মুক্তিবাহিনীর সমস্যা ও অভাব অভিযােগ
(নিজস্ব সংবাদদাতা) দাবানলের আত্মপ্রকাশের প্রথম সংখ্যা থেকেই আমরা বাংলাদেশের মুক্তি সেনাদের সমস্যা ও অভাব অভিযােগের চিত্র তুলে ধরছি। এটা সরকারী প্রচেষ্টাকে সমালােচনা কিম্বা নিন্দা করার জন্য নয়, বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার জন্যও নয় কেননা আমরা জানি বাংলাদেশ সরকার সব সময়ই আমাদের মুক্তি যােদ্ধাদের প্রতি নজর ও শ্রদ্ধ দৃষ্টি রাখছেন। তবুও দেশের মুক্তির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা স্থির করেছি এই কলমে মুক্তিসেনাদের অভাব অভিযােগের চিত্র তুলে ধরব। আমাদের মুক্তি সেনাদের। অভাব অভিযােগেও আত্মত্যাগের প্রতি দেশ বিদেশে মানুষ সহানুভূতিশীল হবেন বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসবেন এই আশায়। খবরে প্রকাশ বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর অনেক সৈনিক যারা জীবনের বিনিময়ে শক্র হননে অপারেশনে গিয়ে বুলেট বিদ্ধ হয়েছে তারা ভাল চিকিৎসা দূরে থাক ন্যূনতম আধুনিক ঔষধপত্রও পাচ্ছেন না। আহত সৈনিকরা হাসপাতালে প্রয়ােজনীয় জিনিষপত্রের অভাবে ভুগছেন। বাংলাদেশে মুক্ত এলাকায় এই হাসপাতালের আহত সৈনিকদের কেউ কেউ অভিযােগ করে বলেছেন যে তারা পকেট খরচের মতাে সামান্য অর্থও পাচ্ছেন না। সৈনিকদের জন্য বরাদ্দ মাসিক ভাতা অপর্যাপ্তই শুধু নয় অনেক সময়ই বিলম্বিত হচ্ছে। শােনা যাচ্ছে প্রাক্তন সৈনিক যারা যুদ্ধে আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন তারা তাদের জরুরী ভাতা পাচ্ছেন না। অনেক ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযােদ্ধাও একই অভিযােগ করেছেন।
আমাদের বক্তব্য যারা বাংলাদেশকে শক্র কবল থেকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনের ঝুকি নিয়ে শত্রুর মােকাবিলা করছেন মনে রাখতে হবে তারাই আমাদের ভরসার স্থল। এদের সুখ সুবিধার জন্য প্রয়ােজনবােধে আমাদের সুখ বিসর্জন দিতেই হবে। অনতিবিলম্বে এই অর্থনৈতিক সমস্যার মােকাবিলা করন্থে বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে আসবেন বলে আমাদের বিশ্বাস । আমরা জানি আমাদের অর্থের অভাব সবচেয়ে প্রকট কিন্তু এই প্রকট সমস্যার মধ্যেই খুজে একটি সহজ সমাধান বের করে নিতে হবে। কেননা মুক্তি যােদ্ধাদের কেউই তাদের প্রয়ােজনীয় অর্থ দাবী করছেন না। তাই অর্থাভাব মােচনের জন্যে প্রয়ােজন হলে অন্য কোন অপ্রয়ােজনীয় অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে পরিষদ সদস্য ও সরকারী কর্মচারীদের ভাতা ও বেতন কমিয়ে হলেও আমাদের প্রিয় মুক্তি সেনাদের আর্থিক সেবায় এই অর্থ বিনিয়োেগ করতেই হবে। এই সমস্যা সমাধানে সরকার যত দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন ততই মংগল। মুক্ত এলাকায় বিভিন্ন শিবিরে এখন শীত নেমে আসছে। এখন থেকেই শীত উপযােগী পােশাক পরিচ্ছদের বন্দোবস্ত না করলে পরে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। মুক্তি সেনাদের এই সৰ অভাব অভিযােগ ও অসুবিধার প্রতি সামরিক কর্তৃপক্ষ ও সরকার সময়ােচিত দৃষ্টি দিয়ে আমাদের মুক্তি বাহিনীর মনােবল অটুট রাখতে অবিলম্বে এগিয়ে আসবেন—এটাই আমাদের কাম্য।
দাবানল। ১: ২
২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯