You dont have javascript enabled! Please enable it! বসরি ইটভাটা গণকবর - সংগ্রামের নোটবুক

বসরি ইটভাটা গণকবর

রাজশাহী কোর্টের পশ্চিমে আধার মাঠ। তার পশ্চিমে বসবি ইটভাটা। ভাটার পশ্চিমে বসরি গ্রাম। সেই গ্রামের সোলাইমান আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের তখনকার এমএলএসএস। পাকিস্তানি সৈন্যের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যান আব্দুল মজিদ। তিনি জানান, ২৮ রমজান দুপুর ১টা আব্দুল মজিদ তার বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। শুনতে পেলেন পশ্চিম দিক থেকে পাক সেনারা ঘরবাড়িতে আগুন লাগাতে লাগাতে আসছে। গুলি করছে। তার চাচা বুলনপুরের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, সেনারা বসরি গ্রাম আক্রমণ করবে কি না? খলিল তাকে জানায়, সৈন্যরা হারুপুর পর্যন্ত আক্রমণ চালাবে, বসরি গ্রামে ঢুকবে না। তারপরও তার দাদা ইউসুফ মণ্ডলের বাঁধা উপেক্ষা করে বাড়ির দিকে যেতে থাকেন তিনি। তিনি দেখতে পান,পাক সেনারা চারদিক দিয়ে তাঁদের গ্রাম ঘিরে বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়ছে আর ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে। লোকজন পালিয়ে বসরি ইট ভাটা মাঠে আশ্রয় নিচ্ছে। সেখানে গিয়েও পাক হানাদাররা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে নারী, পুরুষ ও শিশুদের।

সে সময় পাক সেনারা তাকে (আব্দুল মজিদ) ধরে ফেলে। এক ক্যাপ্টেন হুইসেল বাজিয়ে আব্দুল মজিদকে দেখিয়ে সৈন্যদের নির্দেশ দেয়, “ও ল্যাড়কাকো লে আও”। মজিদকে ক্যাপ্টেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। তার বাবা সোলাইমান মণ্ডল ক্যাপ্টেনকে ছেলেকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কাজ হয় না। মজিদের সাইকেলটি কেড়ে নেয় সেনারা। এক সেনা কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে, “স্যার, সরকারি নোকরি, হামাড়া আইডি কার্ড…” তিনি বললে ক্যাপ্টেন তাকে জোরে থাপ্পড় মারে। বসরি ইটভাটার পাশ দিয়ে তাকে বুলনপুর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার সময় এক সৈন্য তাকে আছাড় মারে। পথে পরিচিত এক রাজাকার সিরাজুলকে দেখতে পেয়ে মজিদ তার চাচা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে খবর দিতে বললেন। বুলনপুর ক্যাম্পে তাকে আনা হয়। এক রাজাকারকে দিয়ে গামছা আনিয়ে পাক সেনারা তার হাত বাধে। তিনি সেখানে ১৯ জন বন্দীকে দেখতে পান। হারুপুরের হেবু চৌকিদার, সাত্তার, নবগঙ্গার দিন মজুর আলীও রয়েছে তাঁদের মধ্যে।

সেখানে আধারকোঠা খ্রিষ্টান মিশন থেকে ধরে আনা তিনজনকে প্রচণ্ড নির্যাতনের পর জবাই করে হত্যা করে তারা। আগের ক্যাপ্টেন অন্য এক ক্যাপ্টেনকে দায়িত্ব দিয়ে চলে যান। তিনি মজিদকে তার সাইকেল দিয়ে জোরে কমান্ড দিলেন, “এবাউট টার্ন”, এটা শোনা মাত্র তিনি জোরে সাইকেল চালিয়ে সোজা তার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান চাচা খলিলের বাড়িতে যান। ওখান থেকে আসা বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। বাড়ি না ফিরে কর্মস্থল মেডিকেল কলেজে চলে যান। এদিকে, তিনি মারা গেছেন ভেবে তার বাব আঁধার মাঠে ছেলের লাশ খুঁজতে গিয়ে লাশের স্তূপ দেখতে পান। ওখানে তখনও কারো কারো গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে কাউকেই বাঁচাতে পারেননি মজিদের বাবা। (তথ্যসূত্র: ওয়ালিউর রহমান বাবু, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক)