চর বেরুবাড়ি বধ্যভূমি
১৯ শে নভেম্বর তিন প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার সাথে পাকবাহিনীর মুখোমুখি গুলি বিনিময় শুরু হয়। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা গুলি মোকাবেলা করেই পিছু হটতে হটতে দুধকুমোর নদীতে চলে আসে। পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের গুলির কাছে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে যে যার মত করে নদী অতিক্রম করে। তিন চার ঘন্টার যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলে পাক সেনারা গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং চর বেরুবাড়ী স্কুলের ক্যাম্পটি পাক আর্মি দখলে নেয়। স্কুল মাঠে ব্রাশ ফায়ার করে ২০/২৫ জন সাধারণ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এ যুদ্ধে শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন কোম্পানী গুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। তিরিশটির মত আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে হারিয়ে যায়, কোম্পানী কমান্ডার মুহম্মদ শান্সুল হক ২০শে নভেম্বর পুনরায় বেরুবাড়ীতে ঢুকে সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধা বশির এবং আব্দুস সামাদ এর লাশ উদ্ধার এবং আরও ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হবার বিষয়টি নিশ্চিত হন। গ্রামবাসীর মতে পাক আর্মি তাঁদের ২০/২৫টি সৈন্যের লাশ নিয়ে যায় এবং তাঁদের ৫০/৬০ আহত হয়েছে।
অন্য সূত্রে, অক্টোবরের শেষে রমজান মাসে রাজাকার ও ইপিক্যাফের একটি দল বেরুবাড়ি আসে এবং লোকজনের কাছে সোনাদানা, টাকা পয়সা ইত্যাদি দাবি করে। খবর পেয়ে কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নান্নু হামলা চালিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দিয়ে নিরাপদে ফিরে আসে। এদিকে রাজাকাররা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে এসে পাকসেনাদের সঙ্গে নিয়ে আবার বেরুবাড়িতে যায়। তারা গ্রামের দেড় শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয় এবং অনেক নারীকে নির্যাতন করে। গ্রাম থেকে শিশু–যুবক–বৃদ্ধাসহ আড়াইশ’ জনকে বেরুবাড়ি বাজারে ধরে নিয়ে যায়। এদের ১৮ জনকে বেরুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে গুলিতে হত্যা করে। অন্যদের ওপর চালায় নির্যাতন। (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস, দ্বিতীয় খন্ড – আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত, পৃ.-১৮৮–১৮৯)