You dont have javascript enabled! Please enable it! পৈরতলা বধ্যভূমি - সংগ্রামের নোটবুক

পৈরতলা বধ্যভূমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার অন্তর্গত পৈরতলা গ্রামের পশ্চিম- দক্ষিণ প্রান্তে তিনটি বিরাট গর্ত আবিষ্কৃত হলে দেখা যায় প্রতিটি গর্তে গাদাগাদি অবস্থায় শত শত মানুষের দেহাবশেষ পড়ে আছে। পৈরতলা গ্রামটি পৌরসভার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এই গর্তগুলো একটি নির্জন এলাকার রেল সেতুর পাশে। বিশ বর্গ গজের প্রতিটি গর্তের গভীরতা ১৫ হাতের বেশি।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, যে ঈদুল ফিতরের দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে সামরিক বহর নিয়ে বহু সংখ্যক পাঞ্জাবি সৈন্য এলাকাটিকে ঘিরে ফেলে। এরপর সেখানে কারফিউ দিয়ে পার্শ্ববর্তী সকল বাড়ি থেকে নারী, পুরুষ, ও শিশু নির্বিশেষে সকলকে খানিক দূরে তাড়িয়ে নিয়ে যায় যাতে আসন্ন হত্যাযজ্ঞের কোনো কিছু কেউ দেখতে না পায়। ৬/৭ জন লোককে গ্রাম থেকে ধরে আনে গর্ত খোড়ার জন্য। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে তাঁদের সবাইকে হত্যা করে গর্তে ফেলে যায়। সন্ধ্যার অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি বড় বাস ভর্তি মুক্তিকামী বাঙালিদের সেখানে নিয়ে আসা হয়। এরপর আধঘন্টা ধরে চলে গুলিবর্ষণ, মানুষের চিৎকার, হাহাকার, বাঁচার করুণ আকুতি। অনেককে জীবন্ত অবস্থায় মাটিচাপা দেওয়া হয়। রাত দশটার পর এক দুঃসাহসী প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাস্থলে এসে তিনটি বড় বড় গর্ত মাটিচাপা অবস্থায় দেখতে পান। বেশ কিছু দূরে তিনি একজন আহত লোককে খাদে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে টেনে তোলেন। আহত লোকটি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে কয়েকশ’ বন্দিকে ধরে এনে এখানে গুলি করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। অনেকের আঘাত গুরুত্বর ছিল না, কিন্তু তাঁদের সবাইকে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হয়।

এখানে নিহত সবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, তাঁদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাক বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েছে তারাই হত্যার শিকার হয়েছেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষকে ধরে এনে এখানে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। এখানেই হত্যা করা হয় তৎকালীন ধানমন্ডি থানার দারোগা শিরু মিয়া ও তার ১৪ বছরের কিশোর ছেলেকে। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যসূত্র: একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১৩৯-১৪০; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ ডা. এম এ হাসান, পৃ.-৩৮৭; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খণ্ড মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৩৬৬-৩৬৭; মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-জয়দুল হোসেন, পৃ.-২০২)।