ধনাঞ্জয়ের খন্দকার বাড়ির হত্যাযজ্ঞ
’৭১ এর ১১ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা থেকে কুমিল্লার আমড়াতলি ইউনিয়নের সর্বত্র প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। গুলির শব্দ শুনে এই এলাকার লোকজন কৃষ্ণপুর–ধনাঞ্জয়–শিবের বাজার হয়ে পার্শ্ববর্তী বড়জ্বালা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যায়। আবার অনেকে বাড়ির মায়ায় থেকে যান। পার্শ্ববর্তী মাঝিগাছা গ্রামের নারী পুরুষও এই পথে ভারতে চলে যাচ্ছিলেন। সুর্য যখন প্রায় মাথার উপর এমন সময় চারদিক থেকে পাকবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। ছোটাছুটি করে ২৬ জন এক ঘরে ঢুকে কাঠের দরজা বন্ধ করে দেয়। পাকবাহিনী ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। মন্তাজ আলী নামে একজন ঘরের ভিতর একটি কাথের আলমারিতে ঠুকে পড়েন। পাক বাহিনী আলমারি না খুলে বাইরে থেকে গুলি করে। আলমারির কাঠের দরজা ছেদ করা সেই গুলিতে মন্তাজ আলী মারা যান। ব্রাশ ফায়ারে নিহত এক মায়ের স্তনে মুখ দেওয়া অবস্থায় পড়ে ছিল গুলিতে নিহত এক শিশু। সেও হয়। গুলিতে হিরণ নামে এক যুবকের হাতের মাংশ ছিন্ন হয়ে যায়। সে আজও বেঁচে আছে। সেদিন এখানে ২৬ জন শহীদ হন। এছাড়াও বাড়ির বিভিন্ন স্থানে আরো দশজনকে গুলি করে হত্যা করে ইয়াহিয়ার নরপশুরা। চার ঘন্টা ধরে চলে এই নরকীয় হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় শহীদ শামসুল হুদা খন্দকারের স্ত্রী আফিয়া খাতুন আজও বেঁচে আছেন। ১১ সেপ্টেম্বর হায়েনার দলের নারকীয় তাণ্ডবে যারা শহীদ হয়েছেন তাড়া হচ্ছেন শরাফত আলী ও তার মেয়ে হাফেজা খাতুন, শামসুল হুদা খন্দকার, মো. কেরামত আলী, আব্দুর হালিম, মো. চক্ষু মিয়া, মন্তাজ আলী, আব্দুল লতিফ, মোহাম্মদ আলী, ফরসান বিবি, আব্দুর রাজ্জাক, রোকেয়া খাতুন, জোহরা বেগম, সালেহা বেগম, জসিম উদ্দিন, সেলিম মিয়া, রজ্জব আলী, রমিজ উদ্দিন, রহিম আলী, মেহেরুন্নেসা। (সূত্রঃ আবুল কাশেম হৃদয় – ‘গ্রামের নাম ধনাঞ্জয় ।। স্মৃতি ১৯৭১’, ‘নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে আছে ৩৫ জনের গণকবর’, দৈনিক রূপসী বাংলা কুমিল্লা, ৭ নভেম্বর ১৯৯৭)