য বলেছিলাম, সারছে রে সারছে। হেগাে কান্ডা সারছে। সেনাপতি ইয়াহিয়া অহন অক্করে চিৎ হইয়া পড়ছে। আর হুইত্যা হুইত্যা ছাড়তাছে। মানে কিনা সামরিক বিধি ছাড়তাছে। একাশিডা হইছে। আর উনিশডা হইলেই শ্যাষ।