You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.10 | মুক্তিবাহিনীর দুর্বার অভিযান অব্যাহত - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিবাহিনীর দুর্বার অভিযান অব্যাহত

(নিজস্ব সংবাদদাতা) পালংয়ে শত্রুঘাটি বিধ্বস্ত গত মাসে ফরিদপুরে একটি দুঃসাহসিক অভিযানে মুক্তি যােদ্ধারা উল্লেখযােগ্য সাফল্যলাভ করিয়াছে। মাদারিপুরের পালং থানায় পাকিস্তানী মিলিটারি পুলিস ও রাজাকারদের একটি শত্রু ঘাটি মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। ঐ ঘাটিতে ৭০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিস ও কিছু সংখ্যক রাজাকার ছিল। মধ্য রাত্রিতে মুক্তিযােদ্ধারা তিন দিক হইতে থানাটি আক্রমণ করে এবং আট ঘণ্টা তুমুল লড়াইয়ের পর শত্রুরা প্রায় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয় । ৬৮ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও রাজাকার খতম হয়। মুক্তিযােদ্ধারা থানাটি ভাঙিয়া পুনরায় ঘাটি স্থাপনের অযােগ্য করিয়া ফেলে। মুক্তিযােদ্ধারা এখানে ৫টি চীনা অটোমেটিক সহ ৬০টি ও প্রচুর গােলাবারুদ উদ্ধার করে।  এই বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে দুই জন তরুণ মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হইয়াছেন। আর একটি খবরে প্রকাশ, গােপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার কাছে দুইটি পাট বােঝাই ফ্লাট মুক্তিবাহিনী দখল করিয়াছে। ইহার প্রতিশােধ গ্রহণের জন্য বর্বর হানাদার বাহিনী ৯টি লঞ্চের এক বহর লইয়া কোটালিপাড়া বিলে যায় এবং ডহরপাড়া, মদনপাড়, পশ্চিমপাড় প্রভৃতি গ্রামে আগুন লাগায়। কলাবাড়ি গ্রামে জল্লাদরা ২২ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী সম্প্রতি মানিকদহ গ্রামের দালাল আসাদ বিশ্বাসকে খতম করিয়াছে। মানিকগঞ্জে বিরাট সাফল্য গত ২৩শে সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানায় এক অভিযান চালাইয়া মুক্তিযােদ্ধারা ৭৫ জন পুলিশ ও রাজাকারকে বন্দী এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দখল করিয়াছে। কিছুদিন যাবৎই এই থানার ঘাটি হইতে পুলিশ ও রাজাকাররা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির উপর নির্যাতন চালাইয়া আসিতেছিল। | ঘটনার দিন মধ্য রাত্রিতে দুই দিক হইতে থানাটির উপর আক্রমণ করিলে শত্রুপক্ষ কিছুক্ষণ গােলাগুলি ছােড়ে। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যে পুলিশদের অনেকে চম্পট দিয়া আত্মরক্ষা করে আর যুদ্ধক্ষেত্রে নাবালক রাজাকাররা প্রায় সকলেই ধরা পড়ে। 

এখানে মুক্তিবাহিনী প্রায় শ’খানেক রাইফেল, ৫টি অটোমেটিক চীনা রাইফেল ও ১০ হাজার রাউণ্ড গুলি দখল করিয়াছে।  গত ২১শে সেপ্টেম্বর হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যরা হরিরামপুর থানার বল্লা গ্রামে লুটপাট করিতে আসিলে মুক্তিবাহিনীর হাতে দুই জন খতম হয়। কিন্তু হানাদার বর্বরেরা কাপুরুষের মত ইহার প্রতিশােধ নেয় নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের উপর। বল্লা, মাচাইন ও পার্শ্ববর্তী গ্রামে ইহারা ১৬ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী এই এলাকার কুখ্যাত দালাল মুসলিম লীগের আহমদ খাঁকে খতম করিয়াছে। নারায়ণগঞ্জ বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে, মুক্তিযােদ্ধারা ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সড়কের নলখালি ব্রীজ মাইন দিয়া উড়াইয়া দিয়াছে। রূপগঞ্জ থানার দড়িপাড়ায় পাক দখলদার বাহিনীর ক্যাম্পে গ্রেনেড চার্জ করিয়া মুক্তি বাহিনী ৪ জন শত্রুসেনা খতম করিয়াছে। উভয় স্থানেই হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের উপর হামলা করিযা মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে। চট্টগ্রাম গত ১২ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলার আনােয়ারা থানার উসখাইল গ্রামে মুক্তিবাহিনী এক অভিনব কৌশল করিয়া মুসলিম লীগের একজন কুখ্যাত দালালকে প্রকাশ্য দিবালােকে হত্যা করে। আব্দুল হাকিম নামক উক্ত দালালটি ইউনিয়ন কাউন্সিলের এবং তথাকথিত শান্তি কমিটির একজন সদস্য ছিল। গত ১২ই সেপ্টেম্বর উক্ত দালালটির মেয়ের বিবাহের তারিখ স্থির করার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। মুক্তিবাহিনী বর পক্ষের ছদ্মবেশে মিষ্টির হাঁড়ি সহ তাহার বাড়িতে হাজির হয়। দালালটি বর পক্ষকে অভ্যর্থনা করিতে ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিলে মুক্তিসেনাগণ তাহাকে গুলি করিয়া হত্যা করে। 

গত ১৪ই সেপ্টেম্বর মুক্তি বাহিনী সকাল ৮টায় পটিয়া থানার অন্তর্গত কালার পােল পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করিয়া একজন পুলিস ও একজন রাজাকারকে হত্যা করে। গত ১০ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী পটিয়া থানার মালিয়া পাড়া গ্রামে ১১ জন মুসলিম লীগ দালালকে হত্যা করিতে সমর্থ হয়। কুমিল্লা। ১০ই সেপ্টেম্বর হাজীগঞ্জে একটি গেরিলা দলের সঙ্গে পাক বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। গেরিলা বাহিনী পাকহানাদারদের হঠাৎ দুই দিক হইতে আক্রমণ করিয়া বিপর্যস্ত করিয়া দেয় ও আনুমানিক ৩০ জন পাকসৈন্যকে হত্যা করে গেরিলা বাহিনীর আক্রমণের সম্মুখে পাক-দস্যু বাহিনী টিকিতে না পারিয়া নিহতদের ফেলিয়া পালাইয়া যায়। গেরিলারা হানাদারদের ফেলিয়া যাওয়া প্রচুর অস্ত্র-শস্ত্র এবং গোলাবারুদ দখল করে। ৭ই সেপ্টেম্বর নবিনগর থানার রাইতলা গ্রামের কাছে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৪ জন পাক-দস্যু নিহত হয়। দস্যুদের এই দলটি নৌকাযােগে রাইতলা দিয়া যাইতেছিল। এমন সময় মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা উহাদের আক্রমণ করিয়া নিহত করে। ঢাকা। ১১ই সেপ্টেম্বরের রায়পুরা অঞ্চলে গেরিলা যােদ্ধারা জয়নগরে তিতাস গ্যাস লাইন উড়াইয়া দেয় এবং তিনটি পাওয়ার লাইন ধ্বংস করে।

মুক্তিযুদ্ধ ১: ১৪

১০ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯