শহর জুড়ে হত্যাকাণ্ড ও পুরাতন জেলাখানার বধ্যভূমি
মুক্তিযোদ্ধা বাদল ব্যানার্জি জানান, শহরের সার্কটি হাউজে বসে সমস্ত পরিকল্পনা করে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা। শহরের ভিতরে গড়ে তোলে বেশ কয়েকটি ঘাঁটি। রাতের আঁধারে বহু নারীকে ধরে এনে হানাদারদের হাতে তুলে দেওয়া হতো। পাক বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যায় শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতো লাশ আর লাশ। অনেকের লাশ জানাজা ছাড়াই গণকবরে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
পুরাতন জেলখানার ভিতর বধ্যভূমিতে কতজন মুক্তিযোদ্ধা বা সাধারণ নারীপুরুষকে মাটি চাপা দেওয়া হয় তার সঠিক কোন হিসেব না থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা নির্মল কুমার রক্ষিত জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু কিশোরকেও নির্বিচারে হত্যা করা হয়। শহরের পুরাতন জেলাখানা বর্তমানে আনসার ব্যাটালিয়ান দপ্তরে অবস্থান নেয় পাক বাহিনী। কোথাও বাঙালি পেলেই ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করত। তারপরে জেলখানার দক্ষিণ-পুব কোণে মাটি চাপা দেওয়া হতো। ধারণা করা হচ্ছে হাজারের বেশি শহীদকে এখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্যে বলা হয়েছে, জেলখানার গণকবরের প্রতিটিতে ৪/৫জন করে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। অনুমান করা হয়, জেলের অভ্যান্তরে কমপক্ষে ৫শ’ লোককে হত্যা করে বিভিন্ন গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হয়। এঁদের অধিকাংশকেই গুলি করে হত্যা করা হয়। জেলের প্রাচীরের ধার ঘেঁষে বাঙালিদের লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালানো হতো। জেলের প্রাচীরে পাওয়া গেছে অসংখ্য বুলেটের চিহ্ন। দুপুর দুটা থেকে পাঁচটার মধ্যে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হতো। দাবি করা হয়, মেজর নাদির পারভেজের নির্দেশে একদিনের ৬০-৭০ জনকে জেলের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয়। (সূত্র: একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর – সুকুমার বিশ্বাস, পৃ.-১১৫, ৩৫২, ৪৫৩; যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ- ডা. এম এ হাসান, পৃ.-৪২৭-৪২৮; মুক্তিযুদ্ধ কোষ, দ্বিতীয় খণ্ড- মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ.-৩৪০; দৈনিক বাংলা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২; দৈনিক সংবাদ, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৩)